Advertisement
১৮ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

পরিকাঠামো নাই

পরিকাঠামোর অভাব-এর বাড়া অজুহাত নাই। সত্যই তো, যদি পরিকাঠামোই না থাকে, মন্ত্রিমহোদয় আর কী করিবেন? শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব লইয়াই পার্থ চট্টোপাধ্যায় অতএব জানাইয়া দিলেন, এই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক স্তরে অনলাইন ভর্তি আর বাধ্যতামূলক নহে। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁহার পূর্বসূরি ব্রাত্য বসু শেষ দিন অবধি এই অভাবের কথা টের পান নাই। পার্থবাবুও প্রথম দিন বুঝিতে পারেন নাই। বুধবার রাত্রে যে অভাবের কথা তাঁহার নিতান্ত অজানা ছিল, বৃহস্পতিবার সকালে সেই অভাবই তাঁহাকে অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়াকে কার্যত বাতিল করিয়া দিতে বাধ্য করিল।

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

পরিকাঠামোর অভাব-এর বাড়া অজুহাত নাই। সত্যই তো, যদি পরিকাঠামোই না থাকে, মন্ত্রিমহোদয় আর কী করিবেন? শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব লইয়াই পার্থ চট্টোপাধ্যায় অতএব জানাইয়া দিলেন, এই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক স্তরে অনলাইন ভর্তি আর বাধ্যতামূলক নহে। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁহার পূর্বসূরি ব্রাত্য বসু শেষ দিন অবধি এই অভাবের কথা টের পান নাই। পার্থবাবুও প্রথম দিন বুঝিতে পারেন নাই। বুধবার রাত্রে যে অভাবের কথা তাঁহার নিতান্ত অজানা ছিল, বৃহস্পতিবার সকালে সেই অভাবই তাঁহাকে অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়াকে কার্যত বাতিল করিয়া দিতে বাধ্য করিল। গোটা দুনিয়া যখন স্বচ্ছতার খাতিরে অনলাইন ভর্তির পথে হাঁটিতেছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রবল ব্যতিক্রম। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা কেন অপরিহার্য, অনুমান করা চলে, পুরাতন বা নূতন শিক্ষামন্ত্রী, এবং তাঁহাদের নেত্রী সকলই বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু, পরিকাঠামোর অভাব যদি পথ রোধ করিয়া দাঁড়ায়, শত ইচ্ছাতেও যাওয়ার উপায় থাকে কি?

কোন পরিকাঠামোর অভাব? যে কোনও ব্যবস্থাই যখন প্রথম চালু হয়, তখন তাহা সর্বাংশে কাজ করিতে পারে না, এই কথাটি বুঝিতে স্নাতক স্তরে পঠনপাঠনের প্রয়োজন নাই। অনুমান করা চলে, আগামী শিক্ষাবর্ষে, বা তাহার এক যুগ পরেও অনেক কলেজের কম্পিউটার কাজ করিবে না, অনেক ছাত্রই অনলাইন টাকা জমা করিতে পারিবে না। কিন্তু, কিছু সমস্যা আছে বলিয়া সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটিকেই বানচাল করিয়া দেওয়ার মতো দূরদৃষ্টিহীন কোনও রাজ্যের— এমনকী পশ্চিমবঙ্গেরও— নীতিনির্ধারকরা হইতে পারেন, বিশ্বাস হয় না। যেখানে সমস্যা থাকিবে, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থায় ছাত্র ভর্তি করা হইলেই চুকিয়া যাইত। অতএব, এই পরিকাঠামোর অভাবে পার্থবাবুদের আধুনিকীকরণের তরণী ঠেকিয়া যায় নাই। অভাব অন্যত্র। দলের বিভিন্ন ক্ষমতাকেন্দ্রের সহিত মন্ত্রিসভার যোগাযোগের যে পরিকাঠামো বামফ্রন্টকে মহামহিম করিয়াছিল, সেই পরিকাঠামোর অভাবেই অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়াটি আটকাইয়া গেল। ছাত্রভর্তির সনাতন পন্থাটি বজায় থাকিলে কাহার লাভ, রাজ্যবাসী বিলক্ষণ জানেন। রাজ্যের বহু কলেজেই কর্তৃপক্ষ নামমাত্র, তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদই সর্বেসর্বা। ভর্তির প্রক্রিয়াটি অনলাইন হইয়া গেলে তাহাদের সেই দাপটে বড় ধাক্কা লাগিবে। অতএব, ছাত্র পরিষদ বা তাহার অধীশ্বরের চোখে অনলাইন ব্যবস্থাটি ‘গ্রহণযোগ্য’ না ঠেকাই স্বাভাবিক। অনুমান করিবার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সেই আপত্তিতেই পার্থবাবু নূতন পথে হাঁটিবার ইচ্ছাটি ত্যাগ করিলেন।

কিন্তু তাহাতে কী? এ-যাবৎকাল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে কখনও দলীয় হস্তক্ষেপ হয় নাই, এমন কথা শুনিলে হতমান আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও অট্টহাস্যের রোল উঠিবে। এক কালে সেই ঠিকানা হইতেই অনিল বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের সব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করিতেন। শঙ্কুদেব পণ্ডা তাহার অধিক কিছু করিতে চাহেন নাই। কিন্তু, অনিল বিশ্বাসের যে পরিকাঠামো ছিল, শঙ্কুদেবের তাহা কোথায়! সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেস মার খাইয়াছে। তাহার ছাত্রনেতাকে শেষ বেলায় নিজের ইচ্ছা চাপাইয়া দিতে হয়। এমন কোনও ব্যবস্থা এখনও গড়িয়া উঠিল না যাহাতে নেতার ইচ্ছাটি কোনও বাহ্যিক হস্তক্ষেপ ব্যতীতই নীতিগত স্তরে প্রতিফলিত হইতে পারে। দুর্ভাগ্য! সেই ব্যবস্থা থাকিলে শিক্ষামন্ত্রীরাও গোড়ায় এমন ভুলভাল করিতেন না, এমন লোক হাসাইতেও হইত না। কলেজে ইন্টারনেটের ন্যায় পরিকাঠামো পরে হইবে। আপাতত এই দিকে মন দেওয়া বিধেয়। শঙ্কুদেব পণ্ডারাও থাকিবেন, তাঁহাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাও থাকিবে। সেই ইচ্ছাপূরণের পরিকাঠামো যথাযথ হইলে তবেই না সিপিআইএম-এর সার্থক উত্তরসাধক হওয়া যাইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE