কলিকাতায় ট্যাক্সিচালকের দ্বারা রূঢ় ভাবে (নিতান্ত কপালের জোর থাকিলে অবশ্য ভদ্র আচরণও মিলিয়া থাকে) প্রত্যাখ্যাত হইবার যে নিয়তি শহরবাসী মানিয়াই লইয়াছেন, পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র তাহা বদলাইতে বদ্ধপরিকর। প্রথম দফায় তিনি হাজার তিনেক ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সি নামাইয়াছিলেন। একটি আশা সমেত এই শ্বেত-নীল-বাহনের চালকদের দেখিয়া পীতবর্ণ যানের চালকরাও শিখিবেন, কী ভাবে যাত্রীর গন্তব্যে যাইতে সম্মত হইতে হয়। দ্বিতীয় দফায় তিনি জানাইয়াছেন, সাদা হউক বা হলুদ, সকল ট্যাক্সিই অতঃপর ‘নো রিফিউজাল’ হইল। সমস্যা হইল, মদন মিত্র গ্রেশামস ল’ পড়েন নাই। পড়িলে বুঝিতেন, মন্দ ট্যাক্সি সর্বদাই ভাল ট্যাক্সিকে দূর করিয়া দেয়। সত্যই এক বর্ণের ট্যাক্সিচালক অন্য বর্ণের চালকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়াছেন, তবে মন্ত্রীর আশার সম্পূর্ণ বিপরীত ক্রমে। হলুদ ট্যাক্সি তো বটেই, সাদা ট্যাক্সির চালকরাও গোঁফের ফাঁকে মুচকি হাসিয়া বলিতেছেন, যাইব না যাহা পারেন, করিয়া লউন। দৃশ্যতই, মন্ত্রী হইতে পুলিশ, কাহারও ভয়ে কম্পিত নহে তাঁহাদের বীর হৃদয়।
এই রকমই অবশ্য হওয়ার ছিল। মন্ত্রিমহোদয় কী বলিলেন, তাহা তখনই গুরুত্ব পাইবে যখন তাঁহার বক্তব্য বাস্তবে প্রতিফলিত হইবে। অর্থাৎ, কোনও ট্যাক্সি যাত্রী প্রত্যাখ্যান করিলে যখন সেই চালকের কঠোর শাস্তি হইবে, একমাত্র তখনই ট্যাক্সিচালকরা মন্ত্রীর কথাকে গুরুত্ব দিবেন। ট্যাক্সি বা অটোচালকদের সহিত রাজনৈতিক দলগুলির সম্পর্ক আজিকার নহে। চালকরা অভিজ্ঞতায় জানেন, মন্ত্রীরা অনেক কথাই বলিয়া থাকেন বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বার্থের সম্পর্কের জোর কথা অপেক্ষা বেশি। বর্তমান শাসকরাও সেই অনুগ্রহকারী-অনুগৃহীত সম্পর্কে বিশ্বাসী কি না, বাম আমলে প্রতিষ্ঠিত সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিটি এখনও স্বমহিমায় বহাল আছে কি না, এই প্রশ্নগুলি সবই অবান্তর। শাসকদের যে সদিচ্ছাই থাকুক না কেন, রাস্তায় এখনও তাহার ছাপ পড়ে নাই। ফলে, ট্যাক্সিচালকরা স্বভাবতই ধরিয়া লইয়াছেন, পুরাতন ব্যবস্থাই চলিতেছে। মন্ত্রীর বজ্রনির্ঘোষে ভয় পাইবার মতো কোমলমতি তাঁহারা নহেন।
অতঃপর, মদন মিত্রের কর্তব্য দুইটি। প্রথমে বুঝিয়া লউন, সত্যই কত দূর যাওয়া তাঁহার পক্ষে সম্ভব। আশা, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার হাল ফিরাইতে যাহা করা বাঞ্ছনীয়, সেই কর্তব্য সম্পাদনে তাঁহার দলীয় নেতৃত্বের তরফে কোনও বাধা আসিবে না। সেই জল মাপিয়া লইবার পর তিনি প্রশাসনকে সক্রিয় হইতে নির্দেশ দিন। পুলিশ রাস্তায় যাত্রী-প্রত্যাখ্যানকারী ট্যাক্সিচালকদের ধরুক, তাহাদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হউক। চালকের লাইসেন্স এবং ট্যাক্সির পারমিট, উভয়ই বাতিল করা হউক। এই কাজে বিন্দুমাত্র শিথিলতার স্থান নাই। অভিজ্ঞতা বলিতেছে, শহরে অন্তত বারো আনা ট্যাক্সিচালক নিয়মিত যাত্রী প্রত্যাখ্যান করিয়া থাকেন। সকলকে শাস্তি দিতে হইবে না। দলের রং না দেখিয়াই কিছু চালকের কঠোর শাস্তি হউক এবং সেই শাস্তির কথা গণমাধ্যমে ফলাও করিয়া প্রচার করা হউক। যে কোনও সময়ে তল্লাশি হইতে পারে, এই সম্ভাবনাটিও জাগাইয়া রাখা প্রয়োজন। তাহাতেই কাজ হইবে। দুনিয়ার সব শহরের অশিষ্ট ট্যাক্সিচালককে যখন বাগ মানানো সম্ভব হইয়াছে, কলিকাতাতেও হইবে। বামপন্থীরা কাজটি করিতে চাহেন নাই, পারেনও নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করুন, তিনি সত্যই পরিবর্তনের কান্ডারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy