Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
SFI

Bengal Polls: প্রত্যাবর্তন! এসএফআই প্রচারে ‘সহজ পাঠ’

যখন বাম আমলের একেবারে গোড়ার পর্বে ১৯৮০তে ‘সহজ পাঠ’কে পাঠ্য বই হিসেবে স্কুলের ক্লাসঘর থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন! প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে অনেককেই।

ভোটবঙ্গে এ ভাবে সে ফিরে আসবে, এমন অন্তত সহজে আঁচ করা যায়নি।

গত লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে অমিত শাহের রোড-শোয়ের সময়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলে ফেলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিখ্যাত কীর্তি সহজ পাঠ’-এর কথা! সেই ভুলে নিন্দা কম হয়নি। এ বার অবশ্য সহজ পাঠ লেখকের নাম নিয়ে প্রমাদ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সহজ পাঠের আঙ্গিকটি ব্যবহার করে নন্দলাল বসুর আঁকা ছবিগুলি এঁকে নতুন ছড়া বসিয়েছে এসএফআই। সেই সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার হয়ে ভোটও চাওয়া হচ্ছে।

এখানেও ফের ঝিলিক দিচ্ছে পুরনো ইতিহাস। যখন বাম আমলের একেবারে গোড়ার পর্বে ১৯৮০তে ‘সহজ পাঠ’কে পাঠ্য বই হিসেবে স্কুলের ক্লাসঘর থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে বাঙালির ভাবাবেগ আহত হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, ২০২১ সালের তরুণ বাম ছাত্রছাত্রীদের এই সহজ পাঠ অনুরাগের পিছনে কি এক রকম অতীত সংশোধনের মন কাজ করছে?

বাম সরকারের সহজ পাঠ নিয়ে সিদ্ধান্তটিতে ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়, মার্কসবাদী পণ্ডিত সুশোভন সরকার, জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাক্তন অধিকর্তা রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, নাট্যকর্মী তৃপ্তি মিত্র, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, সাহিত্যিক গোপাল হালদার প্রমুখ অনেকেই প্রতিবাদে সরব হন। ১৯৩০এ প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট শিশুপাঠ্য বইটি অবশ্য পাঠ্যক্রমে ঢুকেই ছিল ১৯৭০ নাগাদ, যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে। কিন্তু বামফ্রন্টের স্কুল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে-র তৎপরতায় এবং ‘স্টেট কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’-এর সুপারিশে সহজ পাঠ তুলে দেওয়ার নেপথ্যে তা মার্কসবাদ সমাজবিপ্লব বা শ্রেণিসংগ্রামের অন্তরায় বলেই ধরা হয়েছিল। গণপ্রতিবাদে অবশ্য পিছু হটে বামফ্রন্ট সরকার। ‘এত রবীন্দ্র উপাসকের ছড়াছড়ি’ বলে তির্যক মন্তব্য করেও সিদ্ধান্ত বদলান তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তবে পরে রবীন্দ্রনাথের বইটি আকারে ছোট করে সহযোগী গ্রন্থ হিসেবে সিলেবাসে রাখা হয়। ২০১১য় বাম জমানার পরিবর্তনের পরে তৃণমূল সরকার বইটি বাধ্যতামূলক পাঠ্য হিসেবে ফিরিয়ে এনেছে।

রাজ্যে সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের মতে, “সহজপাঠে জাত, লিঙ্গ ইত্যাদির ধারণা নিয়ে আপত্তিতে নানা কল্পনা ছিল। অনেকে ভেবেছিলেন, বইটি শ্রেণি বিভাজন নিয়ে ততটা সজাগ নয়।” এখন স্কুলের প্রথম
এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে সহজ পাঠ পড়তেই হয়। ভোট-প্রচারের সূত্রে যাঁরা সহজ পাঠকে ফিরিয়ে আনলেন সেই বাম ছাত্রেরা অবশ্য ইতিহাস প্রসঙ্গ এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন না।

এসএফআই-এর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটির সভাপতি সুনেত্রা সমাজপতি বলছেন, “মোদ্দা কথাটা আমরা সহজ কথাগুলো সহজে বলতে চাইছি। তাই ছড়া লেখা হয়েছে। নন্দলালের ছবিগুলো অনুকরণ করে এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা। প্রচারের সহজ আকর্ষক ভাষা খোঁজাই আসল।” মাল্যবান গঙ্গোপাধ্যায়, সম্পৃক্তা বসু, অঙ্কিতা ঘোষ, অদ্বিতীয়া মাইতি, গুঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়দের চেষ্টায় চেনা সহজ পাঠের ছবিতে গরুর দুধে সোনা তত্ত্ব, কৃষি আইনের প্রতিবাদ, সুন্দরবনে কংক্রিটের বাঁধের দাবি বা রাজ্যে চাকরির আকালের কথা উঠে আসছে। একটি ছড়া বলছে, ‘বিজেপি গাছ হলে তৃণমূল পাতা /দেখে ত-থ-দ-ধ’র ঘেঁটে গেছে মাথা’ ! দীপ্সিতা ধর বা সৃজন ভট্টাচার্যের মতো এসএফআই নেতানেত্রীরাও এ ভোটে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী। ফলে, প্রচারেও বাড়তি আবেগ। এই প্রচারে মোর্চার এ বার লাভ ততটা হবে বলে অবশ্য মনে করেন না শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, “এটা হয়তো সহজ পাঠ নিয়ে বামেদের উলটপুরাণ! কিন্তু আকথা, কুকথার বাইরে সৃজনশীল প্রচারের এই চেষ্টা আমার ভাল লাগছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

election campaign SFI Sahaj Path
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE