চৌমণ্ডলপুর, ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা গেলে হাঁসড়া। জমজমাট বাজারটার মধ্যে দিয়ে কয়েকটা বাঁক ঘুরেই দিগন্ত ছোঁয়া ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে এঁকে বেঁকে রাস্তাটা চলে গিয়েছে মাখড়ার দিকে। বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকার এই সবক’টা গ্রামই খবরের শিরোনামে ছিল বছর দেড়েক আগেও। বোমা-বন্দুক নিয়ে গ্রাম দখলের লড়াই শুরু হয়েছিল তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে। সে সময় রোজ রক্তে ভিজত পাড়ুই-এর মাটি। মাঝেমধ্যেই রাস্তায় পড়ে থাকত লাশ। মৃতদেহ তুলতে আসার সাহসও হত না পরিজনদের। মাখড়া, হাঁসড়া, চৌমণ্ডলপুরে আপাতদৃষ্টিতে এখন শান্তি। কিন্তু ভোট মিটলেই আবার তপ্ত হতে পারে গোটা এলাকা।
জরাজীর্ণ গ্রামটাতে ঢুকলেই বোঝা যায় মাখড়া একটা নেই-রাজ্য। বাসিন্দাদের আর্থিক হালও নিদারুণ। গরম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফি বছর বাড়ে জলের কষ্ট। এ বছর সেই কষ্ট আরও বেশি। গ্রামে যতগুলো টিউবওয়েল, সবক’টা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সারাই হচ্ছে না। গ্রামবাসীরা বলছেন, কল খারাপ মাঝেমধ্যে হয়। পঞ্চায়েত আবার তা সারানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু ২০১৪ সালের শেষ দিক থেকে মাখড়ায় আর কোনও কাজ করছে না পঞ্চায়েত। অভিযোগ তেমনই।
কিন্তু কারণ কী? মাখড়াবাসীরা বলছেন, ২০১৪-র অক্টোবরে তৌসিফ শেখকে গুলি করে খুন করার পর থেকে গোটা গ্রাম এককাট্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সবাই এখন বিজেপি’র ছাতার তলায়। মৃত তৌসিফের এক প্রতিবেশী জানালেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আর চন্দ্রনাথ সিংহ (স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী) এক বারের জন্যও প্রচারে আসেননি মাখড়ায়। কারণ ওঁরা জানেন, মাখড়ায় ঢুকেও কোনও লাভ নেই। ভোট মিলবে না। উল্টে মার খেতে হবে পারে।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘চন্দ্রনাথ সিংহের লোকজন এখন হুমকি দিচ্ছে। তৃণমূল যদি ভোট না পায়, মাখড়ায় কোনও টিউবওয়েল সারাবে না পঞ্চায়েত। গ্রামবাসীরা পারলে নিজেদের খরচে সারিয়ে নিক। না হলে জল না খেয়ে মরুক।’’