শ্যুটিংয়ের ফাঁকে প্রযোজকের সঙ্গে কথা অমিতাভর। রয়েছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীও। ছবি সুজিত সরকারের সৌজন্যে
প্রশ্নটা সটান ধেয়ে এল ভরা কোর্টরুমে। ‘‘আর ইউ আ ভার্জিন, মিস অরোরা?’’
স্থির চোখে তাকিয়ে প্রবীণ আইনজীবী। স্পষ্ট উচ্চারণে কাটা কাটা শব্দে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তরুণীকে বিঁধছেন তিনি। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘পিঙ্ক’-এর এই ট্রেলর সম্প্রতি ইউটিউবে ঝ়ড় তুলেছে। অগস্টের গোড়ায় মুক্তি পাওয়ার পরে ইতিমধ্যেই ৬৮ লক্ষ হিট পেরিয়ে গিয়েছে ‘পিঙ্ক’। সংলাপগুলো এতটাই চোখা, যে চমকে উঠছেন অনেকে।
ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, মহিলাদের প্রতি কটূক্তি— বেশ কিছু দিন ধরেই দেশ জুড়ে লাগাতার চর্চা চলছে বিষয়গুলো ঘিরে। কখনও নির্ভয়া তো কখনও গুড়িয়া, কখনও পার্ক স্ট্রিট, তো কখনও বদায়ুঁ, কখনও কামদুনি তো কখনও বুলন্দশহর! বদলে গিয়েছে আইন। বদলে গিয়েছে ধর্ষণের সংজ্ঞা। আপত্তিকর দৃষ্টি থেকে আপত্তিকর মন্তব্য, সবই এখন যৌন হয়রানির তালিকাভুক্ত। সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সরব হয়ে উঠছে শুধু ধর্ষণ নয়, ধর্ষণের সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও। এই প্রেক্ষাপটেই নজর কাড়ছে পিঙ্ক-এর ট্রেলর! যেখানে আইনজীবী দীপকের ভূমিকায় অমিতাভ নায়িকাকে সটান বলছেন, ‘‘ইউ আর আ উওম্যান অব কোয়েশ্চেনেবল ক্যারেক্টার!’’
কোর্টরুমে এক জন মহিলাকে কী ভাবে হেনস্থা হতে হয়, তা আশির দশকেই দেখিয়েছিল তপন সিংহ পরিচালিত ‘আদালত ও একটি মেয়ে’। গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি বিচার চাইতে গিয়ে শুধু আদালতে কোণঠাসা হয়নি। তনুজা অভিনীত উর্মিকে ব্রাত্য করতে শুরু করেছিল সমাজও। নব্বইয়ের দশকে মুক্তি পায় রাজকুমার সন্তোষীর ‘দামিনী’। দুঁদে আইনজীবীর ভূমিকায় অমরীশ পুরী ভরা আদালতে মীনাক্ষী শেষাদ্রিকে ক্ষতবিক্ষত করছিলেন প্রশ্নবাণে। ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহন’। ইন্দ্রাণী হালদারকে প্রশ্ন করছেন নির্মলকুমার। জিজ্ঞেস করছেন, রাত করে অটোয় পুরুষ সহযাত্রীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরা তাঁর নিয়মিত অভ্যাস কি না!
যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করা ইস্তক মহিলাদের এই দ্বিতীয় দফার হেনস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্র, থানা থেকে আদালত, সর্বত্র দাঁড়াতে হয় আতসকাচের নীচে। আনন্দবাজার সেটা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিল অমিতাভ বচ্চনের কাছেই। অমিতাভ এই মুহূর্তে খুবই উত্তেজিত ছবিটা নিয়ে। ফেসবুকে লিখেছেন, পুরুষের মানসিকতা বদল হওয়া খুব দরকার। বলেছেন, স্বপ্ন দেখেন এ দেশ ধর্ষণমুক্ত হোক।
আর মহিলাদের চরিত্রহননের সংস্কৃতি? অমিতাভ বলেন, ‘‘হ্যাঁ এটা খুবই অপমানজনক এবং চিন্তার বিষয়। আমাদের এ বিষয়ে গোড়া থেকে ভাবতে হবে। আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের পড়াশোনা এবং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের দিকে নজর দিতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করালেন, ‘‘নির্যাতিতা যদি লজ্জায় বাকরুদ্ধ হয়ে যান, তাতেও কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। বরং কখনও কখনও কঠিন সিদ্ধান্ত— আপাত অস্বস্তিজনক হলেও ন্যায়বিচারের পথকে মসৃণ করে।’’
পিঙ্ক-এর কাহিনি ঘোরাফেরা করবে নির্ভয়ার শহর দিল্লিতেই। পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘সাধারণ ঘটনা থেকে কী হয়ে যেতে পারে, দেখাবে ছবিটা। পথচলতি যে কোনও মেয়েই এই সমস্যায় পড়তে পারে।’’
এ ছবির ভাবনা শুরু হল কী ভাবে? প্রযোজক সুজিত সরকার বললেন, ‘‘এক দিন ঝুমা (স্ত্রী) আর আমি চা খেতে খেতে কাগজ পড়ছিলাম। সেখানে একটা লেখা বেরিয়েছিল নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে। ঝুমা বলে উঠল, এখনও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে লিখতে হবে? এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই। বলতে পারেন ওটাই উস্কে দিয়েছিল ছবির ভাবনাটা।’’
সুজিত আর অনিরুদ্ধ, দু’জনেই মেয়ের বাবা। অনিরুদ্ধ বললেন, ‘‘রোজ সকালে খবরের কাগজে অসংখ্য খবরে বিচলিত হয়েছি। আমরা সবাই মিলে ভেবেছি। অনেকগুলো ভাবনা থেকে এই জায়গায় পৌঁছেছি।’’
বাস্তবে মহিলাদের যে ভাবে হেনস্থা হতে হয়, ছবিও তা-ই দেখাল। কিন্তু তার পর কী? অনিরুদ্ধ বলছেন, ‘‘কোথায় পৌঁছতে চাইছি আমরা, সেটা জানতে ছবিটা দেখতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy