‘হাওয়া’ ছবিতে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছবি সংগৃহীত।
কয়েক দিন আগেই এক ঘরোয়া আড্ডায় পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ফেস্টিভ্যালে এত ভিড় হল! হলে মুক্তি পেলে কত ব্যবসা করত বলুন তো? এতে তো ছবিটার ক্ষতি হল!” চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত বাংলাদেশের বহুলচর্চিত ছবি ‘হাওয়া’র প্রযোজকেরাও নিশ্চয়ই সেই ধরনের চিন্তাভাবনাই করছিলেন। কারণ, এ বারে এ পার বাংলায় মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি। কলকাতায় সদ্যসমাপ্ত চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিকে ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনার সাক্ষী থেকেছে শহর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নন্দনের বাইরে ছবিটা দেখার জন্য লাইনে অপেক্ষা করেছেন এ পার বাংলার দর্শক। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছে কর্তব্যরত পুলিশকে। ছবি ঘিরে দর্শকের প্রত্যাশা মেটাতে ছবির প্রদর্শন সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন উৎসব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরেও অগুনতি দর্শক ছবিটা দেখতে পাননি বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। এ বার অপেক্ষার পালা শেষ। আরও এক বার শহরের হাওয়া উত্তপ্ত করতে হাজির হচ্ছে বাংলাদেশের এই ছবি।
সব ঠিক থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ছবিটি এ রাজ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা। ছবিটির পরিবেশক ‘রিলায়্যান্স’। বুধবার সংস্থার তরফে জে কে রায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ছবিটা এখানে মুক্তি পাচ্ছে। বিগত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।” ছবির সেন্সর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও সার্টিফিকেট পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবেশক সংস্থা। তা হলে ক’টা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বহুলচর্চিত এই ছবি? জে কে’র কথায়, ‘‘সবটাই আগামী সপ্তাহের শুরুতে বুঝতে পারব।’’
প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তার এক দিন পরেই শহরে মুক্তি পাচ্ছে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’। ইন্ডাস্ট্রির একাংশ মনে করছে, ওই সময়ে শহরে ছবি দেখার একটা ঝোঁক থাকেই। প্রযোজক বিষয়টি মাথায় রেখেই ছবি মুক্তির এই কৌশল নিয়েছেন। উল্লেখ্য, আগামী বছর বাংলাদেশ সরকার এই ছবিকে দেশের হয়ে অস্কারে পাঠাচ্ছে। কলকাতায় ‘হাওয়া’কে কেন্দ্র করে প্রেক্ষাগৃহে কতটা ভিড় হয় সে দিকে অবশ্যই নজর থাকবে ইন্ডাস্ট্রির। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি দেখার ভিড় দেখে অনেক নিন্দকরা বলেছিলেন, “বিনামূল্যে দেখার সুযোগ বলেই এত হিড়িক!” সেটা আদৌ সত্যি কি না, প্রমাণ হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।
ইন্ডাস্ট্রির একাংশের আবার বাংলার দর্শকের প্রতি এক ধরনের অনুযোগও ছিল যে, এমন উত্তেজনার কিছুটা যদি এ পার বাংলার ছবি নিয়েও থাকত, তা হলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেক উপকার হত। এ ধরনের মন্তব্যকে প্রশংসা হিসাবে নেন, না কি তা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে ছবির কলাকুশলীর কাছে? আনন্দবাজার অনলাইনের এই প্রশ্নের উত্তরে চঞ্চল বললেন, “এটা আমার কাছে যেমন গর্বের বিষয়, তেমনই দুশ্চিন্তারও। আমাদের দুই দেশের কাজের মধ্যেই কিছু জটিলতা, কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের এখন উচিত ওই সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝে সেগুলো কাটিয়ে ওঠা। যেমন আমরা যতই মুখে বলি, আমাদের ওখানে এখনও পেশাদার ইন্ডাস্ট্রি হয়নি। একটা কাজ পেশাদার ভাবে করতে যতটা টেকনিক্যাল সাপোর্ট লাগে, ততটা পাই না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাল কাজ করার চেষ্টা করি। কলকাতায় অনেক বেশি পেশাদার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সীমাবদ্ধতাগুলো ঠিক করে আইডেন্টিফাই করে সে ভাবে যদি গল্প নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো ঠিক করা হয়, তা হলে নিশ্চয়ই সমস্যা অনেকটা মিটবে। দেখুন, এখানে যা কাজ হয় বা বাংলাদেশে যা হয়, দর্শক কিন্তু এক। এখানকার লোকে ওখানকার কাজ দেখেন, ওখানেও তাই। আবার বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালি সব কাজই দেখছেন। তাই এগুলো কোনও ব্যাপার নয়।”
শহরে ‘হাওয়া’ মুক্তি পাচ্ছে জেনে আশায় বুক বেঁধেছেন হল মালিকরা। জনৈক প্রেক্ষাগৃহ কর্তার কথায়, “এটা তো ভাল খবর। ছবিটা আমার হলেও চালানোর ইচ্ছা রয়েছে। বাংলাদেশের ছবি দেখতেও মানুষ হলে এলে সেটা তো আমাদের দুই বাংলারই জয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy