Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

পুরুষকার

ভাগ্য সাহসী ব্যক্তির অনুকূল হইতে পারে, কিন্তু ভাগ্যের আনুকূল্য থাকিলেই নিজেকে সাহসী ভাবিয়া পরিতৃপ্ত বোধ করিলে বিপদে পড়িবার আশঙ্কা প্রবল। নরেন্দ্র মোদীর ভাগ্য তাঁহার প্রতি বিশেষ আনুকূল্য দেখাইয়াছে। ইউপিএ জমানার শেষ বছরেই অর্থনীতির চাকা ঘুরিতে শুরু করিয়াছিল। মনমোহন সিংহ সেই উন্নতির সুবিধা আদায়ে অক্ষম ছিলেন, বিজেপি তাহার সুফসল তুলিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০০:১৬
Share: Save:

ভাগ্য সাহসী ব্যক্তির অনুকূল হইতে পারে, কিন্তু ভাগ্যের আনুকূল্য থাকিলেই নিজেকে সাহসী ভাবিয়া পরিতৃপ্ত বোধ করিলে বিপদে পড়িবার আশঙ্কা প্রবল। নরেন্দ্র মোদীর ভাগ্য তাঁহার প্রতি বিশেষ আনুকূল্য দেখাইয়াছে। ইউপিএ জমানার শেষ বছরেই অর্থনীতির চাকা ঘুরিতে শুরু করিয়াছিল। মনমোহন সিংহ সেই উন্নতির সুবিধা আদায়ে অক্ষম ছিলেন, বিজেপি তাহার সুফসল তুলিয়াছে। কিন্তু তাহার পরে আসিয়াছে তেলের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যহ্রাস এবং তাহার কল্যাণে টাকার দাম বাড়িবার সুবিধা। এই সৌভাগ্যের সুপবন এখনও মোদীর পালে। এখনও তাঁহার প্রতি চাহিয়া দেশ ও দুনিয়া আশান্বিত। কিন্তু নয় মাসে সেই আশা এবং ভরসার তেজ বাড়িয়াছে, এমন কথা বলিবার উপায় নাই। বরং গুঞ্জনের মাত্রা বাড়িতেছে: গর্জন তো ঢের শুনিলাম, বর্ষণ কোথায়? বিশেষত অরুণ জেটলির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটের নিষ্প্রভ গতানুগতিকতা দেখিয়া আশাবাদীরাও স্তিমিত। ছন্দপতনের প্রধান কারণ: সাহসের অভাব। তিন দশক পরে প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার গড়িয়াও বলিষ্ঠ সংস্কারের সাহস প্রধানমন্ত্রী দেখাইতে পারেন নাই। এবং— প্রবচন হইতে সাবধান— ভাগ্যের চাকা যে বিপরীতে ঘুরিতে পারে, তাহার দুর্লক্ষণও দেখা দিয়াছে।

মুম্বইয়ে আসিয়া সেই দুর্লক্ষণের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া গিয়াছেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের কর্ণধার ক্রিস্টিন লাগার্দ। তাঁহার বক্তব্য, মার্কিন অর্থনীতিতে জোয়ারের সম্ভাবনা বর্ধমান। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে সে দেশে সুদের হার বাড়িতে পারে। মার্কিন অর্থ-বাজারে সুদের হার অত্যন্ত কম, প্রায় এক দশক তাহা বাড়ে নাই। ইউরোপ মন্দাক্রান্ত। তাহার ফলে চড়া সুদের টানে ভারতের মতো দেশে বিদেশি লগ্নি আসিয়াছে। দুই বছর আগে মার্কিন ফেডারাল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াইবার সংকেত দিবার সঙ্গে সঙ্গে ভারত হইতে বিদেশি পুঁজির নিষ্ক্রমণ শুরু হইয়াছিল, তাহাতে টাকার দাম বিপুল গতিতে পড়িয়া যায় এবং বড় রকমের বিপদের আশঙ্কা দেখা দেয়। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি রহিয়াছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই বিদেশি ঋণের অনুপাত অনেকখানি, সুতরাং ডলারের দাম বাড়িলে ঋণের বোঝা সহসা বাড়িবে। আইএমএফ প্রধান এই অনিশ্চয়তার কথাই বলিয়াছেন।

তাহার অর্থ এই নয় যে, ভারত অপ্রস্তুত। বস্তুত, ক্রিস্টিন লাগার্দ ভারতের ঋণ ও মুদ্রা নীতি পরিচালনার প্রশংসায় অকুণ্ঠ। এই প্রশংসা অনেকখানি প্রাপ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দক্ষ গভর্নর রঘুরাম রাজনের। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যতটা পারে, তিনি করিয়াছেন, সম্ভবত করিবেনও। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে যে আর্থিক নীতির পরিমণ্ডলে কাজ করিতে হয়, তাহা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানেই সংস্কারের গুরুত্ব। এক দিকে রাজকোষ নিয়ন্ত্রণ, অন্য দিকে উন্নয়নমুখী সংস্কার— সরকার দুই দিক হইতে অনুকূল আর্থিক নীতি রচনা করিতে না পারিলে অর্থনীতির ভিত দুর্বল থাকিয়া যায়। সেই দুর্বল ভিতের উপর দাঁড়াইয়া বহিরাগত ঝুঁকি সামলানো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে কঠিন হইতে বাধ্য। এখানেই সাহসের গুরুত্ব। যে ঝঞ্ঝার আশঙ্কা আইএমএফ-এর কর্ণধার জানাইয়া গিয়াছেন, তাহা উপস্থিত হইলে সংস্কার কঠিনতর হইবে। এখন পায়ের নীচে শক্ত জমি আছে, সাহস থাকিলে এখনই তাহা প্রদর্শনের সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial anandabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE