নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেনা ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রনীতি উল্টোরথে সওয়ার: মহিন্দা রাজাপক্ষের প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শুভবুদ্ধির পথে। এই পথে প্রথমেই রাজাপক্ষের অনুগত পার্লামেন্টে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে ‘ইম্পিচ’ করা প্রধান বিচারপতি শিরানি বন্দরনায়েকেকে স্বপদে ফিরাইয়া আনা হয়। তিনি অবশ্য এক দিন মাত্র ওই পদে থাকিয়াই অবসর গ্রহণ করেন। তাঁহার স্থলে শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হইয়াছেন এক জন তামিল: কনকসভাপতি শ্রীপবন। ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম কোনও সংখ্যালঘু এই পদে অধিষ্ঠিত হইলেন। তাহার আগেই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তামিল-প্রধান উত্তর প্রদেশের রাজ্যপালের পদ হইতে সামরিক অফিসারকে বরখাস্ত করিয়া এক কূটনীতিককে বসাইয়াছেন। অতঃপর তাঁহার সরকারের ঘোষণা, ২০০৯ সালের মার্চ মাসে এলটিটিই পরাস্ত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর হস্তে চল্লিশ হাজার অসামরিক তামিল নাগরিকের নিহত হওয়ার অভিযোগটির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনের দাবি শিরোধার্য করিয়াই এই তদন্ত চলিবে। সিরিসেনা স্পষ্টতই জাতিবৈরের ভিত্তিতে শাসনে বিশ্বাসী নহেন।
মহিন্দা রাজাপক্ষে তাঁহার শাসনকালে অসামরিক তামিলদের নিপীড়নের সব অভিযোগ, এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবিও ‘মনগড়া এবং অভিসন্ধিমূলক’ বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছেন। তাঁহার উত্তরসূরি কেবল নূতন তদন্তের আশ্বাসই দিতেছেন না, তদন্তে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের শামিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়াছেন। সিরিসেনার সরকার তামিলদের প্রতি সহানুভূতির প্রমাণ দিতে দুইটি ঘোষণাও করিয়াছেন: এখনও গেরিলা সন্দেহে সামরিক হেফাজতে বন্দি শত শত তামিলকে মুক্তি দেওয়া হইবে ও তামিলদের কাছ হইতে কাড়িয়া লওয়া জমি ফেরত দেওয়া হইবে। ওই জমি রাজাপক্ষের সামরিক বাহিনী কোনও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জবরদখল করিয়া সেখানে বিলাসবহুল পর্যটন-হোটেল, গল্ফ কোর্স, পোলট্রি, সব্জি-খামার ইত্যাদি তৈয়ার করিয়াছিল। আর যে সব তামিলের জমি দখল হয়, তাঁহারা এত কাল শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাইতেছিলেন। সেই অনাচার এ বার বন্ধ হইতে চলিয়াছে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা জানেন, তাঁহার অপ্রত্যাশিত জয়লাভের পিছনে উত্তর ও পূর্ব প্রদেশের তামিলদের বিপুল ভোটদানের ভূমিকা রহিয়াছে। যে জনাদেশ তাঁহাকে এই ভাবে জয়ী করিয়াছে, তাঁহার কাছে তাহার কিছু প্রত্যাশাও আছে। তিনি সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্রতী।
ভারতের পক্ষে এই সদর্থক ঘটনাবলির দুই ধরনের সার্থকতা রহিয়াছে। এক, ভারতে বসবাসকারী এক লক্ষ তামিল শরণার্থীর শ্রীলঙ্কায় প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হইতে পারে। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হইয়াছে। দ্বিতীয়ত, ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষ রূপে চিনের প্রবেশ যে কৃষ্ণমেঘের সঞ্চারিত, তাহা কাটিতে পারে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তাহার ইঙ্গিতও দিয়াছেন। নয়াদিল্লির সখ্যই যে তাঁহার অগ্রাধিকার, তাহা গোপন করেন নাই। ভারতকে এই সুযোগ কাজে লাগাইতে তৎপর হইতে হইবে। দুই দেশের মৈত্রী নিবিড় হইলে পক প্রণালীতে মাছ ধরিতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের গ্রেফতারি সংক্রান্ত সমস্যাটিও অনেক সহজে মীমাংসা করা সম্ভব, তামিলনাড়ুর সহিত রাজনৈতিক কাজিয়ার ক্ষেত্রও তাহাতে সঙ্কুচিত হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy