Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

সেন্টিমেন্টাল। স্পর্শকাতর। অন্তর্মুখী। তাঁর সম্পর্কে এই বিশেষণগুলোই এত দিন ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। কিন্তু মুম্বইয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে অন্য এক তব্বু-র সঙ্গে দেখা করলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তওঁর ফ্ল্যাটে ঢুকলেই একটা চেনা সুগন্ধ স্বাগত জানায়। ঢুকেই চোখ চলে যায় দেওয়ালে। সেখানে দেওয়াল জুড়ে হুসেনের দু’টো পেইন্টিং। সামনে ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা একটা শালপাতার ঠোঙা। অর্ধেক খোলা। উঁকি দিচ্ছে দু’গাছি বেলফুলের মালা। মুম্বইতে তখনও বর্ষা নামেনি। এর মধ্যে বেলফুল? “বাড়িতে আমি বেলফুলের মালা আনাই। রোজই। গন্ধটা দারুণ লাগে,” বলেন তব্বু। বেলফুলের সেই সুবাসের মধ্যেই কোথাও যেন লুকিয়ে আছে পুরনো চেনা এক পৃথিবী। ফুলের গন্ধে ভেসে ওঠে একটা ভাবমূর্তি যার পরতে পরতে ছুঁয়ে আছে রোমান্টিসিজম। কোথাও যেন তা মিলে মিশে একাত্ম হয়ে যায় তব্বুর ইমেজের সঙ্গে। যা বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে। সিনেমায়। সিনেমার বাইরেও।

ছবি: প্রসাদ নায়েক

ছবি: প্রসাদ নায়েক

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

ওঁর ফ্ল্যাটে ঢুকলেই একটা চেনা সুগন্ধ স্বাগত জানায়।

ঢুকেই চোখ চলে যায় দেওয়ালে। সেখানে দেওয়াল জুড়ে হুসেনের দু’টো পেইন্টিং। সামনে ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা একটা শালপাতার ঠোঙা। অর্ধেক খোলা। উঁকি দিচ্ছে দু’গাছি বেলফুলের মালা।

মুম্বইতে তখনও বর্ষা নামেনি। এর মধ্যে বেলফুল?

“বাড়িতে আমি বেলফুলের মালা আনাই। রোজই। গন্ধটা দারুণ লাগে,” বলেন তব্বু। বেলফুলের সেই সুবাসের মধ্যেই কোথাও যেন লুকিয়ে আছে পুরনো চেনা এক পৃথিবী। ফুলের গন্ধে ভেসে ওঠে একটা ভাবমূর্তি যার পরতে পরতে ছুঁয়ে আছে রোমান্টিসিজম। কোথাও যেন তা মিলে মিশে একাত্ম হয়ে যায় তব্বুর ইমেজের সঙ্গে। যা বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে। সিনেমায়। সিনেমার বাইরেও।

কিন্তু তিনি কি সত্যিই এই রকম?

মিল খুঁজে পাওয়াটা খুব সহজ, বলছেন তব্বু। আর ততটাই বিপজ্জনক।

কিছুক্ষণ গল্প করে গাড়িতে ওঠা হল। শহরে এক হোটেলে লেট নাইট ডিনার। যাওয়ার পথে বেলফুলের কুঁড়ির মতো একেকটা পাপড়ি সরিয়ে সরিয়ে নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। পরিচয় করিয়ে দিলেন এমন এক তব্বুর সঙ্গে যার একটা জগৎ রয়েছে আর্ট ফিল্ম, শেক্সপিয়র আর রেক্লুসিভ সেন্টিমেন্টালিটির বাইরেও।

তব্বু সম্পর্কে একটা ধারণা আছে তিনি সেন্টিমেন্টাল, স্পর্শকাতর আর অন্তর্মুখী। এটা কি সত্যি?
একেবারেই উল্টো। মনে হয় আমি যে ধরনের ছবি করেছি তা থেকেই আমার সম্পর্কে কিছু ধারণা তৈরি হয়েছে। আমার নিজের ধারণা, ওঁরা মনে করেন আমি প্রচুর বই পড়ি। কিংবা ইন্টেলেকচুয়াল স্নব। আর সেটা বুঝতে পারতাম যখন আমাকে খুব অদ্ভুত...

...চরিত্র করতে বলা হত?
না। সেটা তাও ঠিক আছে। ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেই আমি এই ধারণাটা পেয়েছি। অভিনেত্রী হিসেবে নানা ধরনের ছবিতে কাজ করতে চাই। তবে ছবির তব্বু আর বাস্তবের তব্বু তো এক নয়। আমি চাই মানুষ সত্যিকারের তব্বুকে চিনুক।

আসল তব্বু কে?
আমি বরং আপনাকে বলি আসল তব্বু কে নয়...

অনেকেই তো ভাবেন আপনি ‘মকবুল’, ‘হায়দার’ করেছেন, তাই শেক্সপিয়র নিয়েই বলবেন...
হ্যাঁ, ভাবে তো। মগর মুঝে কোই আইডিয়া নহি হ্যায় অ্যাবাউট শেক্সপিয়র।

খুব কম লোকেই আপনার মতো এই সত্যিটা স্বীকার করবে...
এর কারণ আমার ইন্টেলেকচুয়াল স্নবারি পছন্দ হয় না। ওই যে সারাক্ষণ যাঁরা আঁতেল ছবি দেখেন না তাঁদেরকে ছোট করে দেখাটা একদম পছন্দ নয়। আরে সব ধরনেরই মানুষ আছে। তাঁদের বিভিন্ন রকমের চিন্তাধারা। আমি মোটেও চাই না আমাকে এমন কোনও গ্রুপের সঙ্গে জড়ানো হোক। আমার কমেডি দেখতে দারুণ লাগে। সারাক্ষণ হাসতে ভালবাসি। ডেভিড ধবনের কমেডি আমার অসম্ভব প্রিয়। লোকে ভুলে গিয়েছে যে আমি এক সময় ‘বিবি নম্বর ওয়ান’ করেছিলাম। কেরিয়ারের ওই ফেজটা দারুণ মিস করি। লোকের সুবিধে হয়েছে বলে কিছু কিছু রোলে আমাকে কাস্ট করেছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার সেই সিনেমার চরিত্রের ইন্টারপ্রিটেশনের কোনও যোগ নেই। এক জন অভিনেতার অর্ধেক কাজ হয়ে যায় যদি তাঁকে সেই চরিত্রের মতো দেখতে লাগে। তখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অভিনয় করলে, বা খুব ভেবে অভিনয় করলেও প্রতিক্রিয়া একই হয়। আমি যদি কোনও দিন পরিচালক বা প্রযোজক হই তা হলে আউট অ্যান আউট কমেডি বানাব।

ও রকম প্ল্যান আছে নাকি?
না না। বলছি দর্শক হিসেবে আমার কমেডি দেখতে ভাল লাগে। তবে আমি স্বেচ্ছায় ওই আঁতেল ইমেজটা তৈরি করিনি। আমি তো অনেক বই/সিনেমার নামও জানি না।

তার মানে ইমেজটাতে দমবন্ধ লাগে...
অ্যাবসলিউটলি। আমার তো ওই ফারহা-সাজিদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো খুব মনে পড়ে। যখন সিলি সিলি ব্যাপার নিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়তাম। আমি তো কখনও ওই ছবিগুলো করিনি এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে আমাকে এক দিন রাজনীতিতে যোগ দিতে হবে এবং সেই কারণে আমার ইমেজে একটা ক্রেডিবিলিটি দরকার।

নিউ-এজ ডিরেক্টররা আপনার ইন্টেলেকচুয়াল ইমেজ নিয়েই পড়ে আছে...
সেটা তো আছেই। সব চেয়ে ভাল ব্যাপার হল মজা আর সিরিয়াসনেসের মধ্যে কোনও ভাগ নেই। মজা মানেও সিরিয়াস। দেখনে কা নজারা বদল গয়ে হ্যায়। নানা ধরনের ভাবনাচিন্তা রয়েছে। আমাদের দেশে নানা রকমের পরিচালক নানা ভাবে গল্প বলেন। সেখানে টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়াটা খুব চাপের। পুরোটাই আসলে কন্ডিশনিং। আমরাও যখন অ্যাকশন ফিল্মের কথা ভাবি, তখন অজয় দেবগণ, সানি দেওলের নাম মনে করি। তবে এটাও ঠিক আপনি যে ভাবে নিজের ইমেজ বানাবেন সে ভাবেই ইমেজ তৈরি হবে। আমাকে যদি বিকিনিতে সারা বছর দেখা যায়, তা হলে আমার ওই ইমেজটাই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাবে।

কিন্তু তাঁতের শাড়ি আর বেলফুলের সাজে আপনাকে ভাবতে অনেকেই বেশি স্বচ্ছন্দ....
হ্যাঁ। তাঁরা আমাকে এই সাজে দেখতে কমফর্টেবল।

এই ইমেজের জন্য কখনও কি সম্পর্ক তৈরি করতে অসুবিধে হয়েছে?
না। তা হয়নি। কিন্তু এটা বলতে পারি সাফল্য এলে সবাই একটা পার্টিকুলার ইমেজের সঙ্গে রিলেট করে। তখন সময় লাগে আসল মানুষের সঙ্গে রিলেট করতে। আমি চাই না লোকে তব্বু বললেই সিরিয়াস ইমেজটা ভাবুক। আমার গুলজার সাবের লেখা দারুণ লাগে। আবার আর ডি বর্মনের গান শুনতেও ভালবাসি। ভাল লাগে হিমেশ রেশমিয়া শুনতে। যখন উনি টেলিভিশনে কাজ করছেন আমার দিদি তার প্রত্যেকটায় কাজ করেছে।

আপনার ওই নাকি সুর ভাল লাগে?
আরে, আমার ওর সব ক’টা হিট গান আমার আইপডে আছে। ‘বেবিডল’ গানটা আমার দারুণ পছন্দের। যখনই রেডিওতে গানটা হয় আমি ভলিউম বাড়িয়ে দিই। আপনি কি জানেন, আমি সুদোকু করতে খুব ভালবাসি? যদিও অনেক সময়ই মেলাতে পারি না।

এমন কোনও কাল্ট ছবি আছে যা দেখেননি?
যখন আমি ‘নেমসেক’ করি, মীরা (নায়ার) আমাকে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখিয়েছিল। এর আগে ছবিটা দেখিনি। মনে আছে হায়দরাবাদে আমার বাড়ি তৈরির সময়ে একটা ভিডিও লাইব্রেরির মেম্বার হয়ে যাই। সেখান থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলো ভাড়া নিয়ে দেখতে আরম্ভ করি। ভোর তিনটে অবধি চলত ছবি দেখা। সঙ্গে কাপের পর কাপ চা। মনে আছে তখন দেখেছিলাম ‘চারুলতা’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘মহানগর’ ও ‘অপুর সংসার’।

(ততক্ষণে হোটেল পৌঁছে গিয়েছি। তব্বু ইতালিয়ান রেস্তোরাঁর দিকে এগিয়ে যান। বাড়িতে মাছ খেলেও বাইরে উনি নিরামিষ খান। অর্ডার দিলেন ভেজিটেবল স্প্যাগেটি। তাতে বাদ দিতে বললেন ফুলকপি, শসা আর বাদাম।)

আপনার অনুরাগীরা মনে করেন বই পড়া, সিনেমা দেখা এ সব থেকেই আপনার অভিনয় অনুপ্রাণিত...
আরে না। আই অ্যাম আ ভেরি সিনেমা ইললিটারেট পার্সেন। আমি বাস্তব জীবনে যে ভাবে ব্যবহার করি সেই পদ্ধতি দিয়ে সিনেমায় অভিনয় করি।

অভিনয়ের দু’টো পদ্ধতি আছে। এক, অভিজ্ঞতায় যা দেখেছেন তেমনটাই করলেন। দুই, পরিচালকের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া...
আমি দ্বিতীয়টাই করি। আই অ্যাম আ ডিরেক্টরস্ অ্যাক্টর। গতকালই মেঘনা গুলজারের ‘তলোয়ার’য়ের শ্যুটিং করতে গিয়ে ইরফান বলছিল, “তোমার আর কী আছে... তুমি সেটে এসে বলবে: ‘আমাকে বলো কোথায় দাঁড়াতে হবে, কোথায় বসতে হবে, কী বলতে হবে...’ তার পর বলবে তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করো! তুমি তো আর রোলটা নিয়ে বেশি এক্সপ্লোর করতে চাও না!” (হাসি)

উনি কি ঠিক বলেছিলেন?
আরে, হ্যাঁ। ইরফান বলার পরই কিন্তু আমি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি।
(পাশ থেকে একটা গলা। ডেভিড ধবন পুত্র অভিনেতা বরুণ ধবন।
বরুণ: হাই!
তব্বু: আরে, হাই। জিমে এসেছিলে?
বরুণ: সুইমিংয়ে এসেছিলাম।
তব্বু: বাবা কেমন আছেন? এই মাত্র বলছিলাম তোমার বাবার কথা। ওর সঙ্গে কাজ করা কতটা মিস করি।
বরুণ: বাবা ভাল আছেন। স্পিরিচুয়াল কানেক্ট আছে আপনাদের। দু’টো ক্রেজি ছবিও তো করেছিলেন বাবার সঙ্গে।
তব্বু: প্লিজ, গিভ মি আ বিগ হাগ।)


‘হায়দার’ ছবিতে তব্বু

বরুণের ‘ম্যয় তেরা হিরো’ দেখেছেন?
একটু ভাবতে দিন...

ওটায় ‘পালাট...’ গানটা আছে...
ওহ্ ওইটা। ‘তেরা ধ্যন কীধর হ্যয়...’ (গাইতে শুরু করলেন)

আচ্ছা, কখনও এমন হয়েছে যে স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের সময় আপনি মানসিক ভাবে একদম সুইচ অফ করে দিয়েছেন?
হয়েছে। কিন্তু চিত্রনাট্য যিনি শোনান, তাঁকে সেটা বুঝতে দিইনি।

তার মনে স্ক্রিপ্ট পড়ার সময়ও আপনি অভিনয় করে যান যাতে কেউ অপমানিত বোধ না-করেন...
আমি সুইচ অফ করে নিই। তারপর আমি ভিশ্যুয়ালস নিয়ে চিন্তা করি। ক’টা সিন আছে, কস্টিউমটা কেমন হবে, মেকআপটা কেমন হবে... সঙ্গে সঙ্গে আমি শ্যুটিং প্রসেসে ঢুকে পড়ি। ডেভিড ধবনের ছবির সেটের পরিবেশটাই এমন প্রাণবন্ত। আমি খুব উপভোগ করি। ওটা আমার কাছে বাড়ির মতো। অবশ্যই, ইনটেন্স ছবিগুলোরও নিজস্ব একটা স্পেস আছে। সেটাও ভীষণ ইন্টারেস্টিং।

কিন্তু সেই স্পেসে আপনি বলতে পারেন না ‘বেবি ডল’ পছন্দ...
কেন বলতে পারব না? ভান করা লোকদের সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি না। আমি সেই সব মানুষদের পাশে থাকতে চাই যারা জানে তারা কারা আর সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট।

অনেক অভিনেতা বলেন আর্টি সিনেমায় পরিচালকরা কখনও কম টাকা পান না। শুধু অভিনেতারাই কম টাকা পান। আপনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন?
ওহ্, হ্যাঁ, এমনটা হয়েছে।

যাই হোক, এ বার বলুন ‘হায়দার’য়ে আপনার শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। আর আমি আপনাকে শেক্সপিয়র বা অয়েদিপাউস কমপ্লেক্সের ব্যাখ্যা করতে বলছি না...
(হেসে) ‘হায়দার’য়ে শ্যুটিং করাটা বেশ শক্ত ছিল। ২৬ বছর পর কাশ্মীরে গেলাম। বিশালের সঙ্গেও অনেক বছর পর কাজ করলাম। নভেম্বর-জানুয়ারিতে ভীষণ ঠান্ডা। প্রথম হাফটা বিশাল চেয়েছিল শরৎকালে করতে। আর পরের অংশটা শীতে। কাশ্মীরে আমার আত্মীয়রা আছে। ওদের সঙ্গে অনেক বছর পরে দেখা হল। ভাবছিলাম, এত বছরে কেন ওখানে গেলাম না? কারণটা যদিও সবাই জানেন। আমার খুব খারাপই লাগছিল এটা ভেবে যে, এত ছবি এখানে শ্যুট হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে একটা গ্যাপ পড়ে গেল। আমি ’৮৬-’৮৭-তে ওখানে গিয়েছিলাম। আমার দিদির ওখানে ‘হামারা খানদান’-এর শ্যুট করেছিল। আমার মনে আছে রণবীর (কপূর) এসেছিল চিন্টুজি (ঋষি কপূর)-র সঙ্গে ওই শ্যুটিংয়ের সময়। ওর তখন পাঁচ বছর বয়স। আমি স্কুলে পড়ি। ‘হায়দার’য়ের শ্যুট করতে গিয়ে ওই সব দিনের কথা বেশ মনে পড়ছিল। কাশ্মীরে ওই রকম একটা পিরিয়ড পিস শ্যুট করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আমরা ’৯০-এর ব্যাকড্রপ ব্যবহার করেছি। কাশ্মীরে বেশি কিছু বদলায়নি। তাই আর ’৯০-এর দশক ধরার জন্য ওখানে বেশি পাল্টাতে হয়নি।

শাহিদ কপূরের সঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
আমি শাহিদের মায়ের রোলে অভিনয় করছি। আমি ওকে অন্য ভাবে চিনি। অনেক দিন ধরেই আমরা দু’জনে একটা বড়সড় বন্ধুদের দলের অংশ।

তা ওঁর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করাটা শক্ত হয়নি?
আমি তো রোলের অফারটা পেয়ে প্রথমে হেসে গড়িয়ে পড়েছিলাম। পরে, চরিত্রটা নিয়ে ভাবলাম। শাহিদ এই ছবিটার সহ-প্রযোজক। তাই, এই কাস্টিংয়ের সিদ্ধান্তের পিছনে ওরও খানিকটা অবদান ছিল। শ্যুটিংটা ভীষণ ইনটেন্স ছিল। আমি তো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এমনকী হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল।

‘মকবুল’য়ের পর বিশাল ভরদ্বাজ কতটা বদলেছেন?
‘মকবুল’য়ের পরে ওর সঙ্গে আর আমার যোগাযোগ ছিল না। একসঙ্গে কাজও করিনি। সোশালিও কখনও দেখা হয়নি। কিন্তু আমার কাছে, ও একই রকম আছে। ‘মকবুল’ একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, ও এই ছবিটা করার পর প্রোডিউসর হয়েছে। ওর টিম আছে। ‘মকবুল’ বা ‘হায়দার’ দু’টোতেই দেখেছি বিশাল সেটে খুব একটা ইন্সট্রাকশন দেয় না। এখন অনেকটা ‘মেলো’ হয়েছে। ওর সঙ্গীত একই রকমের আছে। ছবিতে ও যে ‘র’ ইমোশনটা আনে, সেটাও একই আছে। ওর সঙ্গে গুলজারসাবের সম্পর্কও একই রকম আছে।

নীরজ পান্ডের ছবির জন্য তো মরিশাস থেকে শ্যুট করে ফিরলেন...
হ্যাঁ। ছবিটার নাম ঠিক হয়নি। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। ইদানীং শ্যুটিংয়ের সময় এত মজার অভিজ্ঞতা হয়নি। ছবিতে খুন আছে, সাসপেন্স আছে। অথচ ছবির শ্যুটিংটা কি মজার! ফিরে দেখলে একটা জিনিস লক্ষ্য করছি। এ যাবৎ এমন কিছু লোকের সঙ্গে শ্যুট করছি যাদের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। বিশালের সঙ্গে আবার কাজ করলাম। আসলে বিশালের সঙ্গে আবার কাজ করতে হলে ‘হায়দার’য়ের মতো ছবিই করতে হত। সলমনের সঙ্গে ১৭ বছর পর কাজ করলাম ‘জয় হো’তে। এই ছবিতেই মনোজের সঙ্গে ১৪ বছর পর কাজ করলাম। আমরা যখন ‘ঘাত’, ‘দিল পে মত লে ইয়ার’ করেছিলাম, তখন একই সোশাল সার্কেলে ছিলাম। এই ছবির শ্যুটিং করাটাও খুব কমফর্টবল ছিল। আমরা একটা রিসর্টে ছিলাম। আমার রুমের সামনের একটা রুমেই শ্যুট করছিলাম। প্রতিদিন হেঁটে সেটে যেতাম। ২৪ দিনে পুরো শ্যুটিং শেষ করেছিলাম। রিল্যাক্সড একটা এক্সপিরিয়েন্স। কখনও কখনও নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, আমি কাজ করছি তো, না কি?

এত ইনটেন্স ছবি, আর তার শ্যুটিংয়ে এত রিল্যাক্সড?
হ্যাঁ, আসলে সেটাই হয়। ‘চাঁদনী বার’ একটা ডার্ক ছবি। কিন্তু সে ছবির শ্যুটিং করেছি হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়েই। মনোজের সঙ্গে এই ছবিটাও ইনটেন্স আর এজি। কিন্তু শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতাটা একদম আলাদা। এটাই জীবন। মানুষের ইমেজ বলুন আর সিনেমা করার অভিজ্ঞতা। যা দেখা যায়, আসলে তার বাইরেও একটা সত্যি আছে।

পুনশ্চ: হোটেল থেকে বেরিয়ে ফেরার পথে তব্বুর একটা কথা বারবার মনে পড়ছিল: ‘যা দেখা যায়, আসলে তার বাইরেও একটা সত্যি আছে।’ তব্বুকে যেমন খুঁজে পাওয়া যায় বেলফুলের সুবাসের মধ্যে, ঠিক একই ভাবে তাঁকে ছোঁয়া যায় ‘বেবিডল’ গানের ছন্দে। ‘একটা ইমেজ’ বলে বোধহয় কিছু হয় না। জীবনের নানা বৈপরীত্যের মধ্যেই হয়তো ধরা রয়েছে তাঁর চিরন্তন আবেদন। আর তাই বোধহয় তাঁর ক্ষেত্রেই ভীষণভাবে প্রযোজ্য হয়ে ওঠে ‘অটোগ্রাফ’য়ের সেই গান ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’। কোনও ঔদ্ধত্য থেকে নয়, তাঁর নিজস্বতাকে কুর্নিশ জানাতেই এই উদ্ধৃতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

interview tabbu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE