Advertisement
০২ মে ২০২৪
প্রবন্ধ ১...

নেতার জাতের চেয়ে চেতনার মূল্য বেশি

আজ যদি কেউ অভিযোগ করেন, সমাজে গণতন্ত্র প্রসারের জন্য যা করা উচিত ও সম্ভবপর ছিল, বামফ্রন্ট তার অনেক কিছুই করেনি, সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সন্তোষ রাণাসহস্রাধিক বছর ধরে চালু থাকা জাতিবর্ণব্যবস্থা ভারতীয় সমাজকে একটা পিরামিডের রূপ দিয়েছে। এর শীর্ষে খুবই ছোট কিন্তু সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। নীচে নানা ‘অস্পৃশ্য’ নিম্নবর্ণ ও আদিবাসী গোষ্ঠী। মাঝখানে নানা মধ্যজাতি, বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ইত্যাদি। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’র সময় থেকেই সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কী উৎপাদন করা হবে ও সেটা কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা ঠিক করার অধিকার ছিল উচ্চবর্ণদের হাতেই। শিক্ষার উপরেও নিম্নবর্ণগুলির কোনও অধিকারই ছিল না।

অন্য স্বর? আবদুর রেজ্জাক মোল্লা। ২৩ মার্চ, ২০১৩। ছবি: পিন্টু মণ্ডল।

অন্য স্বর? আবদুর রেজ্জাক মোল্লা। ২৩ মার্চ, ২০১৩। ছবি: পিন্টু মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৫
Share: Save:

সহস্রাধিক বছর ধরে চালু থাকা জাতিবর্ণব্যবস্থা ভারতীয় সমাজকে একটা পিরামিডের রূপ দিয়েছে। এর শীর্ষে খুবই ছোট কিন্তু সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। নীচে নানা ‘অস্পৃশ্য’ নিম্নবর্ণ ও আদিবাসী গোষ্ঠী। মাঝখানে নানা মধ্যজাতি, বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ইত্যাদি। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’র সময় থেকেই সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কী উৎপাদন করা হবে ও সেটা কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা ঠিক করার অধিকার ছিল উচ্চবর্ণদের হাতেই। শিক্ষার উপরেও নিম্নবর্ণগুলির কোনও অধিকারই ছিল না। রাষ্ট্রের পরিচালকমণ্ডলীতেও তাদের প্রবেশ করার অধিকার ছিল না। কোনও ব্যক্তি সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার কোন অবস্থানে থাকবে সেটা নির্ধারিত হত তার জন্মগত স্থানাঙ্ক অর্থাৎ জাতি দিয়ে। ফলত ব্যক্তির শ্রেণি অবস্থান এবং জাতি অবস্থান ছিল সমার্থক।

এমন নয় যে, জাতিগুলির অবস্থান অনড় ছিল; জাতিসোপানে উপরে ওঠার জন্য তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। সেই প্রক্রিয়ায় কোনও কোনও জাতি উপরের স্তরে উঠে গেছে, আবার কোনওটা নীচেও নেমেছে, কখনও আবার এক জাতি ভেঙে একাধিক জাতির জন্ম হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তির কোনও সচলতা ছিল না; কোনও একটি জাতির উপরে ওঠা বা নীচে নামার অর্থ, সেই গোষ্ঠীর প্রত্যেকের অবস্থান বদলে যাওয়া, একক ভাবে কারও স্থানাঙ্ক পরিবর্তন নয়।

পরবর্তী কালে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে নিচু জাতিগুলির একটা অংশ ধর্মান্তরিত হয়েছে। যদিও এই ধর্মগুলিতে সব মানুষকে সমান চোখে দেখার ব্যাপার আছে, কিন্তু ভারতে ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও তাঁরা সমানাধিকার পেলেন না: ধর্মীয় পরিচয় অপেক্ষা সামাজিক পরিচিতি অধিকতর শক্তিশালী প্রমাণিত হল।

ভারতে আধুনিক শিল্পের প্রসারের পর পুরনো জাতিভিত্তিক শ্রমবিভাজন ভাঙতে শুরু করে, কিন্তু মানসিক শ্রম আর কায়িক শ্রমের মধ্যে বিভাজনটা থেকেই গেল এবং অনেকটাই পূর্বতন বিভাজনকে অনুসরণ করল। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে জাতিভিত্তিক বৈষম্য ও বিশেষাধিকারের চিরাচরিত ব্যবস্থাকে ‘আইনত’ বাতিল করা হল, এবং যে জনগোষ্ঠীগুলি পরম্পরাক্রমে বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে সেই সব গোষ্ঠীর লোকেরা যাতে সমানাধিকার ভোগ করতে পারেন তেমন কিছু ব্যবস্থা (যেমন সংরক্ষণ) সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হল। কিন্তু ভারতীয় রাষ্ট্রের সদিচ্ছার অভাবে সেগুলো যথাযথ ভাবে কার্যকর হল না। যেমন, সংরক্ষণের ব্যবস্থা হল বটে, কিন্তু বঞ্চিত গোষ্ঠীগুলির পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকলেই যাতে সে ব্যবস্থার সমান সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা গড়ে তোলা হল না: আজও এই গোষ্ঠীগুলির অধিকাংশ মানুষই নিরক্ষরতার অভিশাপের বোঝা বয়ে চলেছেন। ১৯৫৩ সালে কাকা কালেলকর কমিশনের সুপারিশ ছিল, আমূল ভূমিসংস্কার। পরবর্তী কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন এক গুচ্ছ সুপারিশ করে। রাষ্ট্র সে পথে এগোয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমিসংস্কার এবং অন্যান্য সক্ষমতা প্রসারী ব্যবস্থাগুলো নিলে গণতন্ত্রের প্রসার ঘটত। যাঁরা সংরক্ষণ নিয়ে আক্ষেপ করেন এবং যাঁরা সংরক্ষণকে একমাত্র বিকল্প বলে তুলে ধরেন, উভয় পক্ষেরই বোঝা দরকার, গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে এর ভূমিকা আছে, কিন্তু সেই ভূমিকা বাস্তবে কার্যকর করে তুলতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলিতেও সমান জোর দিতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি

১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর বামফ্রন্ট ভূমিসংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ করে, যদিও সেই প্রক্রিয়াকে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অন্য দিকে, যে সব ব্যবস্থা উচ্চবর্ণ আধিপত্য খর্ব করে সামাজিক ন্যায্যতা ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারত, সেগুলো করা হল না। শিক্ষার প্রসার হল না রাজ্যের দলিত, আদিবাসী ও মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষায় অনগ্রসরতা আজ সকলেরই জানা। অন্য দিকে, মণ্ডল কমিশন ১৯৭৮ সালে রাজ্য সরকারের মতামত চাইলে তারা জানিয়ে দেয় যে, ‘এ রাজ্যে কোনও পশ্চাৎপদ শ্রেণি নেই!’ ২০১১ পর্যন্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গেই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য উচ্চশিক্ষায় কোনও সংরক্ষণ ছিল না। (তাতে শিক্ষার মান খুব উঁচু হয়েছে, এ কথা বলা শক্ত!)

মুসলমানদের অবস্থা করুণ: রাজ্য সরকারের চাকরিতে তাঁদের অংশ কমতে কমতে তলানিতে ঠেকল। এখন সি পি আই (এম)-এর ওয়েবসাইটে দাবি করা হচ্ছে, ‘২০১০ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক অর্থনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’, কেননা ‘ঐদিন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুসলমান ওবিসিদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করেন।’ স্বর্ণাক্ষরে লেখা দিনটি ১৯৭৮ সালেই আসতে পারত: কেরলের বামপন্থীরা পঞ্চাশের দশকেই মুসলমানদের ওবিসি হিসাবে গণ্য করে তাঁদের জন্য ১২ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন।

রেজ্জাক মোল্লার ক্ষোভ

আজ যদি কেউ অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের সমাজে গণতন্ত্র প্রসারের জন্য যা করা উচিত ও সম্ভবপর ছিল, বামফ্রন্ট তার অনেক কিছুই করেনি, সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সি পি আই (এম) থেকে সদ্য বহিষ্কৃত আবদুর রেজ্জাক মোল্লা এমনই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তিনি যা করতে বলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এক জন দলিত এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এক জন মুসলমানকে দেখতে চেয়েছেন। এমন অবস্থা অবশ্যই কাম্য যেখানে ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোতে সব জাত, গোষ্ঠী বা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কিন্তু দলিত আদিবাসী মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেই ক্ষমতার সমীকরণ বদলে যাবে, তা নয়। বিভিন্ন রাজ্যে অবদমিত গোষ্ঠীর লোকেরা ক্ষমতার শীর্ষ ছুঁয়েছেন, তাতে গোষ্ঠীগুলোর লোকসাধারণের ক্ষমতায়ন খুব প্রসারিত হয়েছে কি? ঝাড়খণ্ডে যে ক’জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, সকলেই আদিবাসী। কিন্তু আদিবাসীদের জমি দখল ও সরকারি সম্পদ লুণ্ঠনের কাহিনি অন্য রাজ্য থেকে আলাদা নয়।

আমাদের সামনেই আছে নন্দীগ্রামের অভিজ্ঞতা। ওই এলাকার কৃষকদের শতকরা ৯৯ ভাগই দলিত, অন্যান্য পশ্চাৎপদ জাতি বা মুসলমান সম্প্রদায়ের। কিন্তু ২০০৬-০৭ সালে তাঁদের জমি নেওয়ার জন্য যে রাষ্ট্রীয় অভিযান হয় তাতে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি নিজেই এক জন নিম্নবর্ণে জন্ম নেওয়া দলনেতা।

প্রয়োজন বিকল্প নীতির

যেটা দরকার, সেটা হল একটা বিকল্প নীতি, যা বামফ্রন্ট আমলে অর্জিত ভূমিসংস্কারের মতো আংশিক সাফল্যগুলিকে রক্ষা করবে, নিম্নবর্ণ, আদিবাসী এবং ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করবে, বিশ্বায়িত পুঁজির সামগ্রিক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দিশা দেখাবে। যে কোনও ব্যক্তি, যিনি গণতান্ত্রিক চেতনায় নিজের অবস্থানকে নিজের শ্রেণি উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চান, তাঁরই এ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ও নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার হক আছে। তেমনই, নিম্নবর্ণে জন্মানো বলেই ধান্দাবাজদেরও নেতা বলে মানতে হবে, এমন ধারণা পরিত্যাজ্য।

রেজ্জাক সাহেব এক প্রবন্ধে (‘পশ্চিমে সূর্যোদয়’) দাবি করেছেন যে, ভারতে কোনও শিল্পবিপ্লব হয়নি, তাই শ্রেণিই তৈরি হয়নি। এবং তাই ‘ভারতের মতো পিছিয়ে পড়া দেশে শ্রেণি সংগ্রাম অর্থাৎ ক্লাস স্ট্রাগ্ল-এর কাস্ট স্ট্রাগ্ল করা জরুরি’। কথাটা আজকের ভারতের বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। গ্রামাঞ্চলে উৎপন্ন সামগ্রী ও শ্রমশক্তি, দুইই বড় আকারে পণ্যরূপ গ্রহণ করেছে। অন্য দিকে, অবদমিত গোষ্ঠীগুলির মধ্যেও নানা মাত্রায় শ্রেণি বিভাজন ঘটে চলেছে। কয়েকটি দলিত জাতির মধ্যে থেকে বড়সড় মধ্যশ্রেণি তৈরি হয়েছে নানান সংগ্রামের ফসল হিসাবে; আবার অনেক গোষ্ঠী আদিবাসীদের চেয়েও পশ্চাৎপদ অবস্থানে। অতএব সুনির্দিষ্ট নীতি ও কর্মসূচি নিতে হবে, যাতে সবচেয়ে বঞ্চিতদের প্রতি সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া যায়, তাঁদের প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে সক্ষম করে তোলা যায়। অবদমিত জাতি বা গোষ্ঠীগুলো থেকে উঠে আসা নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে ধান্দাবাজির একটা বড় কারণ, এঁদের কোনও প্রতিযোগী নেই। সক্ষমতার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার অবস্থা সৃষ্টি ছাড়া গণতন্ত্রের বিস্তার হতে পারে না। দলিত, ওবিসি, আদিবাসী, মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য (৮৫ শতাংশ) দিয়ে জোট গড়ে তুলে উচ্চবর্ণ আধিপত্যকে অপসৃত করা যাবে, এ ধারণাও বোধহয় ভুল। পাটিগণিতে অভ্যন্তরীণ ভিন্নতার হিসাব ধরা থাকে না।

‘আগে জাতি সংগ্রাম, পরে শ্রেণি সংগ্রাম’, খুব পরিষ্কার চিন্তা নয়। উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের শ্রমিকদের বিরাট অংশ ঝাড়খণ্ড থেকে আসা আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়। ন্যূনতম মজুরির জন্য তাঁরা সংগ্রাম করছেন, সাদ্রি ভাষার মর্যাদার দাবিতেও লড়াই করছেন। দুটি সংগ্রাম পরস্পরের পরিপূরক, ভাষার বা সংস্কৃতির দাবিতে লড়াই করতে গিয়ে মজুরির সংগ্রাম পরিত্যাগ করা মানে তো নিজের ক্ষতি করা। আবার, বামপন্থীদের অনেকের মধ্যে এ-রকম একটা বিশ্বাস আছে যে, শ্রেণি সংগ্রামই সব সমস্যার সমাধান করে দেবে, এবং জাতি বা ‘আইডেন্টিটি’ অর্থাৎ পরিচিতির লড়াই শ্রেণি সংঘর্ষকে দুর্বল করবে। এ সত্যটিও কিন্তু ‘আগে কাস্ট স্ট্রাগ্ল...’ তত্ত্বের মতোই ভ্রান্ত। দুটি দৃষ্টিভঙ্গিই শ্রেণি এবং জাতি বা পরিচিতির আন্তঃসম্পর্ক ও আন্তঃপ্রবেশ্যতাকে অস্বীকার করে। সম্পর্কটি জটিল, কিন্তু এটা না বুঝে, এর গ্রন্থিগুলোকে না খুলে সহজ সমাধানের পথ খোঁজার চিন্তা সরল হতে পারে, কিন্তু নিষ্ফল।

দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের সক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সামগ্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলির সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে। আজ রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিসরটি সঙ্কুচিত। নারীর নিরাপত্তাহীনতা চরমে। বিভিন্ন নীতি রূপায়ণে যথেষ্ট স্বচ্ছতার অভাব। যথা, রাজ্যে যে ১৭০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হল, তার কত শতাংশ সংখ্যালঘু, এ প্রশ্ন যেমন তুলতে হবে, তেমনই সামগ্রিক নিয়োগ পদ্ধতির স্পষ্টতার প্রশ্নও তুলতে হবে। এখনও এ রাজ্যে মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে আদিবাসীদের কোটাগুলো নামমাত্র পূরণ হচ্ছে, দাবি তোলা দরকার যাতে কোটাগুলো ঠিক ভাবে পূরণ করা হয়। আবার সামগ্রিক ভাবে সক্ষমতার অন্যান্য দাবিগুলো কর্মনিয়োজন, প্রাথমিক শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য আদিবাসীদের জন্যও অতি আবশ্যিক, সেগুলোকেও সামনে আনতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্কোচনের অর্থ, এই সব মৌলিক দাবির উত্থাপন ও রূপায়ণে বড় সমস্যা তৈরি হওয়া। সুতরাং এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নটি সর্বাধিক গুরুত্ব দাবি করছে। অবদমিত গোষ্ঠীগুলির সক্ষমতার প্রশ্নটিকে এই বৃহত্তর পরিসরের সঙ্গে যোগ করে দেখতে হবে।

এখানে নেতার জাতবিচারের চেয়ে, তাঁর গণতান্ত্রিক চেতনা, মূল্যবোধ ও তার জন্য আত্মত্যাগটাকে প্রধান মাপকাঠি হিসাবে দেখতে হবে। অবদমিতদের নিজস্ব আন্দোলন এবং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে তার সম্পর্ক এই দ্বিবিধ উপায়েই উচ্চবর্ণ আধিপত্যটিকেও অপসারিত করা যেতে পারে, ন্যায্যতার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE