মৌনমুখর: চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে সাঙ্কেতিক ভাষায় আলোচনায় মগ্ন শর্ট ফিল্মের পরিচালকেরা। এঁরা প্রত্যেকেই বধির। সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
বিনোদনের হাত ধরেই কি পা বাড়াবে সচেতনতা?
সেই আশা নিয়েই এ শহরে পৌঁছে গিয়েছিল অভিনব এক ফিল্মোৎসব। শুধু বধির মানুষদের জন্য। উদ্যাপনের আড়ালে বৃহত্তর লক্ষ্যটি ছিল তথাকথিত ‘স্বাভাবিকদের’ কাছে নিজেদের স্বাভাবিকতাকে তুলে ধরা। যাতে কর্মক্ষেত্র হোক বা সামাজিক অনুষ্ঠান— বধিরদের প্রতি উপেক্ষা আর অবজ্ঞার মতো সমস্যায় ধীরে ধীরে এক পরিবর্তনের হাওয়া ঢুকে পড়ে।
দেখানো হল স্বল্প দৈর্ঘ্যের ৪৫টি নির্বাক ছবি। সব ক’টি ছবির ক্ষেত্রেই পরিচালক থেকে অভিনেতা, সম্পাদক থেকে চিত্রগ্রাহক— প্রত্যেকে বধির। তাই তাঁদের বোঝার জন্য ছবির সঙ্গে সাবটাইটেলের পাশাপাশি ছিল সাঙ্কেতিক ভাষার (সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ) ব্যবহারও। শুধু ছবির প্রদর্শনীতেই থেমে থাকেনি এই উৎসব, সেই সঙ্গে পুরস্কৃত করা হয়েছে সেরা পরিচালক থেকে সেরা অভিনেতা-সহ বিভিন্ন বিভাগে।
দেশি ছবির পাশাপাশি ছিল অনেক বিদেশি ছবি। এসেছিলেন সেই সব ছবির পরিচালক ও অভিনেতারাও। প্রতিটি ছবিরই দৈর্ঘ্য পাঁচ মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা।
নোটবন্দি থেকে কৃষকের আত্মহত্যা, স্বচ্ছ ভারত থেকে সবুজায়ন— বধিরদের তৈরি ছবিতে উঠে এল এমনই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সমকালীন সামাজিক বিষয়। অধিকাংশ গল্পই বলা হয়েছে রসিকতার ছলে। যেমন, চকলেট খেতে মগ্ন এক পথচারীর নোটে ঠাসা ব্যাগ চুরি করে পালাল এক চোর। পথচারী টের পেলেন না। চোর মহানন্দে ব্যাগ খুলতে গিয়ে দেখল সামনেই একটি সাইনবোর্ড। তাতে পাঁচশো আর হাজারের নোটের ছবি লাল কালি দিয়ে কাটা। অর্থাৎ, এই সব নোট এখন অচল। হতাশ চোর ব্যাগ নিয়ে ফিরে এসে সেটি আবার সেই পথচারীর কাঁধে ঝুলিয়ে দিল।
‘পারভেজ ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ নামে প্রতিবন্ধীদের জন্য এমনই একটি আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্মের উৎসব করে আসছেন ফতেমা আমিরি। ইরানের নাগরিক ফতেমা এখানে এসেছিলেন ছবির বিচারক হিসেবে। ভারতীয় ছবির সঙ্গে সে ভাবে পরিচিত নন তিনি। একমনে বেশ কয়েকটি ছবি দেখার পরে ফতেমার উপলব্ধি, ‘‘প্রতিবন্ধী মানুষদের সমস্যাটা ইরানে যেমন, এখানেও তেমন। ওঁদের ব্রাত্য করে দূরে সরিয়ে রাখলে তাতে যে সমাজের কল্যাণ হয় না, এটা আমাদের বুঝতে হবে।’’ কয়েকটি ফিল্মের গল্পে রীতিমতো মুগ্ধ ফতেমা।
শর্ট ফিল্মের পরিচালক ও এই উৎসবের আয়োজকদের অন্যতম মুরলী কুপ্পুস্বামী জানালেন, তাঁদের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ ডিরেক্টরেট অব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস থেকে এ বছর মিলেছে পাঁচ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান, যা তাঁদের যাত্রাকে আরও সুগম করবে বলেই মনে করছেন মুরলী।
‘ডেফ এক্সপো ২০১৭’ শীর্ষক যে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এই ফিল্মোৎসবের আয়োজন, তাতে রয়েছে বধির মানুষদের ফ্যাশন শো ও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মতো অনুষ্ঠানও। সপ্তাহের প্রথম দু’টি দিন রাখা হয়েছিল শুধু ফিল্মের জন্য। আজ, বুধ ও কাল, বৃহস্পতিবার— এই দু’দিন হবে বাকি সমস্ত অনুষ্ঠান।
প্রতিটি অনুষ্ঠানের মূল বার্তা অবশ্য একটাই— করুণা চাই না, উপেক্ষাও কাম্য নয়। নিজেদের মতো করে আমরাও সব পারি।
শীতের শহরে সে কথাই বলে গেল নীরবতার এই বেনজির উদ্যাপন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy