Advertisement
E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর মূল্যায়ন

মুখ্যমন্ত্রী সরকারি দফতরগুলির পরীক্ষা লইলেন। তাহাতে অধিক প্রশ্ন উঠিল পরীক্ষার পদ্ধতি লইয়া। দফতরের কাজ কেমন হইতেছে, তাহা বুঝিতে একটিই প্রশ্ন প্রাধান্য পাইয়াছে। তাহা হইল, দফতর হইতে কত টাকা জেলায় অথবা প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাইয়াছে। টাকা পাঠাইয়া দেওয়া বড় জোর দফতরের তৎপরতার প্রমাণ হইতে পারে, দক্ষতার প্রমাণ কী রূপে হইবে? টাকা আদৌ খরচ হইয়াছে কি না, হিসাব মিলিয়াছে কি না, দুর্নীতি ঘটিল কি না, এই প্রশ্নগুলি মূল্যায়নে উঠিবে না কেন? প্রকল্পগুলি কার্যত কত দূর রূপায়িত হইয়াছে, উদ্দেশ্য সাধিত হইয়াছে কি না, প্রকল্প রূপায়ণের পর প্রত্যাশিত সুবিধাগুলি মানুষ পাইতেছেন কি না, এই প্রশ্নগুলি না তুলিলে কী প্রকারে মূল্যায়ন হইতে পারে?

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:০৫

মুখ্যমন্ত্রী সরকারি দফতরগুলির পরীক্ষা লইলেন। তাহাতে অধিক প্রশ্ন উঠিল পরীক্ষার পদ্ধতি লইয়া। দফতরের কাজ কেমন হইতেছে, তাহা বুঝিতে একটিই প্রশ্ন প্রাধান্য পাইয়াছে। তাহা হইল, দফতর হইতে কত টাকা জেলায় অথবা প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাইয়াছে। টাকা পাঠাইয়া দেওয়া বড় জোর দফতরের তৎপরতার প্রমাণ হইতে পারে, দক্ষতার প্রমাণ কী রূপে হইবে? টাকা আদৌ খরচ হইয়াছে কি না, হিসাব মিলিয়াছে কি না, দুর্নীতি ঘটিল কি না, এই প্রশ্নগুলি মূল্যায়নে উঠিবে না কেন? প্রকল্পগুলি কার্যত কত দূর রূপায়িত হইয়াছে, উদ্দেশ্য সাধিত হইয়াছে কি না, প্রকল্প রূপায়ণের পর প্রত্যাশিত সুবিধাগুলি মানুষ পাইতেছেন কি না, এই প্রশ্নগুলি না তুলিলে কী প্রকারে মূল্যায়ন হইতে পারে? এমনকী বরাদ্দ অর্থ জেলায় পাঠাইবার বিষয়েও প্রশ্ন উঠিয়াছে। কেবল রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির বরাদ্দ লইয়াই মূল্যায়ন হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প, যাহাতে অধিক অর্থ বরাদ্দ হয়, তাহার কোনও হিসাব তলব করা হয় নাই। কাহারও মনে হইতে পারে, এত প্রশ্ন কেন? সরকারি কর্মীদের নিজ দায়িত্বের প্রতি সচেতন রাখিবার কাজটি তো হইল। কোনও একটি বিষয় ধরিয়া মূল্যায়ন করিলেই তাহার আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। সকল বিষয়ই বিশদ দেখিতে হইবে, এমন নহে। কিন্তু পরীক্ষার উদ্দেশ্য কেবল পরীক্ষার্থীকে ভাল-মন্দ বলিয়া দাগিয়া দেওয়া নহে। সরকারি কর্মীর নিকট কী প্রত্যাশিত, পরীক্ষার ধাঁচ তাহারই বার্তা বহন করে। স্কুলকলেজের মতোই এ ক্ষেত্রেও যাহা পরীক্ষার পরিধির মধ্যে রহিয়াছে তাহাকেই প্রয়োজনীয় এবং যাহা তাহার বাহিরে তাহাকে অপ্রয়োজনীয় বলিয়া ভাবিতে শেখে পরীক্ষার্থীরা। টাকা জেলায় পাঠাইয়া দেওয়াই যদি পরীক্ষার মূল বিবেচ্য হয়, তাহা হইলে এই বার্তাই যায় যে, ইহাই সর্বাধিক প্রয়োজনীয় সরকারি কাজ, সেই টাকা দিয়া কী হইল তাহার জবাবদিহির ভার কর্তাদের নহে। এই মনোভাব এমনিতেই বহাল রহিয়াছে। কাজের খতিয়ান দিতে গেলে আমলারা স্বচ্ছন্দে বলেন, তাঁহারা টাকা ‘নামাইয়া’ দিয়াছেন, অর্থাৎ জেলায় পাঠাইয়াছেন। পরীক্ষার এই নিয়ম বলবৎ থাকিলে সেই ধারণাতেই দাগা বুলানো হইবে। যাঁহারা কার্যক্ষেত্রে ফেল, তাঁহারাও পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ হইবেন। গোল্লা মিলিবে উন্নয়নে।

প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত কর্মীদের মূল্যায়ন কী রূপে হইবে, সে বিষয়ে বহু আলোচনা হইয়াছে। সে কালে রাজা-বাদশাহরা ছদ্মবেশ ধরিয়া বাহির হইতেন, প্রশাসন সম্পর্কে লোকের মত বুঝিবার চেষ্টা করতেন। এখন সে দিন নাই, কিন্তু সেই চাহিদা নাগরিকের তরফে রহিয়াই গিয়াছে। তাই প্রায়ই দাবি ওঠে, মন্ত্রী-প্রশাসকরা অফিস ছাড়িয়া শহর-গ্রামে আসিয়া দেখুন কী ঘটিতেছে। কিন্তু তাহাও যথেষ্ট নহে। চোখের দেখায় খুব মোটা রকম বোঝা যাইতে পারে, কাজ কত দূর হইয়াছে। কিন্তু সেই মূল্যায়ন ব্যক্তির দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ভেদে আলাদা হইয়া যায়। আধুনিক প্রশাসন মূল্যায়নের জন্য দুইটি বিষয়ের উপর জোর দিয়াছে, দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা। প্রতি দফতরের এবং প্রকল্পের অডিট রিপোর্ট নিয়মিত প্রকাশ, প্রতিটি দফতরের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ এবং প্রচার, সাবেকি অডিট-এর পাশাপাশি ‘সোশ্যাল অডিট’, অর্থাৎ স্থানীয় নাগরিক বা সুবিধাভোগীদের দ্বারা হিসাবনিকাশ, এই সব করা হইয়া থাকে। তৎসহ গ্রাম সভা, ওয়ার্ড সভা এবং বিশেষ উপলক্ষে আমন্ত্রিত নানা সভায় নিয়মিত প্রশাসনের খামতি বিষয়ে জানা যায়। ইহাতে মূল্যায়নের নিয়মরক্ষার বাইরে গিয়া বাস্তবিক মূল্যায়ন সম্ভব। এখন প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছতা সহজ হইয়া গিয়াছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রশাসকদের মূল্যায়নের প্রাথমিক শর্ত।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy