Advertisement
E-Paper

প্রখর প্রণয়

অস্ট্রেলিয়ায় এক ভারতীয় পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিল, তিনি এক নারীকে ১৮ মাস ধরিয়া এবং অন্য এক নারীকে চার মাস ধরিয়া অনুসরণ করিয়াছেন, ফোন করিয়াছেন, এসএমএস পাঠাইয়াছেন, অনবরত প্রেম নিবেদন করিয়া উত্ত্যক্ত করিয়াছেন। এই কারণে আদালত শাস্তি দিয়া থাকে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিচারক আসামিকে ছাড়িয়া দিলেন, কারণ তাহার উকিলের বক্তব্য, এই আচরণগুলি বলিউড ফিল্ম দ্বারা প্রভাবিত এবং ভারতীয় মানুষটি স্বাভাবিক ভাবেই তাহার সাংস্কৃতিক শিক্ষা লইয়াছে বলিউড ছবি হইতেই।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫

অস্ট্রেলিয়ায় এক ভারতীয় পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিল, তিনি এক নারীকে ১৮ মাস ধরিয়া এবং অন্য এক নারীকে চার মাস ধরিয়া অনুসরণ করিয়াছেন, ফোন করিয়াছেন, এসএমএস পাঠাইয়াছেন, অনবরত প্রেম নিবেদন করিয়া উত্ত্যক্ত করিয়াছেন। এই কারণে আদালত শাস্তি দিয়া থাকে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিচারক আসামিকে ছাড়িয়া দিলেন, কারণ তাহার উকিলের বক্তব্য, এই আচরণগুলি বলিউড ফিল্ম দ্বারা প্রভাবিত এবং ভারতীয় মানুষটি স্বাভাবিক ভাবেই তাহার সাংস্কৃতিক শিক্ষা লইয়াছে বলিউড ছবি হইতেই। সত্যই, মূল ধারার হিন্দি ছবিতে বহু কাল হইতেই দেখানো হইয়া থাকে, পুরুষটি প্রথমে নারীটির নিকট অবাঞ্ছিত থাকিলেও, তাহার নির্লজ্জ অনন্যচিত্ত লাগিয়া থাকিবার মনোবৃত্তি অচিরেই নারীর হৃদয়ে প্রেমের জন্ম দেয়। বিখ্যাত চলচ্চিত্রবেত্তা ইহাকে ভারতীয় মানসে কৃষ্ণ-রাধার লীলা-প্রভাব বলিয়াও ব্যাখ্যা করিয়াছেন। কৃষ্ণের প্রেমাভিযানে বিস্তর অনীতি ও মস্তানি মিশিয়া ছিল। আলিঙ্গন না পাইলে নৌকা ডুবাইয়া দিবার ভীতিপ্রদর্শন, যথাযথ খাজনা না পাইলে নদী পার করাইয়া না দিবার হুমকি, এইগুলি তো থানায় নালিশযোগ্য অপরাধ। হিন্দি ছবির নায়কেরাও, নায়িকা ক্লাস লইবার সময়ে সেই শ্রেণিকক্ষে শিশুদের সঙ্গে মিশিয়া বসিয়া থাকেন, বা বান্ধবীদের সহিত নায়িকা পিকনিক যাইবার সময়ে জোর করিয়া বাসে উঠিয়া পড়েন, কিংবা বারংবার হাত টানিয়া ধরিয়া গান গাহিতে থাকেন। নায়িকা প্রথমে রুষ্ট হন, পরে অবহেলার ভাব দেখান, কিন্তু নায়কের এই একনিষ্ঠতা দেখিয়া ক্রমে তাঁহার মন দ্রব, ওষ্ঠ হাস্যস্ফুরিত ও শ্বাস দ্রুত হয়, শেষে তিনি বাহুবন্ধনে আত্মসমর্পণ করেন। এই শিক্ষা পাইয়া বড় হইয়া উঠিতে থাকা পুরুষের পক্ষে ইহাই মনে করা স্বাভাবিক, এক জনের সৎ ভালবাসা কখনও অন্যের দ্বারা চির-প্রত্যাখ্যাত হইতে পারে না। সবুরে মেওয়া ও হনিমুন, দুইই ফলিতে বাধ্য।

আদালতে উকিল বলিয়াছেন, ভারতীয় পুরুষদের পক্ষে প্রেমাভিলাষে নারীদের উত্ত্যক্ত করিয়া চলা নিতান্ত প্রচলিত এক আচরণ। বিচারকও যে আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়াছেন, কেহ ইহার অর্থ করিতে পারে: অসংস্কৃত দেশের অশিক্ষিত মানুষটিকে শাস্তি দিয়া কী হইবে, সে তো সভ্যতার সহজ পাঠটুকুও পায় নাই। এই অপমানের উত্তর প্রদান সহজ নহে। ছবির দর্শককে অধ্যবসায়ে উৎসাহ দান খুবই ভাল, কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে ‘বিরক্ত করিয়া যাও, ঠিকই পাইবে’ বলিবার অর্থ দাঁড়ায় একটি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বিস্মৃত হইয়া, তাহার উপরে নিজ আকাঙ্ক্ষার ভার ও দায় চাপাইয়া দেওয়া। ইহার মধ্যে রহিয়াছে নিজেকে অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করিবার ও অন্যের ব্যক্তিত্বকে অবজ্ঞা করিবার বার্তা। নারীকে দেখিয়া পুরুষের ভাল লাগিতেই পারে, এবং নারীটিকে না পাইয়া তাহার হৃদয়ে প্রবল বেদনা জন্মাইতেই পারে, কিন্তু নারীটির তাহাকে না-ভালবাসিবার অধিকারকে শ্রদ্ধা না করিলে, সেই প্রেম ও জুলুমের পার্থক্য থাকে না। ওই প্রেমকে মহিমান্বিত করিবার অর্থ এক প্রকার পুং-গুন্ডামিকে প্রশ্রয় ও প্রশংসায় রঞ্জিত করা। এমনকী, নারীকে নিগ্রহ করিবার সাফাই রচনা। মূল ধারার ছবির ধর্মই হইল, উচিত-অনুচিতের পরোয়া না করিয়া, পয়সার বেহায়া উপাসনা। সাধারণ মানুষ ইচ্ছাপূরণের গল্প দেখিবার সময় ষত্ব-ণত্ব বিচার করেন না, আর তাঁহার বিচারের অভ্যাসটিকে প্রবল ভাবে নিরস্ত ও নিরুৎসাহিত করা ছবি-ব্যবসায়ের প্রধান লক্ষ্য, কারণ তাহা হইলে ফর্মুলা-ছবির কাটতির পথে বাধা থাকে না। পাশ্চাত্যে তবু স্থূল দাগে মানবাধিকার লঙ্ঘন করিয়া ছবি রচনা কিঞ্চিৎ কঠিন, হিন্দি ছবির সচেতন বিরোধিতার প্রায় কোনও সম্ভাবনাই ভারতে নাই। আজ বিদেশে ভারতীয় ছবির প্রবণতাকে অসম্মান করা হইল, উত্তরে বলিউড হয়তো বলিবে, কাঠগড়ায় কোমর বাঁকাইয়া নাচিয়া, বিচারক মহাশয়কে দ্রুত লয়ের গান শুনাইলেই উনি প্রত্যালিঙ্গন করিতে বাধ্য!

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

মুকুলের হয়েছে মুশকিল। কেউ বলছে ‘এ বার মুকুল ঝরবে’, কেউ মিল দিয়ে কমেন্ট করছে ‘দলের দু’কূল গেল’, কেউ ঠান্ডা মাথায় জেরা সামলে বেরিয়ে আসা দেখে ‘মু-cool’ টোন কাটছে। আর ‘সোনার কেল্লা’ তো আছেই। সত্যজিৎ-অম্বিকেশ যুগলবন্দিতে বাচ্চা-নায়কটির সঙ্গে তাঁর সমীকরণ প্রতিষ্ঠিত, একটি কাগজ দু’পাশে মদন-সৃঞ্জয়ের ছবি এঁকে, মাঝে ছোট্ট মুকুলকে রেখে, ‘আমরা সবাই সিবিআই অফিসে যাব’ লিখেছে। মনে হয় উনি আগে অ্যাফিডেভিট দফতরে গেলে ভাল!

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy