Advertisement
E-Paper

শিখরে চড়ুইভাতি

এভারেস্টে তুষার-ধস। তাহাতে নিহত অন্তত ১৬ জন শেরপা। এই শেরপারাই পর্বত-অভিযাত্রীদের পথ-প্রদর্শক এবং মালবাহক। বেস ক্যাম্প হইতে উপরের ক্যাম্পগুলিতে তাঁহারাই আগাম যাতায়াত করিয়া মালপত্র রাখিয়া আসেন, পথ তৈয়ার করিয়া দেন।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৫

এভারেস্টে তুষার-ধস। তাহাতে নিহত অন্তত ১৬ জন শেরপা। এই শেরপারাই পর্বত-অভিযাত্রীদের পথ-প্রদর্শক এবং মালবাহক। বেস ক্যাম্প হইতে উপরের ক্যাম্পগুলিতে তাঁহারাই আগাম যাতায়াত করিয়া মালপত্র রাখিয়া আসেন, পথ তৈয়ার করিয়া দেন। এভারেস্ট মরসুম শুরু হওয়ায় এ দিনও তাঁহারা বেস-ক্যাম্প হইতে রওনা হইয়া ওই কাজটিই করিতেছিলেন। তখনই সহসা সম্প্রপাত। ভয়াবহ ঘটনা, সন্দেহ নাই। দরিদ্র শেরপা পরিবারগুলির পক্ষে বিশেষ ভাবে মর্মান্তিক। তবে অপ্রত্যাশিত বলিলে ভাবের ঘরে চুরি হইবে। যে হারে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের হিড়িক ক্রমশ বাড়িয়া চলিয়াছে, তাহাতে ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক বিপর্যয়ই ঘটা সম্ভব।

পৃথিবীর উচ্চতম এই পর্বতশৃঙ্গে ফি-বছর এখন গড়ে অন্তত ত্রিশটি অভিযান সংগঠিত হইয়া থাকে। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের গৌরব ও মহিমাই নিশ্চয় অভিযাত্রীদের আকৃষ্ট করিয়া থাকে। পঞ্চাশ-ষাট বছর আগের তুলনায় পর্বতারোহণ এখন অনেক সহজ, মসৃণ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতি কাজে লাগাইয়া পর্বতারোহীদের শারীরিক ও পরিকাঠামোগত অসুবিধা লাঘব করার রকমারি উপায়ও উদ্ভাবিত। ফলে দলে-দলে অভিযাত্রীরা এখন এভারেস্টমুখী। অনেকেই মূলত পর্যটক। পর্যটকদের সংখ্যাবৃদ্ধি এভারেস্টের চার পাশের বাণিজ্যিকীকরণ ঘটাইয়াছে। পর্বতারোহীদের ফেলিয়া আসা আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেটের মতো অবিনশ্বর জিনিসপত্র, যাহার স্তূপ এলাকার পরিবেশ দূষিত করিতেছে। অন্য দিকে, ঘন-ঘন পর্বতারোহী ও তাঁহাদের মালপত্র পৌঁছাইয়া দিতে ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের কম্পন ভঙ্গুর পর্বতগাত্রের আল্গা তুষার-আবরণকে আরও ভঙ্গুর করিয়া তুলিতেছে। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান দেখাইতেছে, ওই বছরের এক বিশেষ দিনে এভারেস্ট শীর্ষে পা রাখিয়াছিলেন ২৩৪ জন পর্বতারোহী, যাঁহাদের অধিকাংশকেই অন্তত আড়াই ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করিতে হইয়াছিল শীর্ষে চড়িবার জন্য।

এখন পর্বতারোহীরা রকমারি নজির স্থাপন করিতে তাড়িত। যেমন এক পর্বতারোহী এভারেস্টের মাথায় চড়িয়া শীর্ষাসনে ‘দণ্ডায়মান’ থাকেন। আর এক জন পাহাড়চূড়ায় উঠিয়া দ্রুত সব জামাকাপড় খুলিয়া উলঙ্গ হইয়া ছবি তোলেন। এই ধরনের উদ্ভট কাণ্ডকারখানা এভারেস্ট ও তাহা জয় করার গৌরবকে অনেকটাই ম্লান করিয়াছে, সামগ্রিক ভাবে পর্বতারোহণের মর্যাদাও হ্রাস করিয়াছে। গত বছর এপ্রিল মাসে তো শেরপা মালবাহক ও পথ-প্রদর্শকদের সহিত ইউরোপীয় পর্বতারোহীদের রীতিমত মারামারিও ঘটিয়া যায়। গ্রহের শিখরেও এখন পিকনিকের আবহাওয়া, রেস্তোরাঁর পরিবেশ। নেপালের সরকার এভারেস্টে চড়ার এই জনপ্রিয় পথ হইতে প্রভূত বিদেশি মুদ্রা উপার্জন করে। তাই অভিযাত্রীদের গতিবিধির উপর কোনও রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিতে নারাজ। কোথাও কোথাও তো এভারেস্টে চড়ার সিঁড়ি বানাইবার তোড়জোড়ও চলিয়াছে। তিব্বতের দিক হইতে এভারেস্টের কাছাকাছি পৌঁছাইতে বেজিং সরকার রীতিমত পাকা সড়ক বানাইয়া অভিযানের দুরধিগম্যতা অতিক্রম করিতে প্রয়াসী। অথচ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি যত সুগম হইবে, ততই সেখানে বিপর্যয় ও দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়িতে থাকিবে। কী ভাবে এই বিপর্যয়ের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহা নির্ধারণের জন্য যথার্থ উদ্যোগের সময় হইয়াছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগ।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy