আব্দুল মান্নান, মহম্মদ সেলিম এবং নওসাদ সিদ্দিকীদের উপস্থিতিতে সংযুক্ত মোর্চার বৈঠক। —ফাইল চিত্র
বাম, কংগ্রেস এবং নবগঠিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে (আইএসএফ) মিলিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গড়ে তোলায় প্রত্যক্ষ কারিগর ছিলেন তাঁরা। আসন ভাগাভাগির দীর্ঘ বৈঠক তাঁরাই করতেন নিয়মিত। আবার ভোটের ময়দানেও মোর্চার সেনাপতি হিসেবে সামনে তাঁরাই। সেই আব্দুল মান্নান, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, নওসাদ সিদ্দিকীদের পরীক্ষা আজ, শনিবার চতুর্থ দফার ভোটে।
দু’বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের হিসেব ধরলে এঁদের সকলের জন্যই ‘কঠিন’ পরীক্ষা। বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মান্নান, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সেলিম, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন বা আইএসএফের চেয়ারম্যান নওসাদ— প্রত্যেককেই লড়াই শুরু করতে হচ্ছে পিছিয়ে থেকে। চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, যাদবপুর বা ভাঙড়, লোকসভা ভোটের অঙ্কে এই সব আসনেই এগিয়ে তৃণমূল। সেলিম এবং নওসাদ অবশ্য আগে চণ্ডীতলা ও ভাঙড়ে প্রার্থী ছিলেন না। সে ক্ষেত্রে অচেনা মাঠে কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে তাঁদের!
ভোটের প্রাক্কালে মোর্চার নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, সুষ্ঠু ও অবাধে মানুষ রায় দিতে পারলে ফল তাঁদের পক্ষেই যাবে। শেষ বেলায় নিজেদের কেন্দ্রে ‘দুর্বল’ জায়গায় নজরদারি করেছেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা নির্বাচনী হিংসা নিয়েই। চণ্ডীতলা থেকে ফিরে শুক্রবার আলিমুদ্দিনে সেলিম বলেছেন, ‘‘প্রথম তিন পর্বের ভোটে হিংসা ছড়িয়েছে। প্রার্থীরা আক্রান্ত হয়েছেন, ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান-সহ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার কথা ছেড়ে বিজেপি ও তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা যা বলছেন, তাতে আরও প্ররোচনা ছড়াচ্ছে। যারা আগে তৃণমূলের হয়ে গণ্ডগোল করত, তারাই এখন ভাগাভাগি করে তৃণমূল ও বিজেপির পক্ষে সেই কাজ করছে। আশা করব, কমিশনের শীর্ষ থেকে নিচু তলা কাল সক্রিয় হবে!’’ তাঁর অভিযোগ, রায়গঞ্জে লোকসভা ভোটের দিন তাঁর গাড়িতে হামলার সময়ে কমিশনের পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দু’ঘণ্টা যোগাযোগ করা যায়নি। হিংসা বন্ধের দাবিতে আজ মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (সিইও) দফতরে ধর্নাতেও বসেছিলেন মোর্চার প্রতিনিধিরা।
মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি প্রচুর টাকা খরচ করছে। আমাদের হয়ে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা প্রাণ দিয়ে খাটছেন। মানুষ নিজেদের ভোট বিনা বাধায় দিতে পারলে ফল সংযুক্ত মোর্চার পক্ষেই যাবে।’’ একই সুর নওসাদেরও। আইএসএফের তরুণ মুখ নওসাদের দাবি, ‘‘গত ১০ বছর ভাঙড়ে বহু মানুষ নিজেদের ভোট দিতে পারেননি। এখন গণ-প্রতিরোধের চেহারা কেমন হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সারা রাত ভাঙড় থানা ঘেরাওয়ে সেটা দেখা গিয়েছে। আমরা চাই, মানুষ যেন নিজেদের ভোটটা দিতে পারেন। তা হলেই ভাঙড়ের ফল উল্টে যাবে।’’ লোকসভা নির্বাচনে ভাঙড়ে এক লক্ষ ১০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল!
এরই সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের বলে যাওয়া ‘অ্যান্টি-রোমিয়ো স্কোয়াড’কে হাতিয়ার করে বাংলার মানুষকে ‘বিপদ’ বোঝাচ্ছেন মোর্চার নেতারা। সুজনবাবু বলছেন, ‘‘অ্যান্টি-করাপশন বা অ্যান্টি-আনএমপ্লয়মেন্ট স্কোয়াডের কথা বললে মানুষ শুনতেন। তা না করে অ্যান্টি-রোমিয়ো স্কোয়াডের নামে আসলে মানুষের স্বাধীনতার উপরে ছড়ি ঘোরাতে চান বিজেপি নেতারা।’’ একই সুর বালির সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরেরও। দলের প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক পদ্মনিধি ধরের নাতনি এবং জেএনইউ-এর ছাত্র সংগঠনের নেত্রী দীপ্সিতার লড়াইয়ে এ বার আশা রাখছে সিপিএম। দীপ্সিতা, সেলিমেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভিন্ রাজ্যে তরুণ-তরুণীদের উপরে ‘করনি সেনা’, ‘রাম সেনা’ বা বজরং দলের তাণ্ডবের কথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy