—ফাইল চিত্র।
ভোটের জন্য আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাংশ বিজেপির পক্ষে কাজ করতে পারে বলে সরাসরি আঙুল তুললেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই মন্তব্য, রাজ্য পুলিশের উপরে তাঁর আস্থা রয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে মহিলাদের ‘আত্মমর্যাদা লুট’ করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা।
ইভিএম-এ কারচুপির আশঙ্কা এবং স্ট্রংরুমের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুদিন ধরেই বলে যাচ্ছেন মমতা। সোমবার বাঁকুড়া তিনটি সভাতেই সে প্রসঙ্গে বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ইন্দাসে বলেন, ‘‘ভোট হয়ে গেলেও ভোট-বাক্স পাহারা দিতে হবে। পুলিশ যদি বলে, দাদা চলে যান, আপনি তো আমায় চেনেন, আমি পাহারা দিয়ে দিচ্ছি— কোনও দরকার নেই। দিল্লিরও অনেক পুলিশ আসবে, এখানকারও পুলিশ থাকবে। অনেকে বিজেপির হয়েও কাজ করবে। আমাদের পুলিশের উপরে পুরো ভরসা রয়েছে।’’ তবুও কর্মীদের তিনি মনে করিয়ে দেন, ভোট বাক্স রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁদের।
ভোটগ্রহণের দিন থেকে স্ট্রংরুম পাহারা দেওয়া পর্যন্ত দলের এজেন্টদের মমতা চারটি নিয়ম মেনে চলতে নির্দেশ দেন। ভোট শুরুর আগে ইভিএম পরীক্ষা, ভিভিপ্যাটে নজর রাখা থেকে ভোট-বাক্স পাহারায় নজরদারিতে যাতে ফাঁক না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘‘ভোট-বাক্স রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার। এক মাস। বিরিয়ানি দিলেও খাবেন না। চা দিলেও নয়। জলটাও বাড়ি থেকে নিয়ে যাবেন। কিছু মিশিয়ে দেবে। যেই ঘুমিয়ে পড়বেন, ভোট লুট করে নিয়ে চলে যাবে। হয় বাড়ি থেকে ভাত-ডাল নিয়ে যাবেন। অথবা নেতারা কর্মীদের
জন্য খাবার রান্না করে দেবেন। কিন্তু লোভ করা যাবে না।’’ মমতার মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য অধুনা বিজেপিতে যাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বাঁকুড়ায় দাবি করেন, ‘‘২০১৯ সালে তিনি অন্য অজুহাত দিয়েছিলেন। এ বার আগে থেকেই তিনি জেনে গিয়েছেন, হারবেন। তাই এখন থেকেই ইভিএমের গল্প বানাচ্ছেন।’’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন বড়জোড়ায়। তিনি বলেন, ‘‘এ বার কিন্তু আমরা নজর রাখছি। এমনকী অনেক দলের এজেন্টদেরও কেনে। আমি সবার দিকে নজর রাখছি। টাকা নিয়ে এ বার যদি কেউ ভোট করেন, তা হলে আমার থেকে বড় শত্রু তার আর কেউ হবে না।’’
এ দিনও তিনি বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএম ‘ডিল’ করেছে বলে অভিযোগ তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএম ও কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে ডিল করেছে। ওদের ডিলটাকে খিল মেরে দিন।’’ বামপন্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভোটটা বিজেপিকে না দিয়ে তৃণমূলকে দিন। এটা অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।’’
বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতায় এলে বহিরাগত গুন্ডারা পোশাক থেকে খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, বাড়ি-জমির সঙ্গে মহিলাদের আত্মমর্যাদাও লুট করবে বলে সরব হন মমতা। এমনকী ধর্মাচরণও নিয়ন্ত্রণ করবে বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের দেবতা দখল করে নেবে। দখল করে বলবে, মারাংবুরুর পুজো করা চলবে না, আমরা যা বলছি তাই করবে হবে। মা দুর্গার পুজো করা চলবে না, ওরা যা বলবে, তাই করতে হবে। এটা হতে পারে না।’’
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘দুর্গাপুজো, মহরম ইত্যাদি রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তৃণমূলের জন্যই। রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি তৃণমূলই আমদানি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যতই এই ধরনের অভিযোগ করবেন, বিজেপির ভোটের হার ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে।’’
বড়জোড়ার উল্টোদিকে দামোদর নদের অন্য পাড়ে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল। বড়জোড়ার সভাস্থল থেকে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে টালিগঞ্জের প্রার্থী করা নিয়ে কটাক্ষ শোনা গিয়েছে মমতার মুখে। তিনি বলেন, ‘‘হায় হায় এ কী হল। আসানসোল থেকে পালিয়ে গেলি? মানে বুঝুন, এমপি-ও হবে, এমএলএ-ও হবে, কাউন্সিলরও হবে, পঞ্চায়েতও হবে, দিল্লিও যাবে, গুন্ডামিও করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy