Advertisement
E-Paper

স্বভাব

মহারাষ্ট্র পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না। মুম্বইয়ে একাধিক গণধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পরে এই অভিযোগ উঠিয়াছে। অভিযোগ অসংগত নয়, কারণ পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধর্ষণের মামলার বিচার চলিতেছে এবং চলিতেছে, দ্রুত নিষ্পত্তি বিরল ব্যাপার। অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে এক রাজ্যের সহিত অন্য রাজ্যের তুলনা করা হইয়া থাকে, ইহা স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক নিয়মেই এ ক্ষেত্রেও প্রশ্নটি উঠিয়াছে: মহারাষ্ট্র পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কোনও একটি ক্ষেত্রে সীমিত নহে।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০০:২০

মহারাষ্ট্র পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না। মুম্বইয়ে একাধিক গণধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পরে এই অভিযোগ উঠিয়াছে। অভিযোগ অসংগত নয়, কারণ পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধর্ষণের মামলার বিচার চলিতেছে এবং চলিতেছে, দ্রুত নিষ্পত্তি বিরল ব্যাপার। অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে এক রাজ্যের সহিত অন্য রাজ্যের তুলনা করা হইয়া থাকে, ইহা স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক নিয়মেই এ ক্ষেত্রেও প্রশ্নটি উঠিয়াছে: মহারাষ্ট্র পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কোনও একটি ক্ষেত্রে সীমিত নহে। এক দিকে রহিয়াছে প্রশাসনের তৎপরতার অভাব। পার্ক স্ট্রিট বা কামদুনি তাহার দৃষ্টান্তমাত্র। সাধারণ ভাবেই এ রাজ্যে অপরাধের তদন্ত বিলম্বিত লয়ে চলে। চার্জশিট তৈয়ারি করিতে অস্বাভাবিক বেশি সময় কাটিয়া যায়। তাহার পরেও সমস্যার শেষ হয় না— চার্জশিট যথার্থ ভাবে তৈয়ারি না হইবার দৃষ্টান্ত বিরল নহে, কখনও বা তদন্তের ভার অন্য কাহারও হাতে তুলিয়া দেওয়া আবশ্যক হইয়া পড়ে, তাহার পরিণামে মামলা আরও বিলম্বিত হয়। এই ব্যাধি নূতন নয়, পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকারের জমানাতেও ইহা বিলক্ষণ প্রচলিত ছিল, সে জন্য প্রশাসনের কর্তাদের বহু বার আদালতের তিরস্কারও শুনিতে হইয়াছে।

পাশাপাশি, বিচারব্যবস্থাও অনেক সময়েই যথেষ্ট দ্রুত কাজ করিতে পারে না, মামলা উঠিবার সময় হইতে তাহার নিষ্পত্তির সময় অবধি অস্বাভাবিক দীর্ঘ কাল কাটিয়া যায়। কেন এই বিলম্ব, সেই প্রশ্নের অনেকগুলি উত্তর। এক, যথেষ্ট আদালতের অভাব। দুই, আদালতে যথেষ্ট পরিকাঠামো এবং বিচারকের অভাব। কেবল পরিমাণগত অভাব নয়, গুণগত উৎকর্ষ লইয়াও প্রশ্ন তুলিবার কারণ আছে। তিন, আদালতের কাজকর্মে নানা কারণে বিপুল অবকাশ ও ছেদ থাকিবার ফলে বিচারের জন্য বরাদ্দ প্রকৃত সময়ের অভাব। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট নামক বিশেষ বন্দোবস্ত করিয়া এই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা গোটা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও করা হইয়াছে। দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ডের উত্তরপর্বে ধর্ষণের মামলার বিচারে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ব্যবহার বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করিয়াছে। কিন্তু মূল সমস্যাগুলি দূর হয় নাই। নামে ‘ফাস্ট’ হইলেই আদালত ও তাহার বিচার দ্রুতগামী হইবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নাই।

প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থা, কাহার জন্য মামলায় কতটা বিলম্ব হয়, তাহার বিচার অপেক্ষা অনেক বেশি জরুরি সমস্যার মূলটি নজর করা। পশ্চিমবঙ্গে যে কোনও কাজই বিলম্বিত লয়ে চলে। দীর্ঘ দিন ধরিয়া এই লয়টিতে বাঙালি অভ্যস্ত হইয়াছে। গতির মহিমা এমনই। যেখানে দ্রুত কাজ হয়, দ্রুত কাজ হওয়াই সেখানে স্বাভাবিক বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। যেখানে কাজের গতি ধীর, সেখানে ওই ধীরগতিই স্বাভাবিক বিবেচিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি এই দ্বিতীয় গোত্রে অভ্যস্ত হইয়াছে। ‘আজ নহে, কাল’— এই বাক্যটি এই রাজ্যে সর্বাধিক পরিচিত বাক্য বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। আদালতে যে পরিমাণ অবকাশ যাপিত হইয়া থাকে, তাহার পিছনেও এই মানসিকতা কার্যকর। প্রশাসন যে তদন্তের কাজে গড়িমসি করে, তাহাও অনেক সময়েই এই স্বভাবসিদ্ধ দীর্ঘসূত্রিতার প্রকাশ। তাহার সহিত অবশ্যই অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অন্য ধরনের ব্যাধি যুক্ত হইয়া থাকে, কিন্তু কাজ না করিবার সামগ্রিক পরিমণ্ডলে সেই ব্যাধিগুলিও উৎসাহিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে গতি আনিতে উদ্যোগী হইয়াছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হইয়াছেন। অপরাধের তদন্তের কাজে গতি বাড়াইবার জন্য তিনি উদ্যোগী হউন। আদালতের কাজ অন্তত প্রশাসনের গাফিলতিতে বিলম্বিত না হয়, তাহা নিশ্চিত করুন। তাহা হইলে পশ্চিমবঙ্গও পারিবে। কাল না হোক, পরশু।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy