Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নাটক দেখতে এলই না ‘নাটকের শহর’

নাটকের শহর বলে নবদ্বীপের অহঙ্কার কয়েক শতাব্দীর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেই ১৫০৯ থেকে। পণ্ডিতদের মতে ওই সময়ে চৈতন্যদেব রুক্মিণীহরণ পালার আয়োজন করে ছিলেন। নিমাই নিজে সেখানে রুক্মিণী চরিত্রে অভিনয় করেন। বলা হয় বঙ্গদেশে এটিই মঞ্চাভিনয়ের প্রাচীনতম প্রয়াস। সেই থেকে নবদ্বীপকে বাংলা নাটকের সেই আঁতুড়ঘর বলা হয়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

নাটকের শহর বলে নবদ্বীপের অহঙ্কার কয়েক শতাব্দীর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেই ১৫০৯ থেকে। পণ্ডিতদের মতে ওই সময়ে চৈতন্যদেব রুক্মিণীহরণ পালার আয়োজন করে ছিলেন। নিমাই নিজে সেখানে রুক্মিণী চরিত্রে অভিনয় করেন। বলা হয় বঙ্গদেশে এটিই মঞ্চাভিনয়ের প্রাচীনতম প্রয়াস। সেই থেকে নবদ্বীপকে বাংলা নাটকের সেই আঁতুড়ঘর বলা হয়।

এই শহরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার অভিনীত ‘ফেরা’ নাটকের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল ঠিক আড়াই দিনের মাথায়। নান্দীকারের ‘মাধবী’ নাটকের মঞ্চস্থ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই টিকিট ফুরিয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের মাইক বের করে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়। কিংবা সব্যসাচী চক্রবর্তী, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় অভিনীত নাটকের দু’দিন আগে থেকে আয়োজকদের বন্ধ রাখতে হয়েছিল মোবাইলের সুইচ। টিকিটের জন্য হাহাকার।

এ হেন নাটকের শহরে দেখা গেল পুরো ভিন্ন ছবি। ৪ মার্চ মঙ্গলবার নবদ্বীপ পুরসভার রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চে ‘স্বপ্নের দেশ’ সংস্থা আয়োজন করেছিল এক নাট্যসন্ধ্যার। কলকাতা রঙ্গিলার নাটক ‘মা এক নির্ভীক সৈনিক’ মঞ্চস্থ হয়। কৌশিক করের পরিচালনায় প্রযোজনাটি ইতিমধ্যে ভাল নাটক হিসাবে নাট্য রসিকদের প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু কৌশিক কর, অঙ্কিতা মাঝির অভিনয় সমৃদ্ধ নাটকটি দেখতেই এলেন না নবদ্বীপের নাট্যরসিক দর্শকেরা।

উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, সাড়ে আটশো দর্শক আসনের প্রেক্ষাগৃহের মাত্র দেড়শো টিকিট বিক্রি হয়েছে। নাট্যসন্ধ্যার যাবতীয় খরচ মিলিয়ে ষাট হাজার টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। প্রায় দর্শক শূন্য প্রেক্ষাগৃহে অভিনয় শেষে পরিচালক অভিনেতা কৌশিক করের আক্ষেপ, “নবদ্বীপের দর্শক নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য মানুষ আমাদের নাটক দেখতে এলেন না। হয়তো তেমন কোনও নামী তারকা নেই, তাই। নাটকটা কিন্তু আমরা যত্ন করেই করেছিলাম।”

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নবদ্বীপের দর্শক নাটক ভালবেসে নয়, তারকা দেখতে আসেন? আয়োজক সংস্থার সম্পাদক দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘প্রচার থেকে শুরু করে টিকিট বিক্রি করার জন্য সবাই যা যা করে, সবই তো করেছিলাম। ডিসেম্বর মাসে নাটকের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার দিয়ে শুরু। এর পর গত এক মাস ধরে হোর্ডিং, ব্যানার, পোস্টার এবং মাইক প্রচার সবই চলেছে। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য মাইকে প্রচার বন্ধ ছিল, তাই সরাসরি গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বিপুল টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হল ‘স্বপ্নের দেশ’-এর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE