Advertisement
১১ মে ২০২৪
Film Review

‘প্রাক্তন’ জুটি আবারও হিট কৌশিকের ‘দৃষ্টিকোণ’-এ

‘প্রাক্তন’-এর মতোই এ ছবিরও মূল আধার প্রেম। তার সঙ্গে কৌশিকের স্বকীয় থ্রিলার শৈলীর ককটেল। সব মিলে খুবই জমজমাট এ ছবি।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:৪৬
Share: Save:

দৃষ্টিকোণ

পরিচালক: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

অভিনয়: প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

‘প্রাক্তন’ জুটির প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণাকে আরও একবার পর্দায় আপামর বাঙালি দেখার জন্য মুখিয়েই ছিল। আর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবিতে সেই সুযোগই করে দিলেন। তাই হলে ঢুকেই আট থেকে আশির মুখের হাসি বাধ মানে না।

‘প্রাক্তন’-এর মতোই এ ছবিরও মূল আধার প্রেম। তার সঙ্গে কৌশিকের স্বকীয় থ্রিলার শৈলীর ককটেল। সব মিলে খুবই জমজমাট এ ছবি। প্রসেনজিত্ অভিনীত জিয়ন পেশায় উকিল। শারীরিক আঘাতের জেরে একটি চোখে দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। ঋতুপর্ণা অভিনীত শ্রীমতী চোখের চিকিৎসকের (কৌশিক সেন অভিনীত) স্ত্রী। ছবির শুরুতে অকস্মাৎ মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর। এই ঘটনার কিনারা করতেই জিয়নের সাথে আলাপ হয় শ্রীমতীর। ক্রমে শ্রীমতী হয়ে ওঠে জিয়নের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। বিবাহিত হওয়া সত্বেও শ্রীমতীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জিয়ন। পরিশেষে, যদিও জানা যায়, এই প্রেম আসলে মরে যাওয়া স্বামীর প্রতি প্রেম যার চোখ আজ জিয়নের চোখে রয়েছে। এখানেই অন্যরকম হয়ে ওঠে এই আখ্যান। হয়ে ওঠে ইন্টারেস্টিং।

একদিকে খুনের কিনারা আর আর একদিকে পরকীয়া। যেন বা যুদ্ধ আর প্রেম একসঙ্গে। পাশাপাশি, আরও দু’টো উপ-কাহিনি। এক, শ্রীমতীর ভাসুরের খুনের নেপথ্যে কি ভাসুরের সঙ্গে আয়ার প্রেম? বলতেই হবে, ভাসুরের ভূমিকায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়।গোটা ছবি জুড়ে তাঁর প্রতি সকলের সন্দেহ, তাঁর আপাত ভালোমানুষির নীচে ধান্দাবাজ অশ্লীল হিসেবে তাঁকে দেখা আর ছবির শেষে তাঁর নির্দোষ আত্মহত্যা অন্যতর এক সুর বের করে আনে এই পরিচিত প্রেমের আখ্যানে।পাশাপাশি, জিয়নের স্ত্রীর ভূমিকার আটপৌরে গৃহিণী হিসেবে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়ও বিশেষ আবেদন রেখে যায়। পরম আদরের স্ত্রী থেকে সন্দিগ্ধ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামীকে সন্দেহ—এই গোটা পরিবর্তনের উত্তাপ খেলে যায় তাঁর অভিনয়ে।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘মুক্কাবাজ’ আবার দেখাল অনুরাগ কাশ্যপ কেন আলাদা


‘দৃষ্টিকোণ’-এ প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণা।

অনুপমের গানে বরাবরই পরিবর্তনের হাওয়া লাগে ছবিতে। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। গোপী ভগতের ক্যামেরা ভালো। তবে আখ্যানের দাবি মেনে আরও ভাল হতে পারত কি না—সে প্রশ্ন থেকে গেল। পরিশেষে, কৌশিককে আরও একবার ধন্যবাদ। শিবু-নন্দিতা জুটির বাইরে বের করে এনে, প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণাকে আরও সময়োপযোগী করে তোলার জন্য।

বিগত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে এ ছবির পোস্টার ছেয়ে ছিল শহর। স্বাভাবিক ভাবেই, ‘প্রাক্তন’-এর মতোই কোনও আখ্যানের কথা প্রাথমিক ভাবেই মনে হয়েছিল দর্শকের। পরিচালক সেই মনে হওয়াকে নিরাশ করেননি। শুধু তার সঙ্গে যোগ করে দিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির কিছু স্বকীয় শৈলী। কখনওই দাবি করব না, এ ছবি তাঁর বিকল্প ধারার ছবিগুলির মত আত্মায় হাত রাখে।বরং এ ছবি অনেক বেশি, বিনোদন দিতে চায়। কিন্তু তা দিতে চায় বিনোদনের সংজ্ঞা মেনে। কোথাও আরোপ না করেই এ ছবি বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে, সেখানেই এ ছবির শ্রেষ্ঠত্ব।

তাই, হল থেকে বেরনোর সময়, প্রিয় বুম্বাদা আর ঋতুপর্ণাকে দেখে দর্শকের “আহা’-“ওহো”গুলিও এন্ডস্ক্রোলের সাথে দিব্য মানিয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE