Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

বিজ্ঞাপনের বিচার

সরকারি বিজ্ঞাপন কোথায় যাইতে পারে আর কোথায় যাইতে পারে না, প্রশ্নটি খুব জটিল হইবার কথা নয়। যেখানে সরকারি অর্থে অযথা পৃষ্ঠপোষণের আশঙ্কা নাই, সেখানেই সরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়া উচিত। সরকারের অর্থ অর্থাৎ জনসাধারণের অর্থ যেন কোনও অকারণ বা অনৈতিক ভিত্তিতে অপব্যয়িত না হয়, দেখা দরকার এইটুকুই।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

সরকারি বিজ্ঞাপন কোথায় যাইতে পারে আর কোথায় যাইতে পারে না, প্রশ্নটি খুব জটিল হইবার কথা নয়। যেখানে সরকারি অর্থে অযথা পৃষ্ঠপোষণের আশঙ্কা নাই, সেখানেই সরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়া উচিত। সরকারের অর্থ অর্থাৎ জনসাধারণের অর্থ যেন কোনও অকারণ বা অনৈতিক ভিত্তিতে অপব্যয়িত না হয়, দেখা দরকার এইটুকুই। সে দিক দিয়া বিচার করিলে, সাধারণ সংবাদমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন আসা, এবং দলীয় মুখপত্রে সরকারের বিজ্ঞাপন বাহির হইবার মধ্যে বিস্তর প্রভেদ। দলীয় মুখপত্র অন্যান্য বাণিজ্যিক কাগজের সমগোত্রীয় নয়। তাহা দলেরই একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি এবং দলের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রচারই তাহার প্রথম ও শেষ উদ্দেশ্য। প্রতিটি দলই জানে, তাহার মুখপত্র মোটেও সাধারণ জনসমাজের জন্য উদ্দিষ্ট নহে, বরং সেই জনসমাজের একটি বিশেষ রাজনৈতিক অংশের প্রতি নিবেদিত। এই রকম স্বঘোষিত ও সচেতন দলীয় প্রচারযন্ত্রকে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোনও হেতুই থাকিতে পারে না। বিজ্ঞাপন ছাপাইবার জন্য তাহাকে মূল্য ধরিয়া দিবার উদ্দেশ্য যাহাই হউক, পরিণাম সহজ ও সরল: সরকারি (সাধারণ্যের) অর্থে ওই বিশেষ দলটির পৃষ্ঠপোষণ।

সুতরাং কলিকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়টি প্রশ্নযোগ্য হইয়া রহিল। রাজনৈতিক দলের মুখপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ হইবে না বলিয়া যে সরকারি বিজ্ঞপ্তি বাহির হইয়াছিল, আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও বলা যায়, তাহাকে খারিজ করিবার যুক্তিটি বোঝা গেল না। যে রাজনৈতিক দল মামলাটি দায়ের করিয়াছিল, তাহাদের নিকটও প্রশ্ন: রাষ্ট্রের হস্ত অনেক দূর প্রসারিত হইতে পারে মানিয়া লইলেও নিজেদের দলযন্ত্রটির দেখভালের জন্যও সরকারি অর্থ জরুরি, এমন দাবি অযৌক্তিক নয় কি? বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মতামত যাহাতে মুক্ত ভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হইতে পারে, সেই পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিস্থিতি নির্মাণ করা সরকারি দায়িত্ব। কিন্তু রাজকোষের দ্বার খুলিয়া বিভিন্ন দলীয় ফান্ডকে পুষ্ট করাও সেই দায়ের অন্তর্ভুক্ত হইতে পারে কি?

এই সহজ প্রশ্নটি অনাবশ্যক রকম জটিল শোনাইতেছে বর্তমান সরকারি নীতির উন্মার্গগামিতার কারণে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসা ইস্তক বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিষয়ে বিজ্ঞাপন-নীতি, থুড়ি, বিজ্ঞাপন-কূটনীতি তৈরিতে নিজেকে প্রবল উদ্যমে ব্যাপৃত রাখিয়াছে। সরকারি দফতরে তালিকা তৈরি হইয়াছে, কাহারা বিজ্ঞাপন অর্থাৎ সরকারি অনুগ্রহ পাইতে পারে, কাহারা পারে না। যেহেতু এই সংবাদপত্রগুলির অধিকাংশই ব্যবসায়িক, তাই সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্যে যথেচ্ছাচারের ইঙ্গিতটি স্পষ্ট। বিজ্ঞাপন একটি ব্যবসায়িক প্রকরণ, সরকারি অনুগ্রহ কুড়াইবার পথ নহে। তবে এই সংবাদপত্রগুলির ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত আপত্তিকর হইলেও বেআইনি বলা মুশকিল। সরকারই ঠিক করুক, ব্যবসায়িক পত্রপত্রিকায় আর্থিক বিনিময়ে সরকারি নীতির দৃশ্যগোচরতার প্রয়োজন আছে কি না। কিন্তু যে সংবাদপত্রগুলি ব্যবসায়িক নয়, দলীয় সংগঠনের বার্তাবাহক মাত্র, তাহাদের ক্ষেত্রে মাপকাঠিটি ভিন্ন হওয়া জরুরি। তাহাদের ক্ষেত্রে সরকারি বিজ্ঞাপন জনতার অর্থের নয়ছয় বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। তাই দলীয় সংবাদপত্রের প্রসঙ্গটিকে সরকারের নিষিদ্ধ-তালিকা হইতে পৃথক করিয়া বিচার করা বাঞ্ছনীয়। নতুবা নিষেধাজ্ঞার নীতি ও দুর্নীতি মিলিয়া-মিশিয়া মুড়ি-মিছরিতে পরিণত হইতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE