রসিকতার ধর্মই হইল, কাহাকেও আঘাত করা। ‘ক বলিল, খ হাসিল, গ চটিল’, ইহাই অধিকাংশ রসিকতার বৈশিষ্ট্য ও মূল আবেদন। অ্যালোপ্যাথিতে একটি কথা প্রচলিত, যে ঔষধ মারিতে পারে না, সেই ঔষধ বাঁচাইতেও পারে না। তেমনই, যে রসিকতা আঘাত করে না, তাহা নিতান্তই পানসে। কিন্তু সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক স্টেডিয়ামে চার হাজার মানুষের সম্মুখে ‘এআইবি রোস্ট’ অনুষ্ঠানটিতে বহু তারকা মিলিয়া অন্য তারকাগণ এবং প্রায় সমগ্র অবশিষ্ট পৃথিবী বিষয়ে এমন সকল রসিকতা নিক্ষেপ করিলেন, বহু ব্যক্তি ও সংগঠন চটিয়া আগুন। কেহ মামলা করিতেছেন, কেহ নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করিয়া পত্র পাঠাইতেছেন, কেহ বলিতেছেন চুটকি-পরিবেশনকারীদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বয়কট করা হউক, ইঁহাদের ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হউক, আসন্ন রিলিজ বন্ধ করা হউক। রণবীর সিংহ, কর্ণ জোহর ও অর্জুন কপূর চলচ্চিত্র-জগতের তারকা ও প্রবল খ্যাতিসম্পন্ন বলিয়া, তাঁহাদের উপরেই মূল কোপটি পড়িতেছে। ইঁহারা ওই শো-তে— যাহা লোকে টিকিট কাটিয়া দেখিয়াছিলেন, আর পরবর্তী কালে ইন্টারনেটে অনেকেই যাহা দেখিয়াছেন— মুড়ি-মুড়কির ন্যায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন, সহকর্মীদের সম্পর্কে বহু কথা বলিয়াছেন যাহা তাঁহাদের ব্যক্তিগত জীবন টানিয়া মজা করিয়াছে, বহু কথা বলিয়াছেন যাহার মধ্যে বর্ণবৈষম্য, নারীবিদ্বেষ, সমকামবিরোধিতা স্পষ্ট। সংক্ষেপে, এইটি ছিল একটি বদরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান।
কিন্তু, বুঝিতে হইবে, অনুষ্ঠানটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই ‘রাজনৈতিক বেঠিকতা’কে উদযাপন করিতেছিল। এইটির উদ্দেশ্যই ছিল, কলেজ হোস্টেল অফিস ক্যান্টিন ঘরোয়া আড্ডায় যে রসিকতাগুলি যুগ যুগ ধরিয়া চলিতেছে, তাহার ন্যায় এক মজাদার কদর্য কাণ্ড সর্বসমক্ষে করা, যাহাতে প্রবল হইহই ঘটে। এইটির নাম ‘রোস্ট’, কারণ, ইহা সেঁকিতে চাহে। আমার রসিকতা তোমাকে ঝলসাইয়া দিক, এই লক্ষ্যেই খেলিতে নামে। এই উদ্দেশ্যটিকে বা প্রক্রিয়াটিকে কেহ প্রচণ্ড ধিক্কার জানাইতেই পারেন, রসিকতার মাধ্যমে চতুষ্পার্শ্বে সকলের উদ্দেশে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করিবার মনোভাবকে অসভ্য, অভদ্র ও অসংস্কৃত বলিয়া গাল পাড়িতেই পারেন, এই অনুষ্ঠানটির সম্পর্কে এমন সমালোচনা লিখিতে পারেন যাহা অংশীগণকেও নিষ্ঠুর রোস্ট করিবে, কিন্তু ভারতীয় নীতিজ্যাঠাগণ বাধ্য করিলেন ইন্টারনেট হইতে অনুষ্ঠানটি তুলিয়া লইতে এবং ভয় দেখাইলেন, ক্ষমাপ্রার্থনা না করিলে রুজিরুটি বন্ধ করিবেন। এই মস্তানির প্রবণতাই অধিক ধিক্কারের যোগ্য।
এক বিবৃতিতে অনুষ্ঠানটির রচয়িতারা জানাইয়াছেন, কেহই তাঁহাদের ভিডিয়োটি তুলিয়া লইতে বাধ্য করে নাই, ওইটি তাঁহারা নিজেদের বাস্তববোধের বশেই করিয়াছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের বাস্তববোধ সহজেই কান মুলিবার ধরন ও এই পরিণামের সহজ সমীকরণটি কষিতে পারে। এই দেশের স্বনিযুক্ত অভিভাবকগণ যে চাবুকটি আছড়াইয়া ক্রমাগত ‘সুরুচি’কে জিতাইতেছেন, তাহাকে প্রসারিত করিলেই আমরা শার্লি এবদো-রও ধ্বংসকামনা শুনিতে পাইব। এই সংবাদপত্রটিও প্রায়ই কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে অপমান করিতে লাফাইয়া পড়িত, জোর করিয়া কাছা-কোঁচা টানিয়া মজা আমদানি করিত। কিন্তু উহার উপর ঘৃণ্য আক্রমণের পর আজ উহা বাক্স্বাধীনতার এক উজ্জ্বল প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে। তবে ভারতীয় রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠের তাহাতে কোনও হেলদোল নাই। কোনও সংস্কৃতি অপছন্দ হইলেই তাঁহারা মামলা ঠুকিবেন, বিক্ষোভ করিবেন, ভয় দেখাইবেন। তাঁহারা মনে করেন শিল্পীদের বাক্স্বাধীনতা শর্তাধীন, কিন্তু ক্রোধী দর্শকের পেশিস্বাধীনতা নিঃশর্ত। ইউ-টিউবে অনুষ্ঠানটি দেখিতে কেহ কাহাকেও বাধ্য করে নাই, নীতিবাগীশরা আদৌ এইটি দেখিলেন কেন? আসলে, সমস্যা হইল, ভারতে সেন্সর একটি বোর্ডে সীমাবদ্ধ নাই।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
পুলিশ আজকাল খুব মার খাচ্ছে। অপরাধীকে ধরতে গেলে, চোরাই মার্কেটে রেড করতে গেলে, সিগনাল ভাঙা ড্রাইভারকে পাকড়াও করলেও মার। তবে কি এ বিপ্লব: অ্যাদ্দিনের পুলিশি অত্যাচারের পালটা দিচ্ছে জনগণ? বা, আর্সেনিকের প্রভাবে পাবলিকের চিত্ত হল ভয়শূন্য? কিংবা নেশা: মারতে এত ভাল লাগছে, কে পুলিশ কে চোর বাছবিচার থাকছে না? রোসো রোসো, হতে পারে এটা পুলিশেরই চক্রান্ত, ডামাডোলের বাজারে চাকরি ছাড়ার অমোঘ অজুহাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy