Advertisement
E-Paper

নিজস্বী

নিজের দিকে ফিরিয়া চাহিবার সুঅভ্যাসটি থাকিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপকার হইত। থাকিলে, অম্বিকেশ মহাপাত্র বা বাপি পালের সহিত পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন যাহা করিয়াছে, সুপ্রিম কোর্টের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারা সংক্রান্ত রায়ের আলোকে তিনি তাহাতে লজ্জিত হইতেন। বিক্ষুব্ধ স্বর চাপা দিতে তিনি গণতন্ত্রের সব সীমা লঙ্ঘন করিয়াছেন, সেই লজ্জা।

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০০:০১

নিজের দিকে ফিরিয়া চাহিবার সুঅভ্যাসটি থাকিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপকার হইত। থাকিলে, অম্বিকেশ মহাপাত্র বা বাপি পালের সহিত পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন যাহা করিয়াছে, সুপ্রিম কোর্টের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারা সংক্রান্ত রায়ের আলোকে তিনি তাহাতে লজ্জিত হইতেন। বিক্ষুব্ধ স্বর চাপা দিতে তিনি গণতন্ত্রের সব সীমা লঙ্ঘন করিয়াছেন, সেই লজ্জা। তাঁহার কর্তব্য ছিল, অম্বিকেশ বা বাপির বিরুদ্ধে অন্য যে ধারাগুলিতে মামলা চলিতেছে, সেগুলি প্রত্যাহার করিয়া লওয়া। তাহাতে পুরাতন লজ্জাটি ঢাকিত না বটে, কিন্তু নূতনতর লজ্জার জন্মও হইত না। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এই স্বাভাবিক পথের বিপরীতে হাঁটিবার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। রাজ্য প্রশাসন জানাইয়াছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৬৬-এ ধারাটি বাদ পড়িলেও অন্য ধারায় মামলা যেমন চলিতেছিল, চলিবে। আইনমতে তাহাতে বাধা নাই। কোনও ঘটনায় একাধিক অপরাধ থাকিতেই পারে, এবং একটি অভিযোগ কোনও কারণে খারিজ হইয়া গেলেও অন্যগুলির বিচার তাহাতে আটকায় না। মুখ্যমন্ত্রী এই ফাঁক গলিয়াই তাঁহার প্রতিশোধের কুনাট্য চালাইতে মনস্থ করিয়াছেন।

মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রায়টিকে প্রণিধানযোগ্য বোধ করিয়াছেন কি না, অনুমান করিবার প্রয়োজন নাই। রায়টির মাহাত্ম্য এবং ব্যাপ্তি তাঁহার অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল না। শীর্ষ আদালতের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারাটি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক— ধারাটিকে বজায় রাখিলে তাহা বাক্-স্বাধীনতার সমূহ সর্বনাশ করিবে। কথাটিকে শুধুমাত্র এই ধারার প্রেক্ষিতে দেখিলে তাহার খণ্ডবিচার হইবে। আদালতের মন্তব্যটিকে বাক্-স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের অভিজ্ঞান রূপে দেখাই বিধেয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অম্বিকেশ মহাপাত্র বা বাপি পালের বিরুদ্ধে যে মামলা রজু করিয়াছিল, তাহার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাঁহাদের বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করা। তাঁহারা, বা অন্য কেহ, রাজশক্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলিবার সাহস যেন আর না পান, তাহা নিশ্চিত করা। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারা সেই উদ্দেশ্যসাধনের একটি হাতিয়ারমাত্র ছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা বা ৫০৬ ধারার ব্যবহারও নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণে হয় নাই। পুলিশ তাঁহাদের কোন ধারায় জড়াইয়াছে, তাহা বিবেচ্যই নহে। কেন জড়াইয়াছে, তাহাই মূল প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই উদ্দেশ্যর নিন্দা প্রায় দ্ব্যর্থহীন। শীর্ষ আদালতের রায়ের মূলমর্মকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দিলে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভুলের— অবশ্য, ইহা ভুল নহে, অপরাধ— জন্য লজ্জিত হইতেন। অপরাধ স্বীকার করিয়া তাহার প্রায়শ্চিত্ত করিতেন।

কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অহং প্রবল। আইন কেন, আইনের সহিত নাগরিকের সম্পর্ক কী, মুখ্যমন্ত্রীর অহংই এই প্রশ্নগুলির উত্তর স্থির করিয়া দিয়াছে। তিনি বুঝিয়া লইয়াছেন, আইন অস্ত্রমাত্র। তাঁহার জেদ, তাঁহার অহং, তাঁহার স্বেচ্ছাচারের অস্ত্র। তিনি জানেন, তাঁহার বিরুদ্ধে মুখ খুলিলে শাস্তি পাইতে হইবে, এবং সেই শাস্তির আয়ুধ হিসাবে আইনও ব্যবহৃত হইতেই পারে। অতএব, অম্বিকেশ মহাপাত্রদের সাজানো মামলায় জড়াইয়া যে তিনি বিন্দুমাত্র অন্যায় করিয়াছেন, তিনি বুঝিতে পারেন নাই। তাঁহার অহং তাঁহাকে বুঝিতে দেয় নাই। ৬৬-এ ধারাটির বিলোপের পর অন্যান্য মামলাগুলিও কেন অবিলম্বে গুটাইয়া লওয়া উচিত, মুখ্যমন্ত্রীর মানসজগতে সেই প্রশ্নের উত্তর নাই। তিনি প্রতিশোধের খেলা খেলিতেছেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁহার একটি অস্ত্র কাড়িয়া লইয়াছে দেখিয়া তিনি অন্যগুলিকে আরও শক্তিতে আঁকড়াইয়া ধরিতে চাহিতেছেন। নিজের মনের অভ্যন্তরের এই ছবিটি দেখিতে হইলে তাঁহাকে নিজেকেই দেখিতে হইবে। নিজের ছবি নিজে না তুলিয়া উপায় নাই।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy