নতুন চেহারায় অপুকে দেখতে জয়া বচ্চন ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার রবীন্দ্রসদনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
‘তরুণ অপু’ পর্দায় আসা পর্যন্ত অবশ্য অপেক্ষা করেননি ওঁরা কেউই। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’র মূল নেগেটিভ পুনরুদ্ধারের গল্পটা শুনতে ও দেখতে রবিবার রবীন্দ্র সদনে ‘প্রবীণ অপু’র পাশেই বসেছিলেন জয়া বচ্চন।
পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই প্রথম বার ঝকঝকে প্রিন্টে অপুকে নিয়ে তিনটি ছবি পরপর দেখার সুযোগ পেল কলকাতা। রবিবার বিকেলে, রবীন্দ্রসদনে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে।
সত্যজিতের যুবক অপু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং মহানগর-এর সেই ছটফটে কিশোরী জয়া— সত্যজিতের নবজন্মপ্রাপ্ত ছবি তিনটি এ দেশে প্রথম বার দেখানোর মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন দু’জনেই। জয়ার কথায়, ‘‘সিনেমা এ দেশের সংস্কৃতির মেরুদণ্ড। আর এই ছবি তো বাংলা ছবির মেরুদণ্ড।’’ সেই মেরুদণ্ডের ব্যথা সারানোর ‘ডাক্তার’ তথা ক্রাইটেরিয়ন কালেকশন সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন মঞ্চে। ‘‘অসামান্য কাজ! দুর্দান্ত শুরু,’’ বলে সৌমিত্রও তাঁদের ধন্যবাদ জানালেন।
যাদের উদ্যোগে এই উদ্ধারকাজের সাক্ষী হল কলকাতা, সেই ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সংস্থা ১০০টি বাংলা ছবির হতশ্রী নেগেটিভ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর প্রেক্ষাগৃহে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি সচিব বিবেক কুমার বলছিলেন, ‘‘কলকাতা ও বাইরের জনা ৬০ অংশগ্রহণকারী, সিনেমার পুরনো প্রিন্ট সংরক্ষণের খুঁটিনাটি শিখবেন। রাজ্য সরকারের সিনেমা শতবার্ষিকী ভবনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন সরকারি কর্মীও কর্মশালায় শামিল হবেন।’’
ক্রাইটেরিয়ন এবং অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর যুগ্ম প্রয়াসে অপু ট্রিলজি-র পুনরুদ্ধারের গল্পটা আনন্দবাজারকে বলছিলেন, বিশেষজ্ঞ দলের তরফে লি ক্লাইন, অ্যাবি লুস্টগার্টেন, ফুমিকো তাকাগো-রা। ক্রাইটেরিয়ন-এর টেকনিকাল ডিরেক্টর লি ক্লিনের কথায়, ‘‘এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের কাজ বেশি করিনি। প্রথম যখন নেগেটিভগুলো দেখি, ধরতে গেলেও ঝুরঝুর করছিল।’’ অপু ট্রিলজি পুনরুদ্ধারের কাহিনি এখন সিনেমা সংরক্ষণের পাঠশালায় শিক্ষণীয় একটি অধ্যায়।
সত্যজিতের অস্কারপ্রাপ্তির সময়ই নজরে আসে মূল নেগেটিভগুলির দুর্দশা। কিন্তু তা সংরক্ষণের জন্য লন্ডনে নিয়ে গেলে হেন্ডারসন ল্যাবরেটরির আগুনে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা। তখনই এগিয়ে আসে আমেরিকার অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্কাইভ ও ক্রাইটেরিয়ন। ইটালির বোলোনিয়ার একটি সংস্থায় দগ্ধ, ভঙ্গুর নেগেটিভে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। নেগেটিভ ফিল্মের যে অংশ প্রোজেক্টরের সঙ্গে যুক্ত করে চালানো হয়, তার কিছুটা বাদ দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হয়। এর পরে নেগেটিভ ফিল্ম স্ক্যান করে নতুন দাগমুক্ত ডিজিটাল প্রিন্ট গঠন। ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুরের কথায়, ‘‘কাজটা ফিল্ম সংরক্ষণবিদদের অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রেরণা জোগাবে।’’ আজ, সোমবার আরও একটি পুনরুদ্ধার করা কিংবদন্তি ছবি, উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’ উৎসবে দেখানোর কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy