Advertisement
E-Paper

বিহারের কুনাট্য

লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের ‘নৈতিক দায়’ শিরোধার্য করিয়া বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দিয়া যে নাটকের শুরু, তাহা তাঁহারই সরকারের তফশিলি ও আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জিতনরাম মাঞ্জির অভিষেকের মধ্য দিয়া আপাতত সাঙ্গ হইয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী বদল হইলেও জিতনরামের অবশিষ্ট মন্ত্রিসভা নীতীশ কুমারের সাজানো বাগানের উত্তরাধিকার। দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও নীতীশ অন্য কাহারও হাতে ছাড়িতেছেন না।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০০:০৪

লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের ‘নৈতিক দায়’ শিরোধার্য করিয়া বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দিয়া যে নাটকের শুরু, তাহা তাঁহারই সরকারের তফশিলি ও আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জিতনরাম মাঞ্জির অভিষেকের মধ্য দিয়া আপাতত সাঙ্গ হইয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী বদল হইলেও জিতনরামের অবশিষ্ট মন্ত্রিসভা নীতীশ কুমারের সাজানো বাগানের উত্তরাধিকার। দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও নীতীশ অন্য কাহারও হাতে ছাড়িতেছেন না। অর্থাৎ অনুমান করিবার কারণ আছে, নেপথ্য হইতে মুখ্যমন্ত্রীর ক্রিয়াকর্ম সব নীতীশই সামলাইবেন। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তবে আর এত ঘটা করিয়া পরাজয়ের দায় মাথায় লওয়ার এবং রাজভবনে গিয়া ইস্তফাপত্র দেওয়ার কুনাট্যের দরকার কী ছিল?

দরকার ছিল। নীতীশ কুমার এত কাল যে যাদব-মহাদলিত জোটের সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা এক দিকে লালুপ্রসাদের যাদব-মুসলিম জোট, অন্য দিকে বিজেপির উচ্চ বর্ণের হিন্দু সংহতির মোকাবিলা করিয়া আসিয়াছেন, নরেন্দ্র মোদী সেই হিসাবনিকাশ অনেকটাই ওলটপালট করিয়া দিয়াছেন। নীতীশ-লালুর নির্বাচনী বিপর্যয়ের মূলেও রহিয়াছে মণ্ডল-রাজনীতির ওই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যর্থতা। ‘অনগ্রসর’ নেতা মোদীর দিগ্বিজয়যাত্রার সামনে বিহারের এই অনগ্রসর নেতাদের প্রতিরোধ খড়কুটার মতো ভাসিয়া গিয়াছে। তাই নূতন করিয়া জাতপাতের সমীকরণের খোঁজ শুরু হইয়াছে। সেই অন্বেষণেরই অংশ বিহারে মহাদলিত মুখ্যমন্ত্রীর অভিষেক। ‘মহাদলিত’ বর্গটি নীতীশ কুমারের নিজস্ব সঞ্চয়ন, পাসোয়ান ছাড়া রাজ্যের আর সব দলিত জাতকে যাহার অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। দলিতদের মধ্যেই সর্বাপেক্ষা নিম্নবর্গীয় মুস্হর সম্প্রদায়ের রাজনীতিক এই জিতনরাম। তাঁহাকে মুখ্যমন্ত্রী বানাইয়া নীতীশ কুমার রাজ্যের দলিতদের একটি জোরালো বার্তা দিতে চাহিয়াছেন: বিহারে অতঃপর অনগ্রসর নয়, তাহারও নিম্নস্থানীয় দলিতের শাসন কায়েম হইবে। বিহারে মহাদলিত জনসংখ্যা ১২ শতাংশ। যাদব, কুর্মির মতো অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের সহিত একজোট হইলে এই জনসংখ্যা বিজেপি-পাসোয়ানের পালের হাওয়া কাড়িয়া লইতে বিলক্ষণ সক্ষম হইবে। অন্তত নীতীশ কুমার তেমনই হিসাব কষিতেছেন।

অর্থাৎ ঘুরিয়া-ফিরিয়া মণ্ডল রাজনীতির সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রক্রিয়াটিই জারি রহিল। লক্ষণীয়, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই জিতনরামের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থনের কথা রাজ্যপালকে চিঠি দিয়া জানাইয়া দিয়াছে। বাকি রহিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁহার দিনকালও বিশেষ ভাল যাইতেছে না। বিহারের সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির নেতৃত্ব হাসিল করার স্বপ্ন তাঁহার হাওয়ায় মিলাইয়া গিয়াছে। তা ছাড়া, এক জন মহাদলিতের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন না করিলে অনগ্রসরদের মসিহা হওয়ার দাবিই বা কেমন করিয়া তোলা যাইবে? অতএব লালুপ্রসাদও উপায়ান্তর না দেখিয়া নীতীশ কুমারের চালকে সমর্থন করিতে বাধ্য হইবেন। ইহার ফলে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি-রামবিলাসের যুগ্ম শক্তিকে ঠেকানো সম্ভব হইবে কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে এ বিষয়ে সন্দেহ নাই যে, ধুরন্ধর রাজনীতিক নীতীশ কুমারের কৌশলে রাজ্য-রাজনীতির ছাঁদটি আংশিক ভাবে হইলেও পাল্টাইয়া যাইবে। জাতপাতের রাজনীতি হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুর হইতে সহজে মুছিয়া যাওয়ার নয়। নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের স্লোগান অনুন্নত শ্রেণিগুলিকে স্বপ্নসন্ধানী করিয়া তুলিতে পারে, তাঁহারা মোদীর ভারতের নাগরিক হইতে উৎসুক হইতে পারেন। কিন্তু নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবের মতো রাজনীতিকরা সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের খেলা ছাড়িয়া দিতে আগ্রহী নন, গণতন্ত্রকে গভীরগামী ও শিকড়সন্ধানী করার নামে তাহাকে উপর্যুপরি খণ্ডিত করিতে থাকাই যে খেলার মূলমন্ত্র।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy