ছবিটির একটি দৃশ্য
গোলমাল এগেন
পরিচালনা: রোহিত শেট্টি
অভিনয়: অজয়, আরশাদ, তুষার, শ্রেয়স, কুণাল, পরিণীতি, তব্বু
৫.৫/১০
স্কট ফিৎজেরাল্ড বলেছিলেন, বিস্ময়সূচক চিহ্ন হল নিজের কথায় নিজে হাসার মতো। স্কট সাহেবের কথা শোনার বান্দা পরিচালক রোহিত শেট্টি নন। নির্দ্বিধায় তাই ছবির নামের পিছনে তিন-তিনটে বিস্ময়সূচক চিহ্ন জুড়ে দিয়েছেন। তবুও ‘গোলমাল এগেন’ ছবিতে পরিচালক নিজে হাসবেন না দর্শকদের হাসাবেন, এ ধোঁয়াশা মনের কোণে জমতে দেবেন না।
কারণ সে সতর্কীকরণ ছড়িয়ে রয়েছে ছবির আনাচেকানাচে। ধূমপান সংক্রান্ত বিধিসম্মত সতর্কীকরণের পরেই টাইটেল কার্ডে, ইটস আ রোহিত শেট্টি ফিল্ম। গুণিজন বলে থাকেন, বুদ্ধিমান লোকের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট। তাই সিনেমাহলে প্রবেশের পরবর্তী আড়াই ঘণ্টা নিজের কোন কোন ইন্দ্রিয় বন্ধ রাখবেন, সেটা এখনই ঠিক করে নিন।
কারণ আপনার ইন্দ্রিয়ের উপর তো অত্যাচার কম হবে না। কখনও আবহসংগীত কান ঝালাপালা করে বলবে, আমায় দ্যাখ। পর মুহূর্তেই অদ্ভুত নিয়নরঙা সেট নিজের মাসল ফুলিয়ে বলবে, আমায় দ্যাখ। এমত অবস্থায় পপকর্নে মনঃসংযোগ করাই শ্রেয়। বাকি সময়টা হাসির জন্য বরাদ্দ থাক।
‘গোলমাল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির এটা চতুর্থ ছবি। ফ্র্যা়ঞ্চাইজির নিয়ম মেনেই এ বার পিছনে ফেরার সময়। তেমনটাই করেছেন পরিচালক। ২০০৬ সালের ‘গোলমাল: ফান আনলিমিটেড’ ছবিতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গোপাল (অজয় দেবগণ), মাধব (আরশাদ ওয়ার্সি) ও লাকি (তুষার কপূর) অনাথ। দুই লক্ষ্মণও (শ্রেয়স তলপাড়ে ও কুণাল খেমু) তাই। এ ছবিতে সবাই ফেরত যায় ছোটবেলার অনাথ আশ্রমে। যে অনাথ আশ্রমের জমির উপর নজর এক কূট শিল্পপতির। তার হাত থেকে আশ্রমকে বাঁচাতে নামে দলবল। অবশ্য এক দুষ্টু-মিষ্টি ভূতও আছে, খুশি (পরিণীতি চোপড়া)। সে ভূতে অবশ্য ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। ভূত এ ক্ষেত্রে কমিক রিলিফ। গল্পের আগাপাঁশতলায় তার যোগাযোগ কম।
হিন্দি ছবির ব্যবসায় অন্যতম সফল ফ্র্যা়ঞ্চাইজি ‘গোলমাল’। নিঃসন্দেহে এ ছবিতেও ট্র্যাডিশনের ব্যত্যয় হবে না। কারণ গল্পের মাথামুণ্ডু না থাকলেও মজা আছে। জোর করে হাসানোর প্রচেষ্টা আছে। রঙিন গাড়িতে চরিত্রদের এন্ট্রি আছে। আর অবশ্যই আছে রোহিত-সুলভ চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন। তবে কেন যে কন্নুর-উটির অমন মনোরম সবুজ পাহাড়কে এডিট টেবিলে নিয়নরঙা করে দিলেন, তা দেবা ন জানন্তি। অনেক সময় সিনেমার দৃশ্য দেখে কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে হয়। এ ছবি দেখলে উল্টোটা মনে হতে বাধ্য।
শুধু তাই নয়। একই সংলাপের বারবার ব্যবহারে মজা নষ্ট হওয়ার খাদের কিনারেও ঘোরাঘুরি করেছেন সংলাপলেখক সাজিদ-ফারহাদ। তব্বু অভিনীত অ্যানা ম্যাথু বহু বার বলল, ‘জব গড কী মর্জি হোতি হ্যায়, তব লজিক নহি, স্রেফ ম্যাজিক হোতা হ্যায়’। রোহিতের ছবির এর থেকে ভাল ট্যাগলাইন আর কী-ই বা হতে পারে! যদিও খাদে পড়েনি ছবিটা। বাঁচিয়ে দিয়েছেন অভিনেতারা। সাধারণ সংলাপেও হাসি পাবে তাঁদের কমিক টাইমিংয়ে। না হলে আগের তিনটে ছবির মতোই এ ছবিতেও আঙুল মুচড়ে দেওয়ার দৃশ্য বার তিনেক দেখানোর লোভ সংবরণ করতে পারেননি পরিচালক। যোগ হয়েছে খালি ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে দেওয়া।
অবশ্য রোহিতের ছবিতে ক্লিশে আর ফর্মুলার বাড়বাড়ন্তে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাঁর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ আর ‘দিলওয়ালে’তেও ঢুকে পড়ে অন্য ছবির রেফারেন্স। আর এ তো একই ফ্র্যা়ঞ্চাইজি। তবে ছবির দানা বাঁধতে গেলে তো একটা প্লটের দরকার হয়। সেটা বেমালুম উবে গিয়েছে।
ছবির একটি দৃশ্যে এক শিল্পপতির মুখে সংলাপ রয়েছে, ‘মুঝে স্রেফ এক অচ্ছে প্লট সে মতলব হ্যায়’। শিল্পপতি জমির প্লট বোঝাতে চাইলেও, সমালোচকের কানে কেন জানি কথাটা পরিচালকের স্বগতোক্তির মতো ঠেকল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy