Advertisement
১১ মে ২০২৪

পার্নোর সংসার

বদলে গিয়েছেন পার্নো মিত্র। বাবার স্মৃতি, সংসার সামলে এ যেন এক পরিপূর্ণ নারী। তাঁর মনে অনেক জমানো কথা। শুনলেন সংযুক্তা বসুবদলে গিয়েছেন পার্নো মিত্র। বাবার স্মৃতি, সংসার সামলে এ যেন এক পরিপূর্ণ নারী। তাঁর মনে অনেক জমানো কথা। শুনলেন সংযুক্তা বসু

‘অপুর পাঁচালি’তে পরমব্রত আর পার্নো

‘অপুর পাঁচালি’তে পরমব্রত আর পার্নো

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ২২:৩৪
Share: Save:

আর ক’দিন বাদে তো আপনাকে নিয়ে হইহই পড়ে যাবে শোনা যাচ্ছে....

কেন? কী হল?

পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘অপুর পাঁচালি’ রিলিজ করতে চলেছে। আর সেখানে নাকি আপনার দুর্দান্ত অভিনয়! কেউ কেউ বলছেন।

দেখুন ‘অপুর পাঁচালি’তে আমি যেন নিজেকে নতুন করে চিনলাম। তখন বাবা বেঁচে। জানতাম না জীবন কী কঠিন। সেই সময়কার সরলতা, মিষ্টত্ব দিয়ে অসীমাকে পোর্ট্রে করতে চেষ্টা করেছি বলেই হয়তো যাঁরা দেখেছেন তাঁদের ভাল লেগেছে। ছবিতে আমি, পরম (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), মানে অপুর স্ত্রী অসীমা। বাংলার গ্রামের খুব সাধারণ এক মেয়ে বা বৌ। সাধারণ জীবন। তবু যে ভাবে কৌশিকদা চিত্রনাট্য পড়ার সময় বর্ণনা দিয়েছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল অসীমা সাধারণ এক গ্রামের মেয়ে হয়েও কোথাও যেন অসাধারণ। কোথাও সে আলাদা।

বাবা মারা যাবার পরে ছবির শু্যটিং হলে অসুবিধে হত?

প্রবল শোক নিয়ে আমি অসীমার মিষ্টত্ব, সরলতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে পারতাম না হয়তো। বিষণ্ণতার ছাপ থাকত হয়তো অভিনয়ে। এখন সেই তুলনায় আমি অনেকটা কম্পোজড। এখন অভিনয়ের মুডটা আবার এসে গিয়েছে।

আপনার যে একটা মফস্সল শহরের মেয়ের লুক আছে এটা আপনি জানতেন?

না ভাবিনি কখনও। কিন্তু ‘অপুর পাঁচালি’ করতে গিয়ে কৌশিকদা প্রথম ভাবালেন। যখন ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ করেছি, মনে হয়েছিল আমার মধ্যে এক রঞ্জনা আছে। আবার যখন ‘বেডরুম’য়ের রীতিকা, ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড’য়ের রিয়া করেছি, তখনও তাদের সঙ্গে নিজের মিল পেয়েছি। এবং যখন অসীমা করলাম, তখন মনে হল, আরে আমি যতই শহুরে লাইফস্টাইলে বড় হই না কেন, আমার মধ্যেও একটা গ্রাম্য সরলতা আছে। ইনোসেন্স আছে। তবে কী, মাঝে মাঝেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ‘অপুর পাঁচালি’ দেখতে পেলে বাবা হয়তো বলতেন, “আই অ্যাম প্রাউড অব মাই ডার্লিং ডটার!’ মিস করব। খুব মিস করব। (বিষণ্ণ হাসি)

বাবা-মেয়ের সম্পর্কটাই যে আলাদা। ঠিক দেখবেন কোথাও দাঁড়িয়ে উনি আপনাকে আশীর্বাদ করছেন।

বলছেন? হয়তো তাই। এ ভাবে ভাবতে ভাল লাগে। তবে মা তো আছেন। তিনিও আমার আশ্রয় আর শক্তি।

একটা কথা মনে হয়, ‘রঞ্জনা’ এত হিট হল। জাতীয় পুরস্কার পেল। কিন্তু মিডিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ল না কেন?

যোগাযোগের জন্য অ্যাটাচমেন্ট দরকার। নিজের পরিবার, কিছু আত্মীয়-পরিজন, পুরনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। অভিনয় চালিয়ে যাওয়াটাই আসল।

অভিনয়ে ইন্টারেস্টটা এল কী ভাবে? আপনি ইংরেজিতে অনার্স গ্র্যাজুয়েট। তার পর মাস্টার্স, পিএইচডি কত অন্য রকম কিছু হতে পারত তো...

আমাদের বাড়ির সকলেই প্রায় এই রকমই সব বিভিন্ন পেশায় উঁচু পদে আছেন। কিন্তু আমার মনে হত অভিনয় করব। হঠাৎ করেই একদিন দেখা করি রবি ওঝার সঙ্গে। ওঁর ‘খেলা’ সিরিয়াল দিয়ে শুরু হল অভিনয়। একটা টেলিফিল্মে কাজ করতে গিয়েই অঞ্জন দত্তের সঙ্গে প্রথম দেখা। উনি সাঙ্ঘাতিক ঝুঁকি নিতে জানেন। তা না হলে আমার মতো আনকোরা অভিনেত্রীকে নেন!

অঞ্জন দত্ত কি আপনার গডফাদার?

গডফাদার নন। কিন্তু অসম্ভব শ্রদ্ধা আছে। কারণ উনি খুব ক্যাজুয়াল। যে কোনও বয়সের মানুষের সঙ্গেই পছন্দ হলে নিজের ভাবনাচিন্তা শেয়ার করতে পারেন।

প্রেমেটেমে পড়েছেন কোনও দিন অঞ্জন দত্তের?

না। পড়িনি। আর অঞ্জনদাও তো প্রেমে পড়েন বলে মনে হয় না। যখন থেকে দেখছি, মেয়েদের সঙ্গে কোনও রকম বাড়াবাড়ি দেখাননি। তবে হ্যাঁ, ওঁর মধ্যে যে-উদাসীনতা আছে সেটা পুরুষদের একটা এক্স ফ্যাক্টর যেটা অনেক মেয়েরই ভাল লাগতে পারে।

আর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়? তিনি আপনার জীবনে কোন ভূমিকায়?

অসম্ভব ভালবাসার আশ্রয়। মানুষকে প্রাণ খুলে ভালবাসতে পারেন। উনি সব সময় পাশে থাকার মানুষ। আর এত সহজ বা স্পনটেনিয়াস ভাবে কথা বলতে আমি খুব কম মানুষকে দেখেছি। আর পরিচালক হিসেবে যে অসাধারণ, সেটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। উনি যে আমার মধ্যে অসীমাকে খুঁজে পেয়েছেন সেটাই সব চেয়ে বড় পাওয়া। তবে ফ্রেন্ড ফিলজফার গাইড বলতে যদি কেউ থাকে তো সে আবীর (চট্টোপাধ্যায়)। ওর সঙ্গে আমার বহু দিনের সম্পর্ক। আমাদের পারিবারিক বন্ধু। বাবা খুব পছন্দ করতেন ওকে। মাও ভালবাসেন।

মৈনাক ভৌমিকের বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। মৈনাকের সঙ্গে কেমিস্ট্রিটা?

সব চেয়ে কাছের বন্ধু। যেহেতু আমার সমবয়সি। শুধু মৈনাক নয়, রাইমা, পায়েল, ভেবলি ( স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) সকলেই বন্ধু।

নায়িকাদের তো কোনও নায়িকা বন্ধু হয় বলে শোনা যায় না। রাইমা সেন কেমন বন্ধু? গোয়ায় ‘অপুর পাঁচালি’ দেখে কাউকে খুনসুটি করে বলেছিলেন “এই প্রথম কোনও হিরোইনকে দেখে হিংসে হচ্ছে।”

রাইমা সব সময়ই এই রকম মজা করে। আমাকে সত্যি খুব ভালবাসে। বাবা মারা যাওয়ার পর আরও অনেকের মতো রাইমাও আমার পাশে ছিল। আর খারাপ সময়ে যারা পাশে থাকে, তারা তো বন্ধুই। রাইমা আমাকেও তো বলেছিল, ‘‘তুই তো বলেছিলি খুব অল্প কাজ তোর ‘অপুর পাঁচালি’তে। কিন্তু তুই যেটা করেছিস সেটা সাঙ্ঘাতিক। ছোটখাটো ব্যাপার মোটেই নয়।” রাইমা এখন খুব ভাল কাজ করছে। এখনকার নায়িকাদের মধ্যে সত্যি বন্ধুত্ব হয়। পায়েলও আমার বন্ধু। সামনাসামনি সব সময় দেখা না হলেও ফোনে প্রচুর আড্ডা হয়। মনে হয় আগেকার দিনে বোধ হয় সেটা হত না।

মানে এখন প্রতিযোগিতার কোনও ব্যাপারই নেই।

নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সংকীর্ণতা নেই। প্রতিযোগিতা তো নিজের সঙ্গে। এই যে অসীমা করলাম, তাকে ছাপিয়ে গিয়ে আরও ভাল কোনও অভিনয় দেখানোর মধ্যেই তো আসল চ্যালেঞ্জ।

‘খাদ’ ছবিতে অভিনয় করলেন না। পারিশ্রমিকে পোষায়নি বা পারিবারিক ভাবে এতটাই ব্যস্ত যে লম্বা আউটডোরে যেতে রাজি ছিলেন না। এই রকম দুটো কারণ শোনা গিয়েছিল। বেশ বিভ্রান্তিকর!

দেখুন, যে কাজটা করিনি তা নিয়ে কোনও কথাই আমি বলতে চাই না। আর পারিশ্রমিকে পোষাল না বলে কাজ ছেড়ে দেব এমন মেয়ে আমি নই। সংসারের সব দায়িত্ব বুঝে নিতে হচ্ছিল। মা অসুস্থ ছিলেন। বোন বয়সে ছোট। আমি তো ওই প্রথম সংসার করা শুরু করলাম।

অঞ্জন দত্ত একদিন বলেছিলেন শিল্পী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে তেমন ভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। যদিও আপনি খুব ট্যালেন্টেড।

দেখুন যখন যেটা ঘটার সেটা ঘটবে। কিছুতেই আটকাবে না। তা না হলে অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়), পরম (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), ভেবলি ওঁরা সবাই নিজেকে প্রমাণ করে আজ বলিউডে। অন্য রাজ্যের লোকজন যখন বাংলার প্রতিভাকে চিনতে পারছে, এখানকার প্রযোজক পরিচালকদেরও সেটা চেনা উচিত। কলকাতায় এই রকম প্রতিভা কিন্তু অনেক। তাঁদের সত্যিই চেনা দরকার।

ইন্ডাস্ট্রির একাংশ কিন্তু বলে, আপনার যখন পারিশ্রমিকে পোষায় না,তখন বাড়ির ব্যস্ততার অজুহাতে কাজ ছেড়ে দেন।

একদম বাজে কথা। ইন্ডাস্ট্রি কি আমার মনের অবস্থা বুঝবে? এখন মনের জোর ফিরে পাচ্ছি। কাজ করতে পারব। বাস্তব পরিস্থিতিটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। সমস্ত সংসারের দায়িত্ব আমার। সেটা কি বাইরের লোক বুঝবে? আমি আশাও করি না তারা বুঝবে।

কিন্তু নায়িকাও তো হতে হবে। এই যে কপালের ওপর একটা ফুসকুুড়ি। এটা কেমন বেমানান না? ত্বকের যত্ন নেন?

না, পার্লারে গিয়ে তেমন কিছু একটা করি না। ভেরি রেয়ার। বাড়িতে ক্লিনজিং-টোনিং করি।

না, মানে আপনি সে অর্থে ডাকসাইটে সুন্দরী তো নন। স্মার্ট, অ্যাট্রাকটিভ। স্ক্রিন প্রেজেন্সটা ঝকঝকে রাখতে হবে তো!

কে বলল আমি সুন্দরী নই? আমি আমার মতো করে সুন্দরী। আমার আয়না তো তাই বলে। এবং এ ব্যাপারে আমি খুব কনফিডেন্ট।

কোনও বয়ফ্রেন্ড বলেছে?

না। নিজে জানি। দেখুন বয়ফ্রেন্ড বলল কি বলল না, ব্যাপারটা ব্যক্তিগত। ইন্টারভিউয়ে বলার সময় আসেনি। যেটা বলার তা হল, এখন আমি সংসার করছি।

বিয়ে না করেই...

যার যে রকম ভাগ্য! প্র্যাকটিস হয়ে যাচ্ছে। পরে অসুবিধে হবে না। অভিনয়টা দাঁড়িয়ে থাকবে সংসারেরই ওপর। এবং এই অভিজ্ঞতা আমার অভিনয়কে আরও সমৃদ্ধ করবে। সব কিছুরই একটা ভাল দিক থাকে।

হাতে আপাতত কী কাজ?

এই মুহূর্তে কিছু নেই। কিন্তু এসে যাবে। শোক না ভুললে সামনে এগোনো যায় না। এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করার আশায় অপেক্ষা করছি, যা বাবার শোক ভুলিয়ে দেবে।

অভিনয়টাই যখন সম্পদ, সেটা শেখার জন্য কী কী করছেন?

বহু আগে মুম্বইতে বীণা মেহতার ওয়ার্কশপে অভিনয়ের ক্লাস করেছিলাম। ইচ্ছে ছিল নিউ ইয়র্কের ফিল্ম স্কুলে যাওয়ার। হয়নি। প্রচুর ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখি। কত অজানা অভিনেত্রীর অভিনয় থেকেও কত রকম কত কী শিখি। স্মিতা পাটিল থেকে কঙ্গনা রানাওত, মেরিল স্ট্রিপ থেকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সবার কাছেই কিছু না কিছু শেখার আছে। আর আমার ইচ্ছেগুলোও তো খুব অদ্ভুত, জানেন...

কী রকম?

যেমন ‘শব্দ’ দেখে মনে হয়েছিল যদি তারকের রোলটা পেতাম! শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঘুণপোকা’ পড়ে মনে হল ইশশ্ উপন্যাসের নায়ক শ্যামের রোলটা যদি আমি করতাম! এই রকম কত উদ্ভট ইচ্ছে....

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE