‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ সাইট-টি মানুষকে পরকীয়ায় প্রণোদিত করে। তাহাদের স্লোগান হইল, ‘লাইফ ইজ শর্ট। হ্যাভ অ্যান অ্যাফেয়ার।’ মূলত বিবাহিত বা বহু কাল ধরিয়া একই সম্পর্কে জড়িত মানুষকে এই সাইটের বিজ্ঞাপনগুলি বলিতে চাহে, বেরঙিন ও বৈচিত্রহীন দিনকাল বদলাইতে কিছু উত্তেজক মেলামেশা অাবশ্যক। সাইটটি প্রবল জনপ্রিয়, প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে বারো কোটি মানুষ সাইটটি দেখিয়া থাকেন, তিপ্পান্নটি দেশ জুড়িয়া এই সাইটের সদস্যের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। টিভি ও রেডিয়োতে, পথেঘাটে বিলবোর্ডেও এই সংস্থা বিজ্ঞাপন দিয়া থাকে। এই প্রবণতার প্রচুর নিন্দা হইয়াছে, কেহ বলিয়াছেন, এই ব্যবসায়টি হৃদয় ভাঙিবার, বিবাহ নষ্ট করিবার ও পরিবার ধ্বংস করিবার কল। শুনিয়া এই সংস্থার সিইও বলিয়াছেন, ‘পরকীয়া তো বিবাহকে আরও মজবুতই করিয়া তোলে! বহু বিবাহ টিকিয়াই আছে পরকীয়ার উপর ভর করিয়া।’ ১৫ জুলাই এক দল হ্যাকার (তাহারা নিজেদের বলে ‘দি ইমপ্যাক্ট টিম’) অ্যাশলে ম্যাডিসনের সাইটটি হ্যাক করিয়া, সমস্ত তথ্য চুরি করিয়া লইল এবং সাত দিনের মধ্যে প্রথম দফা নামের তালিকা ফাঁস করিয়া দিল। নাম শুধু নহে, ব্যবহারকারীগণের ঠিকানা, ই-মেল ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য এবং তাঁহাদের বর্ণিত যৌন আকাঙ্ক্ষাদৃশ্য, সকলই প্রকাশ্যে আনিয়া দিয়া হ্যাকাররা দাবি করিল, অ্যাশলে ম্যাডিসন বন্ধ করিয়া দিতে হইবে। নচেৎ তাহারা আরও তথ্য ফাঁস করিবে। ইতিমধ্যেই এই পরিচয় ফাঁসের ফলে, দুই জন আত্মহত্যা করিয়াছেন, কত সংসারে ভয়াবহ অশান্তি শুরু হইয়াছে তাহার হিসাব নাই। হ্যাকাররা জোর গলায় বলিয়াছে, পাপীদের নাম ফাঁস করিয়া তাহারা সুকার্য করিয়াছে, সৎ স্বামী বা স্ত্রী এই সুযোগে চিনিয়া লউন তাঁহার অসৎ জীবনসঙ্গীটিকে। অর্থাৎ ইহা এক প্রকারের সমাজসংস্কার।
ঘটনাটি বহু জটিল প্রশ্নের জন্ম দেয়। চোর যদি চিৎকার করিয়া বলে, গৃহস্থের ঘরে উঁকি দিয়া সে দেখিয়াছে, স্বামী নিজ স্ত্রীর গয়না চুরি করিতেছে, তাহা হইলে চোরটি কি সাধু হইল? সাইট হইতে তথ্য চুরি করা অপরাধ, তবে হ্যাকাররা সমাজ-জ্যেষ্ঠতাত সাজিতেছে কোন অধিকারে? কিন্তু হ্যাকাররা বলিতে পারে, এই ক্ষেত্রে চুরির অপবাদ খাটিবে না, কারণ নৈতিকতার দায়ে তাহারা চোরের উপর বাটপাড়ি করিয়াছে মাত্র। এই ধরনের কুরুচিসম্পন্ন সাইট বন্ধ করিতে গেলে তাহাদের সহিত এই আচরণই যথাযথ। যেমন স্বাধীনতা সংগ্রাম করিতে গিয়া সাহেবকে বোম মারিলে সেই হত্যা পাপের পরিবর্তে বীরত্বের বর্ণে রঞ্জিত হইয়া যায়, তেমনই বৃহত্তর নৈতিকতার স্বার্থে এই আপাত-অনৈতিক কার্যটি পবিত্র বলিয়াই গণ্য হইবে। উদারমনস্ক প্রশ্ন তুলিবেন, পরকীয়া পাপ বলিয়া গণ্য হইতেছে কোন যুক্তিতে? এক জন মানুষ বিবাহ করিয়াছে বলিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করিতে বাধ্য থাকিবে? দুই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পূর্ণ সম্মতিক্রমে একটি সম্পর্ক স্থাপন করিলে সমাজ তাহাকে অপরাধ বলিয়া দাগিয়া দেয় কোন অধিকারে? রক্ষণশীল তখন চেঁচাইয়া উঠিবেন, বিবাহের মধ্যেই একগামিতার শর্তটি প্রধান অক্ষরে খচিত, নীতিশিথিল লোক বরং বিবাহবন্ধনটি পূর্বে ছিন্ন করিয়া, তবে মৃগয়াবিলাস দর্শান। বৃক্ষেরও খাইব, তলার সাইটেও যাইব, তাহা হইবে না। কেহ বলিবেন, এই প্রযুক্তির প্লাবন লইয়া হইয়াছে জ্বালা। লুকাইয়া লুকাইয়া প্রেম করিবি কর না, নিজ নগ্ন ছবিগুলি পোস্ট করিয়া যৌনতা পালনের প্রয়োজন কী ছিল। এই তো শত শত বৎসর ধরিয়া মানুষ কম্পিউটার ব্যতিরেকেই পরকীয়া করিয়াছে, দিব্য জমিয়াছে। কেহ বলিবেন, নূতনতর যৌন উপভোগ সভ্যতার মহা দান, তাহা ব্যবহার করিতেছি বলিয়া ব্যক্তিগত পরিসরের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হইবে কেন? আর বাদানুবাদের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া ব্রহ্মচারী মুচকি হাসিবেন, ‘বলিয়াছিলাম কিনা?’
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
জার্মানিতে একটি মেয়ে বাড়িওয়ালার তাড়া খেয়ে ঠিক করেছে, এখন থেকে সে ট্রেনে থাকবে। টিকিট সে কাটে, কিন্তু এতে তার থাকাথাকির খরচা প্রচুর কমে গেছে, একটা ছোট্ট ব্যাগে সর্বস্ব আঁকড়ে, সারা দিন বহুত জায়গা দেখতে পায়। একটা ব্লগ লিখছে, আধুনিক ট্রেন-ভবঘুরের জীবন নিয়ে। থিসিসও করছে এই নিয়েই। হায় রে, আমাদের ফুটপাতে-থাকা ও চুটিয়ে সংসার-করা লাখো লোক শুধু ব্লগ আর থিসিসের ‘ব্ল’ ও ‘থি’ অক্ষর গোমাংস বলে, থেকে গেল অ-বিখ্যাত আর অ-ডক্টরেট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy