প্র: ফিল্মেফেয়ার পেয়ে গিয়েছেন। অথচ আপনাকে প্রায় দেখাই যায় না। আপনার মিউজিক গ্রুমিং নিয়ে কিছু বলুন
নীল: আমার যে রকম আলাদা করে কোনও গ্রুমিং নেই। জীবনই আমাকে গ্রুম করেছে। ইংরেজি গান করতাম। অনেক ছোটবেলায় ক্রসউইন্ডজে যোগ দিয়েছিলাম। তখন আমি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল শিখছি। ওঁর সঙ্গে ক্লাস অ্যাপার্ট বলে একটা ফিউশন ব্যান্ডও করেছিলাম। তারপর বেশ কিছু ব্যান্ড তৈরি করেছি, অনেকগুলো ভেঙেও গেছে। এ রকম করতে করতে তারপর আমার কিউ-এর সঙ্গে দেখা হল। ‘গান্ডু’র মিউজিক করলাম। এ ছাড়াও রাজস্থানি ফোক মিউজিক নিয়ে দিল্লির পেনিনসুলার স্টুডিওর সঙ্গে কাজ করেছি।
প্র: কিউ-এর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জার্নিটা ঠিক কেমন ছিল?
নীল: ওয়ান্ডারফুল এক্সপেরিয়েন্স! ‘গান্ডু’র মিউজিক করার পর থেকে আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে যাই। তারপর যা যা ছবি কিউ বানিয়েছে তার প্রায় সবকটারই মিউজিক আমিই করেছি। শুধু ‘নবারুণ’ বাদে। ‘নবারুণ’-এ কিছু সাউন্ড রেকর্ডিং করেছি। পুরো ব্যাপারটার সঙ্গেও ছিলাম। এর বাইরে ‘ভীতু’-র মিউজিক করলাম। ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর মিউজিক করেছি। সামনেই রিলিজ ছবিটার। কিউ-র নতুন ছবি ‘ব্রেহমন নমন’-এর মিউজিক করেছি। সানডান্স ফেস্টিভ্যালে গেছে ছবিটা। ‘লুডো’-র মিউজিক করেছি। ইউরোপের একটা ফেস্টিভ্যালে সেটা সেরা ছবিও নির্বাচিত হয়েছে। আরও কিছু কাজ করছি যেটা নিয়ে এখনই বলতে চাই না।
প্র: অ্যাড এজেন্সির চাকরি ছেড়ে মিউজিকে পুরোপুরি সময় দেবেন ঠিক করলেন যখন তখন আর্থির দিকটা ভেবে ভয় করেনি?
নীল: ওই যে বললাম আমার জীবনই আমার গ্রুমিং। স্পেস সেলিং-এর কাজ করতাম। সব ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আর সেই ঝুঁকিটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গ্রুমিং। চাকরি করলে এখন আমার জীবন অন্য রকম হত। কলকাতায় ইংলিশ মিউজিক নিয়ে কাজ করলে বেশি টাকা করতে পারব না আগে থেকেই জানতাম। ঠিকঠাক সংসার চালাতে পারবো না, বাড়ি ভাড়া দিতে পারবো না, সবটাই জানতাম। তাও আমি শুধু খশি থাকতে চেয়েছিলাম বলে এই ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম। জানতাম বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বাড়বে। এখন আমি সারা দিন কাজ করি। দারুণ লাগছে।
প্র: ক্রসউইন্ডজ ছাড়লে কেন?
নীল: ক্রসউইন্ডজ ছাড়লাম কারণ আমি আমার গুরুর সঙ্গে ক্লাস অ্যাপার্ট শুরু করেছিলাম। টুকিদা বলল আমি যে কোনও একটা করতে পারবো। আমি সেটা খুব একটা ভাল ভাবে নিইনি। তখন ভাবলাম যদি ক্লাস অ্যাপার্ট না করে ক্রসউইন্ডজের সঙ্গে থাকি তাহলে এই রাগটা আমার মনে থেকে যাবে। এই সব করতে করতে আর ব্যান্ডগুলো ভাঙতে ভাঙতে গান লেখার ব্যাপারটা আরও সিরিয়াসলি নিতে শুরু করেছি। আমার কাজিন মিতি অধিকারীর কাছে অনেক কিছু শিখেছি, শান্তনু দা-র কাছে, রবিন লাই (ভূমির ভায়োলিনিস্ট)-এর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। টুকিদার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। নীল মুখার্জি আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করেছে।
প্র: বাংলাদেশে যেখানে অনেক রক ব্যান্ড, ফিউশন ব্যান্ড রয়েছে, সেখানে কলকাতায় এই সংখ্যাটা হাতে গোনা। আপনার কি মনে হয় কলকাতার শ্রোতারা একটু কনজারভেটিভ?
নীল: হ্যাঁ এবং না দুটোই। বাংলাদেশের রকসিনটা এখন বেশ বড় হচ্ছে। তবে এখানে বাংলা ব্যান্ড একটা সময় দারুণ জনপ্রিয় হওয়ার পর হঠাত্ করে জনপ্রিয়তাটা হারিয়ে যায়। সেটার কারণ আমার মনে হয় ইন্টারনেট। এখন সবাই সব ধরনের মিউজিক শুনছে। কিছু পুরনো বাংলা ব্যান্ডের অ্যারেঞ্জমেন্টটা হয়তো একটু পুরনো রকের দিকে। ইন্টারনেটে এখন লেটেস্ট রক শুনতে পাচ্ছে সবাই। তাই আরেকটু আপগ্রেড করতে হবে। ‘পোয়েটস অফ দ্য ফল’ বলে একটা ব্যান্ড এসে এখানে বাজালো। শুনে আমি শক্ড। ৩০০০ জন লোক ‘পোয়েটস অফ দ্য ফল’-এর গান গাইছে। ফসিল্স-এর কনসার্টের থেকে কিছু কম নয়। ইন্টারনেটের কারণে এখন সবাই এই সব গান শুনছে।
প্র: ‘গান্ডু’র গানে যে ভাবে স্ল্যাং ব্যবহার করা হয়েছে তাতে রিঅ্যাকশনের ভয় লাগেনি?
নীল: রিঅ্যাকশেন ভয় ঠিক নয়, তবে আমরা যা আশা করেছিলাম আর যা রিঅ্যাকশন পেয়েছি দুটো পুরো আলাদা। আমরা ভেবেছিলাম খুবই সমালোচিত হবো। আমি এমনিতেই নিজেকে একটু আলাদাই রাখি সব কিছু থেকে। এখন বেশ কিছু মেনস্ট্রিম সিনেমায় কাজ করছি, কিন্তু তখন এ সব কিছুই ছিল না। তাই রেপুটেশন নষ্ট হওয়া বা এ রকম কিছু মনেই হয়নি তখন। আমি রিয়েল লাইফে যা, পর্দাতেও সেটাই থাকা উচিত। নাহলে কোথাও একটা হিপক্রিসি চলে আসে মানুষের মধ্যে। আর সেটা এলে গান লেখাটা সম্ভব না।
মিডিয়ার প্রচার পেলে বেশি টাকা পাওয়া যায়...কাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy