শোক: আমতলির মাঠে চারটি দেহ আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন পড়শিরা। রবিবার। শীতলখুচিতে। নিজস্ব চিত্র।
অপেক্ষাটা সেই সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল। স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠে একটু একটু করে ভিড়ও জমতে শুরু করেছে তখন। তারপর বেলা এগারোটা নাগাদ অবসান হল অপেক্ষার। চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চার যুবকে নিথর দেহ পৌঁছাল মাঠে। ততক্ষণে অবশ্য সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে গিয়েছে। তারপরও শ্মশানের অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা গ্রাস করে রেখেছে গোটা এলাকাকে।
অথচ, মাত্র চব্বিশঘণ্টা আগেই শীতলখুচির এই আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিস্থিতি ছিল একেবারে আলাদা। নির্বাচনকে ঘিরে শনিবার বেলা গড়াতে না গড়াতেই রক্তাক্ত হয়েছে এই এলাকা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে হারাতে হয়েছে তরতাজা চারটি প্রাণকে। ফলে উত্তেজনায় কেঁপেছে গোটা এলাকা। কিন্তু রবিবারের সেখানকার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। থমথমে পরিবেশ। উত্তেজনা একটা রয়েছে, কিন্তু তা কেমন যেন একটু চাপা। তবে নিহতদের পরিজনদের মনে দানা বেঁধে রয়েছে চরম ক্ষোভ। একটু চাপা স্বরে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটছে। তবে ওইটুকুই। তার বাইরে কোনও কোলাহল কিংবা সামান্য রাজনৈতিক স্লোগানেরও লেশমাত্র নেই সেখানে।
এভাবেই মিনিট চল্লিশের মতো সময় শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠেই শায়িত থাকল হামিদুল মিয়াঁ, ছামিউল হক, মনিরুজ্জামান মিয়াঁ ও নুর আলম হোসেনের দেহ। এক-এক করে তাঁদের শ্রদ্ধা জানালেন অনেকে। তারপর দেহ নিয়ে শুরু হল শোক মিছিল। বলা চলে মৌনী মিছিল। মিছিলে কালো ব্যাজ পরে বহু মানুষ শামিল হন। পুরভাগে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের নেতারা।
কিন্তু মাঠ থেকে কিছুটা দূরে বাড়ির কাছে দেহ সমেত মিছিল পৌঁছাতেই ভাঙল নিস্তব্ধতা। কান্নার রোল ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। তারমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নিন্দায় সরব হন অনেকে। ঘটনায় জড়িত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কড়া শাস্তিরও দাবি ওঠে। নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলেন অনেকে।
রবিবার এই চার যুবকের বাড়িতে আসবেন বলে শনিবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেজন্যই শনিবার ময়নাতদন্তের পর দেহগুলিকে মাথাভাঙা হাসপাতালের পুলিশ মর্গেই রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে ৭২ঘণ্টা কোচবিহারে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা ঢুকতে পারবেন না বলে কমিশনের তরফে জানান হয়। ফলে এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়কে ভিডিয়ো কল করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ভিডিয়ো কলের মাধ্যমেই নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর পরই তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব পৌঁছে যান হাসপাতাল মর্গে। সেখানে দলীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয় দেহগুলি। তারপর আমতলির দিকে রওনা হয় অ্যাম্বুল্যান্স।
আমতলি মাঠ থেকে মিছিল শেষে বাড়িতে কিছুক্ষণ দেহগুলি রাখা হয়। তারপর বাড়ির কাছেই দেহগুলি সমাধিস্থ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy