Advertisement
১১ মে ২০২৪

ওস্তাদের মার শেষ মাসে

বছরের শেষ দিনে সিকন্দর তিনিই। আমিরের নেপথ্যের সেই নায়ক রাজকুমার হিরানি-র মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।গোটা ব্যাপারটাই ওস্তাদের মার শেষ মাসের পর‌্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর, বলিউডের নামীদামি স্টারেরা একশো-দেড়শো কোটি নিয়ে কথা বলেন, জঘন্য ছবি বানিয়েও ক্রমাগত টুইট করেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিডিয়াতে হাজারো ইন্টারভিউ দেন। কিন্তু ২০০৯-এ ‘থ্রি ইডিয়টস’য়ের পর আবার ২০১৪-য় ‘পিকে’ দিয়ে সবার শেষে খেলতে নেমে, কোনও বাড়তি কথা না বলে, অনায়াসে ডবল সেঞ্চুরি করে ফেলল টিম ‘পিকে’।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

গোটা ব্যাপারটাই ওস্তাদের মার শেষ মাসের পর‌্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

সারা বছর, বলিউডের নামীদামি স্টারেরা একশো-দেড়শো কোটি নিয়ে কথা বলেন, জঘন্য ছবি বানিয়েও ক্রমাগত টুইট করেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিডিয়াতে হাজারো ইন্টারভিউ দেন। কিন্তু ২০০৯-এ ‘থ্রি ইডিয়টস’য়ের পর আবার ২০১৪-য় ‘পিকে’ দিয়ে সবার শেষে খেলতে নেমে, কোনও বাড়তি কথা না বলে, অনায়াসে ডবল সেঞ্চুরি করে ফেলল টিম ‘পিকে’।

সেই টিমের ক্যাপ্টেনের বয়স ৫২। বলিউডের অনেকেই তাঁকে সবচেয়ে সাহসী পরিচালক বলেন, কারণ গাঁধী থেকে মানুষের ধর্ম— বিতর্কিত বিষয় নিয়ে হাসতে হাসতে তিনি একটার পর একটা হিট ছবি বানিয়ে চলেন।

আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-র সকালে দাঁড়িয়ে শোনা যাচ্ছে, ‘পিকে’ ছবির বক্স অফিস কালেকশন অলরেডি ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ছবির লাইফটাইম কালেকশন ৩০০ কোটি টাকার আশেপাশে পৌঁছবে যা বলিউডের সর্বকালীন রেকর্ড।

তাঁর টিমে একজন সচিন তেন্ডুলকর নিশ্চয়ই আছেন আমির খান। এবং শোনা যায় আমির খানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বহু মানুষেরই ঈর্ষার কারণ।

তাঁর টিমের স্টার প্লেয়ারের মতোই তিনি খুব কম ইন্টারভিউ দেন, কারণে অকারণে অন্যকে গালমন্দ করেন না এবং হেডলাইনে চমক দেওয়াতে একেবারেই বিশ্বাসী নন।

সোমবার বিকেলে গাড়িতে তাঁর সব ক’টি ছবির চিত্রনাট্যকার অভিজাত জোশী এবং সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্রের সঙ্গে এক বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার পথে কথা বললেন আজকের বলিউডের এক নম্বর পরিচালক —

রাজু আপনি কি সিন্ধি?

(একটু ইতস্তত হয়ে) হ্যাঁ। সিন্ধি তো...

কিন্তু বলিউডে সিন্ধিদের সব স্টিরিওটাইপ তো আপনি বলে বলে ভেঙে দিচ্ছেন। না আপনি টাকার পিছনে ছোটেন, না লোক ঠকান...

(পেছন থেকে সমস্বরে হেসে ওঠেন শান্তনু ও অভিজাত) হা হা হা। হ্যাঁ সিন্ধিদের স্টিরিওটাইপগুলো জানি। কিন্তু সবাই কি আর এক রকম হয় বলুন...

বাঙালি দর্শকেরা কিন্তু হাঁ করে সেই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ থেকে আপনার ছবি দেখছে। তার বাইরে বলিউডের এক নম্বর পরিচালকের ব্যাপারে তারা কিছু জানেই না...

(হেসে) আমি সিম্পল ম্যান। কোনও কালে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার কী আমার পরিবারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ভাবিওনি কোনও দিন ডিরেক্টর হব। নাগপুরে জন্ম। হিসলপ কলেজ থেকে পড়াশোনা করে একদিন বাবাকে বলি আমি এফটিআইআই পুণেতে ভর্তি হব...

‘থ্রি ইডিয়টস’য়ের সেই পরীক্ষিত্‌ সাহানি আর মাধবনের সিনটা নাকি আপনার নাগপুরের বিজয়নগরের বাড়িতেও ঘটেছিল?

পুরো সিনটাই তো আমার জীবন থেকে নেওয়া। ভয়ে ভয়ে বাবাকে গিয়ে বললাম। বাবা রেগেও গিয়েছিলেন। তারপর দু’বার ডিরেকশন কোর্সের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলাম না। তখন কয়েকজন বলল, ‘তুই এডিটিং কোর্সের পরীক্ষা দে, ওই কোর্সটা সহজ।’ তখনও পর্যন্ত জানতামই না এডিটিং কী... ভর্তি হয়ে গেলাম। (হাসি)

সেই থেকে আজ বাহান্ন বছর বয়সে পৌঁছে এমন ফিল্মোগ্রাফি বানালেন যেখানে ছবির নামগুলো যথাক্রমে: ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘লগে রহো মুন্নাভাই’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ আর ‘পিকে’। কোনও ফ্লপ নেই।

কিন্তু আমি অত প্ল্যানিং করে কিছু করি না। আমার ধারণা খুব বেশি ক্যালকুলেটিভ হলে ভগবান আপনার ক্যালকুলেশন গুলিয়ে দেন। আমি নিজের আনন্দে ছবি বানাই। একটা সেট টিমের সঙ্গে কাজ করি যেখানে বিধুজি আছেন, অভিজাত আছে, শান্তনু আছে। অত টেকনিকাল দিক নিয়ে ভাবি না, তবে স্ক্রিপ্টের পিছনে প্রচুর সময় দিই। আর শ্যুটিংয়ে যাওয়ার আগে একটাই ব্যাপার মাথায় রাখি, ছবিটা যেন সব ধরনের মানুষের ভাল লাগে।

শুনেছি আপনার বাবা আপনার জীবনে বিরাট ইনফ্লুয়েন্স?

হ্যাঁ। আমার ছবির নানা মুহূর্ত, নানা ডায়লগ আমার বাবার কাছ থেকে নেওয়া। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’য়ে সেই চুরির সিনটা, ‘থ্রি ইডিয়টস্‌’য়ের সিনটা যেটা আগে বললেন, ‘পিকে’ ছবিতে সেকেন্ড হাফে অনুষ্কার রং নম্বরের সিনটা সব ক’টাই বাবার কাছ থেকে নেওয়া।

আচ্ছা, আপনার সব ছবিতে একটা গুডনেস এলিমেন্ট থাকে। যেখানে হাসপাতালের জমাদারকে নায়ক বুকে টেনে নেয়, বুড়ো মানুষদের জন্য সেকেন্ড ইনিংস হোম থাকে, ন্যাশনাল ভোকাবুলারিতে গাঁধীগিরি শব্দটা চলে আসে — এত সহজে এগুলো করেন কী করে?

দেখুন কোনওটাই ফোর্সড নয়। আমি গুডনেস দেখাব বলে তো ছবি বানাই না। বানাই এটা ভেবে যে, এমন একটা ছবি বানাব যা পুরো ফ্যামিলির ভাল লাগবে। আর একটা কথা বলব, এর পিছনে আমার স্ক্রিপ্ট রাইটার অভিজাত জোশীর বিরাট হাত রয়েছে। ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা দারুণ। আমাদের দু’জনের কাছেই দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলো খুব ইম্পর্ট্যান্ট। দু’জনেই ছোট শহর থেকে এসেছি বলে হয়তো মূল্যবোধগুলো একটু আলাদা। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইমোশনস্‌, সাধারণ মানুষের কষ্ট— এই ব্যাপারগুলো আমাদের দু’জনকেই নাড়া দেয়। সেইগুলোই ছবিতে রাখি।

একটু ‘পিকে’র প্রসঙ্গে আসি।

‘পিকে’ কি আপনার বানানো সব চেয়ে কঠিন ছবি?

ইউ আর রাইট। সব চেয়ে কঠিন ছবি। তার কারণ আপনি যে ছবিগুলোর নাম বললেন, স্পেশালি ‘থ্রি ইডিয়টস’, সেখানে পপুলার সেন্টিমেন্টস অনেক বেশি ছিল।

হাসপাতালের প্রবলেম আমরা সবাই ফেস করেছি, কম বেশি হলেও এডুকেশন সিস্টেমের ভুলের শিকার আমরা সবাই, গাঁধীজি নিয়ে ছবিটাও রিস্কি ছিল কিন্তু অতটা নয়।

কিন্তু আমাদের দেশটা এমন, এখানে যদি আপনি বলেন ধর্ম নিয়ে, মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছবি করব, দেখবেন প্রোডিউসর ভয় পেয়ে যাবে, এক্সিবিটরের জ্বর আসবে।

তাই ‘পিকে’ বানানোর সময় আমাদের অনেকগুলো ব্যাপার খেয়াল রাখতে হয়েছিল। একটু এদিক ওদিক হলেই লোকে বলত জ্ঞান দিচ্ছি ফালতু। একটু বেশি রসিকতা করলেই লোকে রেগে যেত। কারও সেন্টিমেন্টে আঘাত দেওয়াটা তো আমাদের কাজ নয়, কিন্তু সমাজের সামনে একটা আয়না ধরাটা অবশ্যই আমাদের রেসপন্সিবিলিটি। আর আমাদের দেশে মেসেজ দেওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে হাসানো। হাসাতে হাসাতে যদি আপনি একটা মেসেজ দিতে পারেন, দেখবেন মানুষ সেটা মনে রেখেছে। তবে হ্যাঁ, ‘পিকে’ ওয়াজ আ টাইটরোপ ওয়াক।

কিন্তু সবাইকে তো খুশি করতে পারলেন না। আমদাবাদে ‘পিকে’ ব্যান করতে চাইছে একটা সংগঠন। তারা বলছে আপনারা ধর্ম নিয়ে মজা করেছেন। শিব ঠাকুরকে বাথরুমে আটকে রেখেছেন, তাঁকে চেয়ারের তলায় হামাগুড়ি দিতে দেখিয়েছেন...

এগুলো ভীষণ আনফরচুনেট। ছবিতে কিন্তু স্পষ্ট দেখানো হয়েছে ওই চরিত্রটা একটা নাটকে শিব ঠাকুরের রোলে অভিনয় করছে। উনি শিব ঠাকুর এটা কোথাও বলা হয়নি। আমরা প্রথম থেকেই কেয়ারফুল ছিলাম, কোনও ধর্মকেই আঘাত দেওয়া আমাদের উদেশ্য ছিল না। তাও জানি না কেন এই রকম কনট্রোভার্সি হল!

আমিরের সঙ্গে কথা হয়েছে এই নিয়ে?

হ্যাঁ, অবশ্যই হয়েছে।

অনেকে এটাও বলছে, আমির খান কেন মজা করল হিন্দু ধর্ম নিয়ে?

ছবিতে তো কোনও একটা ধর্ম নিয়ে কমেন্ট নেই। সব ধর্ম নিয়েই নানা মেসেজ আছে। আর যেটা ভীষণ দুঃখের, এগুলো যারা বলছে, তারা জানেই না মুম্বইয়ের সব থেকে ভাল দিওয়ালি পার্টিটা কিন্তু আমির খানের বাড়িতেই হয়। আমি গত পাঁচ বছর ধরে ওখানে যাই। এই তো সেদিন আমির আর আমি আড্ডা মারছিলাম। কিরণের ফোন এল। কিরণ বলল, ওর আসতে একটু দেরি হবে, কারণ ছেলের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে এসেছে। আমাদের কারও মধ্যেই ধর্ম নিয়ে ছুঁত্‌মার্গ নেই। কাউকে দেখে আমরা ভাবিও না এ হিন্দু ও মুসলমান। তাই এগুলো যারা বলছে তাদের জন্য খারাপই লাগে।

বিতর্ক তো শুধু ছবি রিলিজের পর হয়নি। কনট্রোভার্সি তো আমিরের প্রথম ন্যুড পোস্টার থেকেই হয়েছিল।

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। আমি অত ক্যালকুলেটিভ নই। আমার একবারও মনে হয়নি প্রথম পোস্টারটা নিয়ে এই রকম কনট্রোভার্সি হবে। সিনেমা রিলিজের পর একটা লোকও কিন্তু কথা বলছে না আমির খানের ন্যুড সিনটা নিয়ে।

কিন্তু আপনাকে কি বারণ করা হয়েছিল প্রথম পোস্টার হিসেবে ওটা রিলিজ না করতে?

হ্যাঁ। অনেকেই বলেছিল আমি রিস্ক নিচ্ছি। বলেছিল বিরাট ভুল করছি...

আমির কী বলেছিলেন?

আমির ওয়াজ ওকে। ওর কোনও প্রবলেম ছিল না। কিন্তু পোস্টার বেরনোর পর দেখলাম একেবারে মিক্সড রই্যাকশন আসছে। তখন একটু ভয় করেছিল বটে। এর আগে আমার ভয় করেছিল ‘লগে রহো’র সময়...

কী রকম?

যখন কিছু লোক জানল আমি গাঁধীকে নিয়ে ছবি করছি, তখন তারা কী সাঙ্ঘাতিক নেগেটিভ হয়ে গিয়েছিল আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।

কিছু লোক বলল আমার ছবি ব্যান হয়ে যাবে কারণ আমি একটা সিনে দেখিয়েছি মদ খেয়ে সার্কিট গাঁধীজির সঙ্গে কথা বলছে। তারা আমাকে বলেছিল, ‘আর ইউ ম্যাড? গাঁধীজিকে নিয়ে মজা করছ, মরবে তুমি?’

আজকে ফিরে তাকালে ভাবি ধর্ম, গাঁধী এগুলো আমাদের দেশে খুব টাচি সাবজেক্ট। তা-ও লোকের ভাল লেগে গিয়েছে যখন এই বিষয়গুলো ছবিতে এনেছি।

কিন্তু অনেকের তো ভাল লাগেওনি। ‘পিকে’ নিয়ে তো অনেক ক্রিটিসিজম হয়েছে, ছবির সেকেন্ড হাফ বহু মানুষের ভালই লাগেনি।

হ্যাঁ জানি। আমার সঙ্গে অভিজাত বসে আছে। আসলে কী হয়েছিল, ফার্স্ট হাফটা লেখার পর সেকেন্ড হাফে আমরা আটকে গিয়েছিলাম। তার পর এল ‘ইন্টারস্টেলার’। দেখলাম আমাদের সেকেন্ড হাফের সঙ্গে সাঙ্ঘাতিক মিল রয়েছে। পুরো কনফিউজড হয়ে গেলাম। দু’জন মিলে আবার লিখতে বসলাম। যে ক্রিটিকরা বলছে সেকেন্ড হাফটা উইক, তারা একদম ঠিক। আমি তাদের সঙ্গে একমত। মেনে নিচ্ছি আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু দুর্দান্ত সেকেন্ড হাফ বানাতে পারিনি।

‘ওহ্‌ মাই গড’-এর সঙ্গেও তো মিল ছিল ছবিতে?

হ্যাঁ, কয়েকটা জায়গায় ছিল।

এ সব মিল বেরিয়ে যাওয়ার জন্যই কি পাঁচ বছর লাগল ‘পিকে’ বানাতে?

হা হা হা। না, তা ঠিক নয়। কিন্তু কিছুটা দেরি তো হয়েছেই এই কারণগুলোর জন্য। তবে পাঁচ বছরটা বিরাট বাড়াবাড়ি। এত বড় গ্যাপ থাকা উচিত নয় একজন পরিচালকের দু’টো ছবির মধ্যে।

এই যে পাঁচ বছর বাদে ছবি করলেন, এই পাঁচ বছর কি রোজ স্ক্রিপ্ট লিখতেন? লোকে বলে আগের ছবিগুলো থেকে এত টাকা কামিয়েছেন যে পাঁচ বছর বাড়িতে বসে স্ক্রিপ্ট লেখার লাক্সারি দেখাতে পেরেছেন আপনি...

(হেসে) আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের কপি আপনাকে ফ্যাক্স করব? তা হলে বুঝতে পারবেন অ্যাকাউন্টে কত আছে। আসলে আমি না খুব তাড়াতাড়ি একটা ছবি থেকে বেরিয়ে অন্য ছবিতে কনসেনট্রেট করতে পারি না। একটু ধীরেসুস্থেই কাজ করতে ভালবাসি। আর আপনার কথার উত্তর দিতে গেলে বলি, এই পাঁচ বছর রোজ স্ক্রিপ্ট হয়তো লিখিনি। কিন্তু মাসে পঁচিশ দিন তো স্ক্রিপ্ট নিয়ে দিনে ৫-৬ ঘণ্টা বসেছি।

বলিউডের বাকি রাইটাররা নাকি সবাই আপনার সঙ্গে কাজ করতে অসম্ভব আগ্রহী। কারণ রাইটারকে আপনি স্টারের সমতুল্য রেম্যুনারেশন দেন?

(পিছন থেকে অভিজাতের হাসি শোনা যায়) আমি জানি না কোন স্টারের কী রেম্যুনারেশন। তবে আমি মনে করি অভিজাত জোশী আমার ছবির বড় স্টার। আরে, রাইটারকে তো সম্মান জানানোই উচিত। আমার ছবির ব্যাকবোন তো আমার রাইটার। তাকে প্যাম্পার করব না? পুরো সিনেমাটাই তো তার উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সবাই না রাইটারকে একটু হলেও নেগলেক্ট করেছি আমাদের সিনেমায়। আমি সেটা রিপিট করতে চাই না।

আচ্ছা, আপনার প্রত্যেকটা ছবিতেই একটা ক্যাচলাইন ফেমাস হয়। জাদু কী ঝাপ্পি, গেট ওয়েল সুন, আল ইজ ওয়েল, রং নম্বর— এগুলো কি কনশাসলি করেন আপনি আর অভিজাত...

দেখুন যখন স্ক্রিপ্ট লিখছি, তখন তো বুঝতে পারি না এগুলো এত ফেমাস হবে। কিন্তু এগুলো স্ক্রিপ্টের অংশ তো বটেই। সেট-এ এসে মনে হল এ রকম একটা ক্যাচ ফ্রেজ লাগবে, তা কিন্তু নয়। তবে আমরাও চমকে যাই মাঝে মধ্যে। ‘লগে রহো মুন্নাভাই’-এর শ্যুটিংয়ে ভেবেছিলাম ‘গেট ওয়েল সুন মামু’ লাইনটা বেশি ফেমাস হবে। কিন্তু হল ‘গাঁধীগিরি’। এগুলো আমাদের হাতেও থাকে না।

শোনা যাচ্ছে আপনার পরের ছবিতেও না কি আমির খান?

(হাসি) এটা তো এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এখনও স্ক্রিপ্ট লেখা চলছে...

সবাই বলে আমিরের সঙ্গে তো আপনার টিউনিং দারুণ...

হ্যাঁ, আমির ইজ এক্সট্রাঅর্ডিনারি। খুব স্পেশাল । অভিনয়, কমিটমেন্ট এগুলো ছেড়েই দিন। আমিরের সবচেয়ে ভাল দিক ওর সেন্সিটিভিটি। ও কথায় কথায় কেঁদে ফেলে। আমার মনে আছে তখন ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর স্ক্রিপ্ট শোনাচ্ছি ওকে। ওই জায়গাটা পড়ছি যেখানে রাজু হসপিটালে শুয়ে, র‌্যাঞ্চো আর ফারহান ওকে দেখছে। ন্যারেশনের সময় দেখলাম আমির সিন-টা শুনে কিছুক্ষণ কাঁদল। এর পর ট্রায়াল শো চলছে, যেই সিনটা এল দেখি রুমাল দিয়ে চোখ মুছছে আমির। আমি আড়চোখে দেখলাম অভিজাতকে। এই হচ্ছে আমির খান। অত সেন্সিটিভ অভিনেতা খুব কম আছে।

কিন্তু ‘পিকে’ ছবিটাকে তো অনেকে বলেছে ‘সত্যমেব জয়তে’র ইয়ার এন্ড এপিসোড। মাঝে মধ্যেই আমির এত জ্ঞান দিয়েছে দর্শকদের।

দেখুন এই কথাগুলো অবান্তর। এগুলো যারা বলছে তারা খুব সিনিকাল। আপনি হয়তো জানেন না, ‘সত্যমেব জয়তে’ করার সময় পুরো এনডর্সমেন্টস মার্কেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল আমির। ইচ্ছে করলেই তিনশো কোটি কামাতে পারত ওই ক’টা মাস। সেই মানুষটাকে নিয়ে যারা ও রকম কথাবার্তা বলে, তারা জানে না মানুষটা কী রকম! ওর আমার ছবির মাধ্যমে জ্ঞান দেওয়ার দরকার হবে না কোনও দিন... সেটা করার জন্য ওর বেটার প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

আপনার সব ছবিতেই তো একটা স্ট্রং সোশ্যাল মেসেজ থাকে। প্রত্যেক ছবিতেই ক্রমাগত এমন মেসেজ দিয়ে যাওয়া তো চাপের...

হ্যাঁ, ঠিকই। হয়তো আমার পরের ছবিটায় অন্য রকম কিছু দেখতে পাবেন দর্শকেরা। তবে একটা এক্সপেক্টেশন হয়ে গিয়েছে মানুষের যে রাজু হিরানির ছবি মানেই মেসেজ। আমাকে লোকে এসে বলেও, এ বার ক্যান্সার নিয়ে ছবি করুন, স্লাম ইস্যু নিয়ে কিছু বানান। কিন্তু ও ভাবে তো ছবি হয় না।

আপনার পরের ছবির বিষয় কী?

(পাশ থেকে অভিজাত ও শান্তনু চেঁচিয়ে বলেন সেক্স কমেডি) হা হা হা, ওদের ইচ্ছে আমি একটা সেক্স কমেডি বানাই... এখনও কিছুই ঠিক নয়।

সার্কিট আর মুন্না কবে ফিরবে ?

আমি তো ভীষণ ভাবে চাই ওরা ফিরুক। কিন্তু এই মুহূর্তে সঞ্জু (সঞ্জয় দত্ত) পারবে না। আর আমি হাফ হার্টেডলি কিছু করতে চাই না। মুন্না আর সার্কিটের কাছে মানুষের এক্সপেক্টেশন বিরাট। ধীরেসুস্থে এগোতে চাই।

তাড়াহুড়ো করেন না, পার্টিতে যান না, গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে বিরাট কোহলির টেকনিক নিয়ে সবজান্তা কোট দেন না, প্যাথেটিক পিআর, ট্রেড ফিগার্স নিয়ে টুইট করেন না, ফ্যামিলি হলিডের ছবি ফেসবুকে দেন না। অদ্ভুত লাগে না তাও আপনার ছবি দেশে সবচেয়ে বড় হিট হয়। তা হলে কি এই জিনিসগুলোর দরকার নেই? এটা তো বিরাট আয়রনি।

(হেসে) আমি তো অন্যদের কথা বলতে পারব না। যাঁরা করেন তাঁরা নিশ্চয়ই তার সুফল পেয়েছেন বলেই করেন। আমি একটু অন্য রকম করে জীবনে চলতে চাই। ফিল্মি ব্যাপারস্যাপার থেকে দূরে থাকতে চাই।

ভাল কাজ করে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে যেতে চাই। ভাল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে চাই। আপনি যদি নিজের জীবনটা সিম্পল রাখেন, দেখবেন পথে এমন সব সাথি পেয়ে যাচ্ছেন যারাও আপনারই মতো।

আমার জীবনে যেমন অভিজাত কী স্বনন্দ (কিরকিরে) কী শান্তনু। ওদের নিয়েই কাজ করতে চাই। চাই না নানা বিষয়ে মাথাটা করাপ্ট করতে।

আর চাই না নিজেকে সিরিয়াসলি নিতে।

শেষ প্রশ্ন। কলকাতার একটা বিরাট অংশ আপনার ফ্যান। সাধারণ দর্শক তো বটেই, এমনকী বহু পরিচালকও আপনাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করেন। তাঁদের কি কিছু টিপস দেবেন?

আমাকে দিয়ে এ সব করাবেন না। আমি একদম এগুলো পারি না... (হেসে)

এটা আপনার আনন্দবাজার পত্রিকাতে প্রথম ইন্টারভিউ। বলেই দিন না...

(হেসে) প্লিজ ভাববেন না জ্ঞান দিচ্ছি। আমি ও সব পছন্দ করি না। বলছি কারণ ইন্দ্রনীলের চাপে পড়েছি।

প্রথমেই বলব ছবির রাইটারকে যোগ্য সম্মান দিন। আপনার ছবি দাঁড়িয়ে আছে তার ওপর।

সেকেন্ড, আমরা ভারতের লোকেরা এখনও এসেনশিয়ালি খুব সিম্পল। সেই সিম্পলিসিটিটা চরিত্রদের মধ্যে রাখবেন।

থার্ড, পরিচালনার সময় দেখবেন বহু মানুষ আপনাকে নানা কথা বলে কনফিউজ করছে। তাঁদের কথা শুনবেন না। করবেন সেটাই, যেটা নিজে ঠিক মনে করেন।

ফোর্থ, জ্ঞান দিতেই পারেন নিজের ছবিতে। কিন্তু সেটার মধ্যে যেন একটা এন্টারটেনমেন্টের মোড়ক থাকে। এন্টারটেনমেন্ট ছাড়া সিনেমা বৃথা।

ফিফ্থ, এমন লোকেদের সঙ্গে মিশুন, যাঁরা আপনাকে কিছু শেখাতে পারবে। এই মানুষগুলোর সঙ্গে মিশলে আপনি জীবনটাকে অন্য ভাবে দেখতে পারবেন। শুধু গসিপ করে কী পার্টি করে আল্টিমেটলি লাভ হবে না। তার থেকে বাড়ি এসে বই পড়ে বা সিনেমা দেখলে অনেক বেশি লাভ হবে।

আর ফাইনালি, অত পিআর নিয়ে ভাবতে যাবেন না। নিজের কাজটা যদি আমরা ভাল ভাবে করি, দেখবেন ওর থেকে বড় পিআর আর কিছু হয় না। সরি, প্রচুর জ্ঞান দিলাম।

প্লিজ ক্ষমা করে দেবেন (হাসি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE