Advertisement
E-Paper

গগনচুম্বী আশা বাড়িয়ে দেয় আশঙ্কাও

মোদীর কাছে কি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আছে? মোদী কি অরণ্যদেব না যাদুকর ম্যানড্রেক? লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালকথায় বলে, আশায় বাঁচে চাষা। আসলে কিন্তু আশায় মরে চাষা। প্রত্যাশা বড় ভয়ঙ্কর! আমজনতা হতাশা-ক্লিষ্ট। যদি তাঁরা ভাবতে শুরু করেন, এ বার রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে এ দেশে, তবে সে-ও এক অবৈজ্ঞানিক আশার ছলনা। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর আকাশবাণী ভবনে গিয়েছিলাম এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে গ্রামের প্রত্যন্ত মানুষেরা প্রশ্ন করছিলেন, আমি সাংবাদিক হিসাবে জবাব দিচ্ছিলাম। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ অথবা গুয়াহাটি— নানা প্রান্তের গ্রাম থেকে নানা ধরনের প্রশ্ন।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০০:১০

কথায় বলে, আশায় বাঁচে চাষা। আসলে কিন্তু আশায় মরে চাষা। প্রত্যাশা বড় ভয়ঙ্কর!

আমজনতা হতাশা-ক্লিষ্ট। যদি তাঁরা ভাবতে শুরু করেন, এ বার রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে এ দেশে, তবে সে-ও এক অবৈজ্ঞানিক আশার ছলনা। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর আকাশবাণী ভবনে গিয়েছিলাম এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে গ্রামের প্রত্যন্ত মানুষেরা প্রশ্ন করছিলেন, আমি সাংবাদিক হিসাবে জবাব দিচ্ছিলাম। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ অথবা গুয়াহাটি— নানা প্রান্তের গ্রাম থেকে নানা ধরনের প্রশ্ন। গুয়াহাটি থেকে এক অন্ধ মুসলমান যুবক প্রশ্ন করেছিলেন, মোদী সরকার দৃষ্টিহীনদের উন্নয়নের জন্য কী করবেন? দৃষ্টিহীনদের জন্য অনেক সামাজিক প্রকল্প আছে। কিন্তু আমরা সে সব প্রকল্পের কোনও সুযোগ-সুবিধে এ যাবৎ পাইনি। উত্তরপ্রদেশের এক মফস্সল শহর থেকে এক প্রতিবন্ধী যুবক চাকরি চাইছিলেন আমার কাছেই।

জনজোয়ার। ছবি: পিটিআই

আমি ওই অনুষ্ঠানে বার বার বলার চেষ্টা করছিলাম, গত দশ বছরে কংগ্রেস রাজত্বের উপর মানুষের হতাশা-রাগ-অসন্তোষ এসেছে। তাই সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, এ বার মোদী এসেছেন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রচারেও বিজেপি বলেছিল, মোদীবাবু আসছেন, এ বার সুদিন আসছে। কিন্তু মোদীর কাছে কি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আছে? মোদী অরণ্যদেব না কি যাদুকর ম্যানড্রেক? আসলে নরেন্দ্র মোদীর সদিচ্ছা থাকতে পারে, হতে পারে যে কোনও পরিবর্তনই গণতন্ত্রে একটা নির্ধারিত সময়ের পর ভাল। সিপিএমের ৩৪ বছরের দীর্ঘ শাসনের পরও আমি বার বার বলেছিলাম, পরিবর্তনের জন্যই পরিবর্তন ভাল। কারণ, তা হলে ভাবনাচিন্তায় গতি আসে। সুশাসনের পক্ষেও তা ভাল। আমাদের আনন্দবাজারের এক সহকর্মী বলেছিলেন, আমি তৃণমূলের পক্ষে নই, কিন্তু পরিবর্তনের পক্ষে।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন।—ফাইল চিত্র।

কলকাতার এক ট্যাক্সিচালক আমাকে বলেছিলেন, পুরনো বাড়িতে বহু দিন ঝুল ঝাড়া হয়নি। রংচটা, নোংরা, এক বার চুনকাম হলে কমসে কম ঝুল তো পরিষ্কার হবে। অতএব ‘১’ (এক) সবসময় শূন্যর চেয়ে বেশি। দুর্নীতি, নীতিপঙ্গুতা, মূল্যবৃদ্ধি এতটাই তীব্র অসন্তোষের জন্ম দেয়, যেখানে মানুষ মনমোহন-সনিয়ার হাত থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল। তাই রাজনৈতিক শূন্যতায় সেই পরিসরটা নিয়েছেন মোদী।

কিন্তু সচেষ্ট হলেও মোদী কি পারবেন এই ব্যবস্থাকে বদলে দিতে?

রাজীব গাঁধী ৮৪ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন বিপুল ভোট নিয়ে। সাংবাদিক জনার্দন ঠাকুর এক বার তাঁকে বলেছিলেন, ‘অ্যান্টি পলিটিসিয়ান’। সঞ্জয় গাঁধীর মৃত্যুর পর মায়ের নির্দেশে রাজনীতিতে আসেন রাজীব। মায়ের মৃত্যুর পরে তিনিও বিপুল ভোটে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে

রাজীব গাঁধী

এসেছিলেন। সে দিনও দেশের যুব সমাজ ভেবেছিল এক নতুন ভারত আসছে। ১৯৮০-র জুনে সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়। কিন্তু ৮৪ সালে ইন্দিরার মৃত্যুর পরে যখন ক্ষমতায় এলেন তখন ১৯৮৫ সালকেও বলা হত আশার বছর। রাজনীতি তাঁর নিজস্ব জায়গায় ছিল না। তবু তিনি চেষ্টা করেছিলেন এক নতুন ভারত নির্মাণের জন্য। যেমন রোনাল্ড রেগনের সময় আমেরিকায় এক ধরনের হলিউডি ‘ফিল গুড’ তৈরি হয়েছিল ঠিক সে রকমই রাজীবের সময় এক ধরনের আমেরিকান ফিল গুড ভারতে এসেছিল, কিন্তু ৮৪ সালের মিস্টার ক্লিন ’৮৯ সালে হয়ে গেলেন বফর্স গাঁধী। ৮৯ সালের আগে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, you came to power with a mandate to clean the system. you were even called Mr. Clean. Now one of the charges against you is corruption. How do you react to that? জবাবে রাজীব গাঁধী বলেছিলেন, I found it is harder to clean up corruption than it is when you are on the other side. Taking about it rather than having to do it. মোদীর ক্ষেত্রেও কাজটা সহজ নয়।

আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে এক যুবক (সম্ভবত বামপন্থী) আমাকে প্রশ্ন করেন, ব্যক্তি কি ঘুণ ধরা ব্যবস্থা বদলাতে পারে? বললাম, এটা ঠিক লেনিন না থাকলে কি বলশেভিক বিপ্লব হত না? হয়ত হত, হয়ত হত না। কিন্তু সমাজ সংস্কারে ব্যক্তির ভূমিকাও থাকে। তাই ভাল রাজা আর খারাপ রাজার ভেদ থাকে। মোদী প্রজাবৎসল রাজা হতে চাইবেন, না কি এই ব্যবস্থা তাঁকেই গিলে খাবে?

সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। শুধু এটুকু বলা যায়, আশা গগনচুম্বী হলে আহত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে!

jayanta ghosal narendra modi modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy