দেবিনা
ফোনেই বোঝা যাচ্ছিল অভিনেত্রী চূ়ড়ান্ত ব্যস্ত। কাউকে রান্নায় মশলার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। না, কোনও শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন না দেবিনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যস্ত ছিলেন রান্নাঘরে। তাঁর কাছে এটাই এখন প্রায়রিটি। ‘‘সকাল থেকে সন্ধে আমার স্বামী গুরমিত কী খাবে, শুটিংয়ে কী কী খাবার সঙ্গে নিয়ে যাবে, সব আমিই গুছিয়ে রাখি। ফিটনেস রেজিম অনুযায়ী ওর খাবার বানাই। আর আমার শুটিং থাকলে বাড়ির পরিচারিকাকে নির্দেশ দিয়ে দিই,’’ পাকা গৃহিণীর মতো বলছিলেন দেবিনা। যাঁকে আমরা ‘রামায়ণ’, ‘পতি পত্নী অউর উয়ো’, ‘চিড়িয়াঘর’, ‘সন্তোষী মা’ ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায় দেখেছি। সেলেব্রিটি হলেও নিয়মিত রান্নাবান্না করেন তিনি। তাঁর হাতের শুক্তো গুরমিতের অন্যতম পছন্দ। শাশুড়ির কাছে শিখেছেন লিট্টি চোখাও। ‘‘কিন্তু প্রথম দিন বানাতে গিয়েই হাতে স্পন্ডিলাইটিস হয়ে গিয়েছিল,’’ গলায় খানিকটা অনুযোগের সুর।
সংসার ছাড়া আর কী মিস করেন? ‘‘টলিউড। শুরু করেছিলাম বাংলায়। কিন্তু মুম্বইয়ে আসার পরে কেউ আমাকে আর ডাকলই না। খুব আফসোস হয়। কত রিয়্যালিটি শো হয় বাংলায়! আর সেখানে মুম্বই থেকে বিচারক হিসেবে যাঁদের ডাকা হয়, তাঁরা তো সব আধা বাঙালি! আর আমি পুরোপুরি বাঙালি হয়েও ডাক পেলাম না। কলকাতা আমাকে ভুলেই গিয়েছে,’’ নায়িকার গলায় ক্ষোভের আঁচ।
কিছু ক্ষণ থেমে হালকা চালে বললেন, ‘‘সেই ‘ড. মধুমতী অন ডিউটি’ ধারাবাহিকে বাঙালি চরিত্র করার সময়ে পরিচালকের সঙ্গে প্রায় হাতাহাতি হয়েছিল। বাঙালি চরিত্র মানেই আটপৌরে শাড়ি বা উরি বাব্বা নয়! এটা বোঝাতে বোঝাতে আমার কালঘাম ছুটে গিয়েছিল।’’ মুম্বইয়ে এত বছর কাটালেও এখনও তিনি মনে-প্রাণে বাঙালি। কলকাতার কোনও মানুষকে পেলে দেবিনা সেই শোভাবাজারের ঘটি পরিবারের ছটফটে কন্যে হয়ে যান! কাজের সূত্রে গুরমিতের সঙ্গে আলাপ। তার পরে প্রেম ও পরিণয়। গুরমিতের বিহারের ভাগলপুরের গ্রামের এক পরিবারের নয় ও পাঁচ বছরের দু’টি মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা।
পর্দায় দেবিনা-গুরমিতের প্রথম কাজ ছিল ‘রামায়ণ’। ‘নাচ বলিয়ে ৬’-এ এই জুটি ধুম মচানোর পরে গুরমিতের ‘খামোশিয়া’ ছবিতে ছোট্ট চরিত্রে ছিলেন তিনি। তবে দু’জনের কাজের ধারা আলাদা হওয়ায় তাঁদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে না এখন। দেবিনা নিজের ব্লগ খুলেছেন। প্রোডাকশন হাউস খোলার চিন্তাভাবনা করছেন দু’জনেই।
‘খিচড়ি রিটার্নস’-এ ছোট্ট চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ‘‘সব সময়ে গতে বাঁধা কাজ করতে পছন্দ করি না। আলাদা কাজের নেশাতেই ওই ধারাবাহিকে মাঝপথে ঢুকেছিলাম। অনেক ধারাবাহিকে আমরা নিজেদের মতো একটু-আধটু সংলাপ বদলে নিতে পারি। কিন্তু এখানে একটা শব্দও বদলানোর উপায় ছিল না। শুরুতে বেশ চাপ অনুভব করলেও ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম।’’ সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছে থাকলেও এমন ছবিই করতে চান, যেখানে চরিত্রটাই আসল। ‘‘শুধু মাত্র টাকা রোজগারের জন্য ছবি করব না। এর চেয়ে সিরিয়াল করা অনেক বেশি আনন্দের,’’ স্বীকারোক্তি নায়িকার। জানালেন, বেশ কয়েকটি নতুন কাজের কথা চলছে।
হাতে কাজ না থাকলে মনঃকষ্টে ভোগেন না তিনি। কারণ ওই সময়টায় নিজেকে বিচার করেন অন্য ভাবে। ‘‘প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করি। শুটিং না থাকলে বাড়ির কাজ করি। আবার যখন শুটিংয়ের অত্যধিক চাপ পড়ে, তখন সেটা নিয়ে হাঁসফাঁস করি না। সব দিক সামলে চলতে পারি,’’ কথাতেও বোঝা যাচ্ছিল তিনি বেশ ব্যালান্সড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy