Advertisement
E-Paper

আমি প্যারালাল ইন্ডাস্ট্রি, আমার কোনও ইন্ডাস্ট্রির দরকার নেই

কালো লম্বা পাঞ্জাবি। কেরল প্রদেশের ধুতি। মাথায় পাগড়ি জড়িয়ে একদল ছাত্রছাত্রী নিয়ে ‘মাটি’ ছবির মিউজিক লঞ্চের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। দেবজ্যোতি মিশ্র। বাংলা গানের শেষ নাম তাঁর কাছে কবীর সুমন। ক্ষোভ আজকের সঙ্গীত পরিচালকদের নিয়ে। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।কালো লম্বা পাঞ্জাবি। কেরল প্রদেশের ধুতি। মাথায় পাগড়ি জড়িয়ে একদল ছাত্রছাত্রী নিয়ে ‘মাটি’ ছবির মিউজিক লঞ্চের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। দেবজ্যোতি মিশ্র। বাংলা গানের শেষ নাম তাঁর কাছে কবীর সুমন। ক্ষোভ আজকের সঙ্গীত পরিচালকদের নিয়ে। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০৯:০০
দেবজ্যোতি মিশ্র

দেবজ্যোতি মিশ্র

আপনার স্টুডিয়ো তো মাটির গন্ধে ভরা...
'মাটি' আসলে শুধু একটা ছবি নয়।এর অন্বেষণ গভীর, অথচ কী সাবলীল ভাবে তৈরি করা হয়েছে! ছবির শরীরে দেশভাগের দাগ। মনে লেগে থাকে। এমন গল্প বার বার পাবো না আমি, তাই মনে হল ঋতুপর্ণ-র ‘চোখের বালি’-তে যে রকম কাজ করেছিলাম সেটা মনে হল ফিরে পেলাম আবার।

আপনি গান লিখলেন?
আমি নতুন রকম ভাবে নিজেকে দেখলাম এই ছবিতে। তাই গান লিখলাম। ছোটবেলার মায়ের দেশভাগকে সুরে চিনলাম এ বার। এক দিকে হিউজ অরকেস্ট্রেশন, আবার অন্য দিকে সঙ্গীতের পরম্পরাকে আনতে পেলাম, কীর্তন, লোকসঙ্গীতে।

আজকের বাংলা গান আপনার কাছে কেমন করে আসে?
এটা নিয়ে কথা বলতেই হবে?

আপনি বাংলা গানের লোক তো!
আমি এখন কিছু বলতে ভয় পাই না। শুনুন, কবীর সুমন বাংলা সংস্কৃতির শেষ কথা। তাঁর পরে আর কাউকে দেখি না আমি। আর বিশ্ব সঙ্গীতের প্রবহমানতা আমার আশ্রয়, আমার প্রশ্রয়। সেখানে সলিল চৌধুরী, জসিমুদ্দিন, শচীন দেব বর্মণ, সুধীন দাশগুপ্ত আছেন। আর কিছুর দরকার নেই। এখন যে কাজ হচ্ছে তা আমায় স্পর্শ করে না!


এখন কি মধ্যমেধার যুগ?
হ্যাঁ, কিন্তু এ কথা বলতে গিয়ে মনে হয় এটাও বলি, আমি কোন মেধার জানি না!

আপনি কি?
আমি এক জন প্রফেশনাল মিউজিশিয়ান যে সলিল চৌধুরী, ইলিয়া রাজা, সুধীন দাশগুপ্তর সঙ্গে কাজ করেছি। স্টুডিয়োতে সেশনে ভায়োলিন, গিটার বাজিয়েছি। আজকে তো এক জন সঙ্গীত পরিচালক দেখি না যিনি মিউজিশিয়ান হয়ে অন্য ফ্লোরে মিউজিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন! তা হলে প্রবহমানতা তাঁরা জানবেন কী করে? চর্যাপদ থেকে বিদ্যাপতি, তার পর কীর্তন, লোকসঙ্গীত, ঠাকুরবাড়ির গান...সেখান থেকে ইউরোপীয় প্রভাব, ক’জন জানি আমরা? আমি তো বলব কিছু দক্ষ মিউজিশিয়ানের উপর ভর দিয়ে সঙ্গীত পরিচালকেরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কবীর সুমন কিন্তু পারেন সারা পৃথিবীর সঙ্গীতকে বুঝে স্বরলিপিবদ্ধ করতে। প্রলিফিক স্কোর করতে পারা মিউজিশিয়ান কোথায় এখন?

এই সময়টা তা হলে কী?
এটা সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সমাজ, রাজনীতির মাৎস্যন্যায়। আমি কিন্তু সিনিকাল জায়গা থেকে বলছি না। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। তবে আমি আশাবাদী অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিশ্বনাগরিকের সম্ভাবনা আছে। আসলে শিক্ষার বড় অভাব।

যেমন...
যেমন ‘মাটি’ ছবিতে যে মিউজিকাল জার্নি আছে সেখানে আমি জাফার পানাই ইয়ের সঙ্গে ‘ডার্ক’ ছবির কাজের অভিজ্ঞতা মিশিয়েছি। শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কিন্তু খুব ভাল মিউজিশিয়ান, এটা সকলে জানে না। যাই হোক, আমি দুই ধারাকে মেলাতে পেরেছি। আমার পরিচালক বন্ধু অনীক দত্ত, অতনু ঘোষ, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়— এঁদের সঙ্গে কাজ করেও এই ব্রড মিউজিক নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। অনীকের ভবিষ্যতের ভূত নিয়েও কাজ চলছে।
আচ্ছা এই প্রসঙ্গে আমি একটা কথা বলব, লিখতে পারবেন তো?

নিশ্চয়...
মিডিয়া এই মধ্যমেধাকে বাড়িয়ে তুলছে। মিডিয়ার কিছু খবর চাই রোজ। মিডিয়া মধ্যমেধাকে উচ্চ স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। মিডিয়া মুড়ি-মিছরি এক করেছে। এটা প্লিজ লিখবেন কিন্তু! মিডিয়ার জন্যই মানুষের সঙ্গে শিল্পের সরাসরি যোগাযোগ অনেকটা কমে গিয়েছে।

কিন্তু সকলের মিডিয়ার দরকারও হয়...
মিডিয়ার কাছে কবীর সুমন আজও অনাবিষ্কৃত। তাঁকে রোজ মিডিয়ায় মুখ দেখাতে হয় না। তাঁকে রোজ বিদেশে গিয়ে ফেসবুকে যেতে হয় না। বঙ্গ সম্মেলনে যেতে হয় না। তিনি বিশ্ব গায়ক এ কথা সকলের জানা। আর কম জেনে, কম পড়ে, কম গান শুনে বেশি দূর কিছুতেই যাওয়া যাবে না এটা বলে দিলাম! বাঙালিকে শিল্পী হতে গেলে কীর্তন, লোকসঙ্গীত, খেয়াল জানতে হবে। ইউটিউবে শোনা নয় কিন্তু একদম! সবচেয়ে খারাপ লাগে আজ শেখা আর পড়া চলে গেছে! আজ এত স্টাইল এসেছে গানে, সেগুলোর সঙ্গে গভীর শিক্ষার দরকার ছিল। সেটা নেই। মিউজিশিয়ানের কাব্যচর্চা খুব জরুরি। যারা শুরু করছে তারা অন্তত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী পড়ুক। গুরুর পাঠ নিতেই হবে! নয়তো বব ডিলান হয়ে জন্মাতে হবে।

আপনি তো বার বার ডিকন্সট্রাকশনের কথা বলেন...
হ্যাঁ, কিন্তু কন্সট্রাকশন জেনে। তারুণ্যকে হাত জোড় করে বলছি, ‘বাবা আমার, বাছা আমার, ট্র্যাডিশন জেনে পড়ে মডার্নিটি ভাঙাচোরা কর’। আমি আঠেরো-উনিশ নিয়ে কাজ করছি এখন। তাদের বলি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়, না মানে বুঝলে আমি আছি। অমিত দত্ত, সুমিত রামচন্দ্রমের কাছে গিটার শেখ। স্কোর লিখতে শেখো। আমি বাংলাদেশ অপেরা করব বলে আজ অ্যান্থ্রপলজিস্টের কাছে যাচ্ছি। শিখছি। না শিখলে মাটির গান হবে কী করে? রবীন্দ্রনাথের গানে সব ইনস্ট্রুমেন্ট বাজতে পারে, কিন্তু তুমি কি সেই ইনস্ট্রুমেন্ট শিখেছ? ইউটিউবে শুনলেই শুধু হবে না! রবীন্দ্রনাথের গান কতটা শিখেছ? লীনা শৈবাল উস্কে দিয়েছে আমায় অন্য কাজ করায়। আমি চেষ্টা করেছি মাত্র।

রবীন্দ্রনাথের গান মাটিতেও আছে। এই গান এখন গাওয়ার জন্য কি সাউন্ডস্কেপ বদলাতে হবে?
খালি গলায় হোক না এ বার। রবীন্দ্রনাথ স্পেনে পৌঁছননি। তার জন্য আমরা দায়ী। সেখানে জ্যাজ আর স্যাক্সোফোন বাজিয়ে গান শোনালে ওখানে লোকে নেবে না! বিশ্বের কিছু বাঙালি নস্ট্যালজিয়ায় রবীন্দ্রনাথের গান শোনে। আমি পৃথিবীতে ঘুরে দেখেছি, ওই গান গুনগুন করে গাইলে জনের মতো গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড উইনার মুগ্ধ হয়ে শোনে!

তা হলে লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণের অর্কেস্ট্রেশন? সেটা তো ‘চোখের বালি’-তে আপনার করা!
কী যে অন্যায় করেছিলাম! অর্কেস্ট্রেশন করে পুরো বেনোজল এনেছি। আজ বুঝি! খুব ভুল করেছি। আমি হিউজ কয়ার ব্যবহার করেছিলাম ওই গানে। ঋতু বলত, শ্রাবণী আমার দিনু ঠাকুর। শ্রাবণীকে নোটেশন জানতে চাইতাম।

আজ যা যা বললেন, তাতে মনে হল এ রকম বোধ নিয়ে, ধারণা নিয়ে আপনি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন কী করে?
আমি পিআর-এ নেই। রাজনীতিতে নেই। বড় ব্যানার, প্রোডাকশনে নেই। কিন্তু আমি মনে করি আমি নিজে প্যারালাল ইন্ডাস্ট্রি (হেসে)। আমার কোনও ইন্ডাস্ট্রির দরকার আর নেই।

Debojyoti Mishra Kabir Suman দেবজ্যোতি মিশ্র কবীর সুমন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy