Advertisement
E-Paper

বুঝিনি সৃজিত কেন আমার গান বাদ দিয়েছিল

কুড়ি বছর গানের জগতে থেকেও ইন্ডাস্ট্রির সমীকরণ নাকি বুঝতে পারেন না মনোময় ভট্টাচার্য। কথা বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়পুজোতে যদিও তাঁকে কলকাতায় পাওয়া যাবে না। আমেরিকার বাঙালিদের গান শোনাতে এ বার পুজোয় কলকাতা ছেড়ে চললেন মনো‌ময়। কুড়ি বছর গানের জগতে থেকেও ইন্ডাস্ট্রির সমীকরণ নাকি বুঝতে পারেন না মনোময় ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১
ছবি: কৌশিক সরকার।

ছবি: কৌশিক সরকার।

বিশ্বের অধিকাংশ মিউজিশিয়ান যখন আইটিউনস-এ, ইউটিউবে, ইন্টারনেটে গান রিলিজ করার কথা ভাবছেন, ঠিক তখনই মনোময় ভট্টাচার্য পুজোর গানের অ্যালবাম প্রকাশ করলেন। জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর এ বারের পুজোর সিডি। পুজোতে যদিও তাঁকে কলকাতায় পাওয়া যাবে না। আমেরিকার বাঙালিদের গান শোনাতে এ বার পুজোয় কলকাতা ছেড়ে চললেন মনো‌ময়।

‘‘লোকে যেমন পুজোর জামাকাপড় কেনে আমি তেমনই পুজোয় গান গাই। এত বছর গান গাওয়ার পর কে গান শুনল, কে শুনল না তা নিয়ে আর একদম ভাবছি না।’’ জিনস আর পাঞ্জাবির এই চেনা মুখ ইদানীং যেন বড় বেশি ‘উদাস পাগল মন’।

আলুসেদ্ধ আর মাছভাজা

দুধে কিছুতেই পরিমাণ মতো চিনিটা মেশাতে পারছিলেন না। বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘‘চা-টা প্লিজ একটু বানিয়ে দেবেন?’’ আলু সেদ্ধ আর মাছ ভাজা পাগল এই ভেতো বাঙালি সেদ্ধ নুডলস ছাড়া আর কোনও দিন কিছু করে উঠতে পারেননি। কুড়ি পেরিয়েছে তাঁর গানের জীবনের। কিন্তু আজও ঘরকুনো তিনি। পার্টিতে যেতে ইচ্ছে করে না, বাড়িতে এসি থাকলেও ঘর বন্ধ করে গরমের মধ্যে নিয়মিত রেওয়াজটা সারেন। বললেন, ‘‘বাবাকে সারাজীবন কষ্ট করতে দেখেছি। আমাদের পাঁচ ভাই বোনকে মানুষ করতে ভোর ছ’টা থেকে রাত্রি এগারোটা পর্যন্ত ছাত্র পড়িয়েছেন। মা সামলেছেন সংসার। বাবার একটাই জামা ছিল। সে সব ভেবে আর এসিটা চালাতে পারি না।’’

শুভমিতা আর লোপামুদ্রার পর বাংলায় মহিলা শিল্পী কই

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির লবিটাও ঠিক বুঝে ওঠা হল না তাঁর। আজও ভুলতে পারেন না ‘জাতিস্মর’য়ে তাঁর ‘অ্যান্টনি -ফিরিঙ্গি’ র গানের কথা। সম্প্রতি একটি চ্যানেলে তাঁর গানগুলো শুনে চমকে উঠেছিলেন তিনি! থাকতে না পেরে ফোন করে ফেলেছিলেন সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকে—‘‘আচ্ছা আমার গাওয়া অ্যান্টনির গানগুলো কি বুম্বাদার গলায় আবার ফিরে এল?’’ বললেন মনোময়।

ইন্দ্রদীপ জানিয়েছিলেন ওই রেকর্ডিংয়ের রাশটা কোনও ভাবে বাজারে বেরিয়ে গিয়েছে। নতুন করে কিছুই হয়নি। মনকেমন করা স্বর, ‘‘আজও বুঝলাম না সৃজিত মুখোপাধ্যায় কেন আমার গাওয়া অ্যান্টনির সাতটা গানই বাদ দিয়ে দিলেন। সুমনদাও তো গান শুনে বলেছিলেন অনবদ্য! তাও বাদ।’’

তবে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, জয় সরকার, দেবজ্যোতি মিশ্র, অনুপম রায়ের কাজ তাঁকে অনুপ্রেরণা দেয়। অরিজিৎ সিংহের গান ভাল লাগলেও শুভমিতা আর লোপামুদ্রার পর বাংলায় এখনকার কোনও মহিলা শিল্পীর গানের কথা মনে করতে পারলেন না তিনি।

টলিপাড়ার সমীকরণগুলো তাঁর ধরাছোঁয়ার বাইরে। ‘‘আমি তো বিদেশ থেকে ফিরে প্রোডিউসর বা মিউজিক ডিরেক্টরের বাড়িতে স্কচের বোতল পাঠাতে পারব না। তাই বড় ব্যানারের কাজও হয়তো পাব না।’’ বড্ড বেশি অভিমানী তিনি। আজকের দুনিয়ায় শিক্ষিত শিল্পীর যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে থাকতে চান। ‘‘এখন কলেজের ফেস্ট হোক বা পাবলিক শো, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’ থেকে ‘মনের মানুষ’ সব গানেই অত্যুৎসাহী জনতা উদ্দাম নাচে। আমিও আর রিঅ্যাক্ট করি না। পয়সা পাই গান গাই,’’ বলছিলেন মনোময়।

গানের সময় সবাই ভুলে যায় আমায়

২০০৭ থেকে একটানা সিডি প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর। কখনও নজরুল, কখনও রবীন্দ্রনাথ কখনও বা আধুনিক বাংলা গান। সিডি যদি বাজারে একেবারেই না চলত তা হলে কি সত্যি মিউজিক কোম্পানিগুলো প্রতি বছর সিডি করার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হত? প্রশ্ন রাখছেন মনোময়। আজও একক অনুষ্ঠান
হলে ভরে যায় রবীন্দ্র সদনের প্রেক্ষাগৃহ। ‘রংবাজ’য়ের মতো কমার্শিয়াল ছবিতেও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ‘দিশাহীন’ গানটি তাঁকে দিয়েই গাওয়ান। তবে তিনি এটাও
জানেন তাঁর পিআর খারাপ হওয়ার জন্যে সময়ে সময়ে সকলেই তাঁকে ভুলে যায়। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরৎ’ আর ‘সত্যান্বেষী’তে গান গেয়েছিলেন তিনি। ঋতুপর্ণ তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। এমনই সখ্য ছিল তাঁদের। অথচ ঋতুপর্ণের স্মরণ সভায় তাঁকে ডাকাই হল না।

পঁচিশ বছর ধরে রাগসঙ্গীত নিয়ে চর্চা করছেন। বাবা বলেছিলেন, ‘চাকরির দরকার নেই, গান গেয়ে যাও’। তাই যতই পড়াশোনা থাক ছোটবেলায় শনি-রবিবার ছিল গানের দিন। আজও গুরু আচার্য জয়ন্ত বসুর গান তাঁর মনখারাপের সঙ্গী। ‘‘হই হই করা প্রচুর গান আর হাততালিতে একটুও মন ভরে না আমার। শো থেকে বাড়ি এসে আগে জয়ন্ত বসুর গান শুনে নিজেকে রিফ্রেশ করি,’’ যদু ভট্টের এই বংশধরের সাফ জবাব।

ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলে শো করি না

ফুটবলে তিনি কিন্তু লাল হলুদের অন্ধ ভক্ত। বাড়িতে সকলেই মোহনবাগান হলেও জার্সির ওই লাল হলুদ রং দেখেই সেই কোন ছোট বেলায় ইস্টবেঙ্গলের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন মনোময়। ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলে আজও তোয়াক্কা না করে শো বাতিল করে দেন তিনি।

পাগলামি, প্যাশন তাঁর রক্তে। বেশ চমকে দিয়েই বললেন, ‘‘আমার একটা স্বপ্নের ডেটিং প্ল্যান আছে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কোনও একটা সী বিচে সারাদিন কাটাতে চাই।’’ অমিতাভ বচ্চনের কোনও ছবি তাঁর মিস হয়নি। অমিতাভের এমন কোনও ছবি নেই যা তাঁর বাড়ির ডিভিডি কালেকশন থেকে বাদ পড়েছে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘জানেন তো মুম্বইতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বহু দিন ‘জলসা’র সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। একবার যদি তাঁর দেখা পাই। ছোটবেলায় ভাবতাম অমিতাভের বাগানের মালী হব।’’

হোয়াটস্অ্যাপে হাল্কা ফ্লার্ট

থেকে থেকে ফোনটা বেজে উঠছিল। শেষ আশ্বিনেও তাঁর কলার টিউনে বাজছে ‘শ্যামল শোভন শ্রাবণ তুমি নাই বা গেলে’। হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করতে করতেই গাইলেন পুজোর অ্যালবামের গান, ‘‘বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে কী জ্বালাতন/জ্বলে পুড়ে যায় মন’’। সদ্যই এক আঠারো বছরের সুন্দরী যুবতী তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ছেলের বয়স পনেরো বলে কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখে যাই বলুন হোয়াটসঅ্যাপে সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে গান শেয়ার করা, গান নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে হাল্কা ফ্লার্ট করতে ভালইবাসেন তিনি। খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে , ‘হে হে’ বলে সরে পড়েন। সরে সরেই থাকতে চান এই একলা গায়ক। জানেন তাঁর গানের মেয়াদ আর মাত্র দশ বছর। এই কঠিন সত্যিটা জেনেই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘বড্ড বেশি বোধ নিয়ে জন্মেছি আমি। আজকের দিনে তা অচল। আর জন্মাতে ইচ্ছে করে না।’’

Monomoy Bhattacharya song
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy