Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

প্রশ্রয়ের ফলপ্রশ্রয়ের ফল

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১২

প্রশ্রয়ের ফল

শব্দের তাণ্ডব ও পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ প্রসঙ্গে বলি, দীর্ঘ দিনের রোগ যন্ত্রণাকে শুধুই পেন কিলার দিয়ে ম্যানেজ করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ১৯৯৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দ-দূষণ বা মাইকের ব্যবহার নিয়ে খুব সুনির্দিষ্ট একটি রায় দেন। পরের বছর তিনি শব্দবাজির ব্যবহার নিয়েও প্রায় একই রকম একটি রায় দেন। কিন্তু মুশকিল হল, শব্দদূষণ নিয়ে এই সব নিষেধাজ্ঞা কলকাতা পুলিশ এলাকায় বলবৎ হয়, বাদবাকি রাজ্য পড়ে থাকে সেই একই অবস্থায়। শব্দবাজি নিয়ে রায় দেওয়া হয় যে বছর, সেই ১৯৯৭-তে শেওড়াফুলিতে প্রচণ্ড শব্দবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হন এলাকার দুধ-ব্যবসায়ী তরুণ দীপক দাস। ২০১০ সালে মহালয়ার সকালে রাতভর বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করে খুন হন আমাদেরই এক প্রৌঢ়া সহনাগরিক বকুল অধিকারী। হালিসহরে অশোকনগরে মাইকের দুঃশব্দের প্রতিবাদ করায় পাথর দিয়ে থেঁতলে থেঁতলে খুন করা হয় পিন্টু বিশ্বাসকে। ২০১৩ সালে এখন পর্যন্ত রাজ্যের সাত জন শব্দ-শহিদের মধ্যে সাত জনেরই ঠিকানা রাজ্য পুলিশ এলাকায়। সমগ্র রাজ্যকে দুঃশব্দের অতলে অন্ধকারে রেখে দিয়ে শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকার সাফল্যকে তুলে ধরলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে আজ।

এই পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে গত তিন চার বছরে। দুর্গাপুজোকে টেক্কা দিয়ে গণেশ পুজোয় টানা চার দিন ধরে মাইক বাজছে পাড়ায় পাড়ায়। সাম্প্রতিকতম সংযোজন হল রক্তদান ইত্যাদি ঘিরে স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে এলাকার প্রখ্যাত সমাজসেবীদের নির্লজ্জ রাজনৈতিক আত্মপ্রচার চোঙা সহযোগে। আর অবশ্যই ডিজে কালচার ও লুঙ্গি ড্যান্স, যা মহামারীর আকার নিতে চলেছে।

সবুজ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-৩১

ভরসা

শিলিগুড়ি মহিলা কলেজের তিন এস এফ আই সমর্থক আহত অবস্থায় নার্সিংহোম থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে এসে ছাত্রসংসদের নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা করেছেন (১৬-১)। খবরটা তাৎপর্যপূর্ণ।

রাজ্যের বামপন্থীদের সম্পর্কে নিরপেক্ষ মূল্যায়নের প্রচেষ্টা, কমই হয়েছে। দক্ষিণপন্থী ও অতিবামপন্থীরা ক্রমাগত তাদের ‘দানবায়ন’ করেছেন এবং ঘৃণার রাজনীতিকে পরিপুষ্ট করেছেন। সততা ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে, এমনকী তাঁদের দুঃসময়েও যে বামপন্থীরা অন্যান্য দলের থেকে বহু এগিয়ে ছিলেন এই সহজ সত্যের স্বীকৃতিটুকু দিতেও সমালোচকরা কুণ্ঠিত ছিলেন। এর দ্বারা অবশ্য যা কিছু গুরুতর দোষের অধিকারী তাঁরা ছিলেন এবং এখনও আছেন— তার কোনও লাঘব ঘটে না। সেগুলি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের যে ঘাটতিটি দোষ বলে বিবেচিত হয় না অথচ যা তাঁদের সমূহ সর্বনাশের কারণ সেটিই আজ প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত। সেটা আর কিছুই না— সৃষ্টিশীলতার অভাব। এর অভাবেই চেপে বসে মৌলবাদী বাতাবরণ। এমনকী, আমরা আজকে যাকে বৃদ্ধতন্ত্র বলছি, তার আধিপত্যের পিছনেও এই ঘাটতিই দায়ী।

অথচ শিলিগুড়ির ওই তিন ছাত্রী প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বামপন্থার যে বিরাট উত্তরাধিকার এই রাজ্যের আছে সেখান থেকে সাহস আর আদর্শবাদ শব্দদুটো এখনও উবে যায়নি। কিছু দিন আগে ভিন্ন প্রসঙ্গে একই কথা প্রমাণ করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্রী গীতশ্রী সরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসনের পোঁ ধরা অথবা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের শিকার হওয়া ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক পরিসর পড়ে আছে, সে কথা ভাবতে ভাল লাগে। একই সঙ্গে আশঙ্কা হয় সঠিক পরিচর্যার অভাবে সম্ভাবনার এই ফুলগুলি অচিরে শুকিয়ে যাবে কি না। কারণ, যে রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠনের সদস্য এ সব নতুন যৌবনের দূত, সেই দলটি সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ১০০ বছর আগে রাশিয়ায় প্রযোজ্য তথাকথিত বৈপ্লবিক নীতিসমূহ অনুসরণ করে। প্রশ্ন তুললে ধীমান তরুণরা পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। ছাত্র তথা তরুণ প্রজন্মই তো মুক্ত চিন্তার বাহক হবেন। সেটাকে বাধা দিলেই গড়ে ওঠে অচলায়তন, তারই ফল বৃদ্ধতন্ত্র। অর্থাৎ এমন মানসিকতা যা নতুন চিন্তাকে সন্দেহ করে এবং এখানেই তা পার্টিগত মৌলবাদের সঙ্গে খাপে খাপে মিলে যায়।

সন্দীপন মজুমদার।বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

editorial letter anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy