Advertisement
E-Paper

হয়তো

অতঃপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলিবেন? বিশ্বাসঘাতক? মীরা পাণ্ডের সহিত আইনি লড়াইয়ে পরাভূত হইয়া মুখ্যমন্ত্রী স্থির করিয়াছিলেন, আর আইএএস অফিসার নহে। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের পদে, সমস্ত প্রথা ভাঙিয়া, তিনি সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়কে নিয়োগ করিয়াছিলেন। তিনি ডব্লিউবিসিএস অফিসার ছিলেন।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

অতঃপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলিবেন? বিশ্বাসঘাতক? মীরা পাণ্ডের সহিত আইনি লড়াইয়ে পরাভূত হইয়া মুখ্যমন্ত্রী স্থির করিয়াছিলেন, আর আইএএস অফিসার নহে। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের পদে, সমস্ত প্রথা ভাঙিয়া, তিনি সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়কে নিয়োগ করিয়াছিলেন। তিনি ডব্লিউবিসিএস অফিসার ছিলেন।অনুমান করা চলে, বঙ্গেশ্বরী আশা করিয়াছিলেন, শ্রীউপাধ্যায় তাঁহার মতে মত মিলাইয়া কৃতজ্ঞতার ঋণ চুকাইবেন। ছয়টি পুরসভার নির্বাচন স্থগিত রাখিবার প্রস্তাব করিয়া মুখ্যমন্ত্রী সেই ঋণের প্রথম কিস্তিটি দাবি করিয়াছিলেন মাত্র। কিন্তু, সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় জানাইয়া দিয়াছেন, রাজ্যের এই প্রস্তাব আইনত গ্রাহ্য হইতে পারে না। নির্বাচন যথাসময়েই করিতে হইবে। তাঁহার স্বহস্তে বাছিয়া লওয়া নির্বাচন কমিশনারের এহেন সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী আহত হইতেই পারেন। কিন্তু সুশান্তরঞ্জনবাবুর এই ঋজুতায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এক বিরল আশার আলো দেখিবেন। তিনি এই পদের পক্ষে যথেষ্ট অভিজ্ঞ কি না, সেই প্রশ্ন বেশ জোরালো ভাবেই ছিল। কিন্তু, তিনি প্রথম সুযোগেই প্রমাণ করিলেন, তিনি নিজেকে পদের যোগ্য করিতে পারিয়াছেন। সংবিধানের নিকট, দেশের নিকট, প্রতিষ্ঠানের নিকট নিজের দায়বদ্ধতাকে তিনি রাজনৈতিক আনুগত্যের বিনিময়ে বিকাইয়া দিতে চাহেন নাই।

তৃণমূল কংগ্রেস কী ভাবে এই রাজ্যটি চালাইতে চাহে, নির্বাচন পিছাইবার আবদার তাহার আরও একটি উদাহরণ। রাজ্য সরকার যে ছয়টি পুরসভার নির্বাচন পিছাইবার দাবি করিয়াছে, তাহার মধ্যে চারটি আসানসোল অঞ্চলে, এবং অন্য দুইটি কলিকাতার উপকণ্ঠে। অঞ্চলগুলিতে শাসক দলের হাল ভাল নহে। কালীঘাট সম্ভবত আশঙ্কিত, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হইলে মুখ্যমন্ত্রীকে আরও এক দফা ‘মিরাক্ল’-এর পথ চাহিয়া থাকিতে হইবে। রাজনৈতিক ভাবে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার মতো জোর সারদা-কণ্টকিত দলের আছে কি না, সম্ভবত সে বিষয়েও সংশয় আছে। অতএব, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শনই শ্রেষ্ঠ পন্থা রূপে বিবেচিত হইতেছে। কালীঘাটের নিকট নতজানু পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের তরফে যে কোনও বাধা আসিতে পারে, বঙ্গেশ্বরী সম্ভবত ভাবিতেও পারেন নাই। কারণ, এত দিন এই রাজ্যের পুলিশ তাঁহার দলের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর কাজ করিয়াছে, প্রশাসন দলের দোষ ঢাকিতে ব্যস্ত হইয়াছে। এমনকী, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা সোয়াইন ফ্লু-র প্রকৃত ছবি ঢাকিতেও প্রশাসনের উত্‌সাহের অভাব ছিল না বলিয়া অভিযোগ। নির্বাচন কমিশন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত আরও নিশ্চিন্ত ছিলেন, কারণ সেখানে তিনি ‘নিজের লোক’ বসাইয়াই রাখিয়াছিলেন। শ্রীউপাধ্যায় যে মেরুদণ্ডের প্রমাণ দিয়াছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাহা নিতান্তই বিরল। এবং, সেই কারণেই আইনকে তোয়াক্কা না করা শাসকদের স্বভাব হইয়া উঠিয়াছে।

এই আকালেও যে সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের ন্যায় প্রশাসকরা পশ্চিমবঙ্গে আছেন, এবং প্রয়োজনে তাঁহারা নবান্নের উচ্চতম কক্ষের অন্যায় আবদারও সপাটে প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন, ইহাই পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে একমাত্র সুসংবাদ। তাঁহাদের মেরুদণ্ডের জোরই সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ভরসা। কারণ, শত চাপ আর প্রলোভনেও তাঁহারা নিজেদের কর্তব্য ভুলিয়া যান নাই। তাঁহারা বিস্মৃত হন নাই যে তাঁহাদের দায়বদ্ধতা শাসকের প্রতি নহে, দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি। যে আমলারা, যে পুলিশকর্তারা নিজেদের মেরুদণ্ডগুলি বঙ্গেশ্বরীর মন্দিরে ভেট দিয়াছেন, তাঁহাদেরও হয়তো সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়দের দেখিয়া নিজেদের কর্তব্যের কথা স্মরণে আসিবে। হয়তো এমন আত্মমর্যাদাহীন অস্তিত্বে বিবমিষা হইবে, এবং তাঁহারা ন্যায়ের পথে ফিরিবেন। রাজনীতি যে রাজ্যকে মারিয়াছে, প্রশাসনই হয়তো তাহার রক্ষাকর্তা হইয়া উঠিবে। হয়তো।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy