Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Father's Day 2024

বাবা হল বটবৃক্ষের ছায়া, জন্ম দিলেই কি সেই ছায়া হয়ে ওঠা যায়? পিতৃদিবসে প্রশ্ন রাতুলের

আমার রিয়ানের বাবা হয়ে ওঠাটা রূপাঞ্জনার চাপিয়ে দেওয়া নয়, সবটাই খুব সহজ ভাবে হয়েছে, বললেন পরিচালক।

(বাঁ দিক থেকে) রাতুল মুখোপাধ্যায়, রিয়ান মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র।

(বাঁ দিক থেকে) রাতুল মুখোপাধ্যায়, রিয়ান মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র। ছবি: ফেসবুক।

রাতুল মুখোপাধ্যায়
রাতুল মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ১৪:০৩
Share: Save:

আমার কাছে বাবা দিবসের আলাদা কোনও গুরুত্ব নেই। কারণ, আমার জীবনে বাবার গুরুত্বটা বছরের বারোটা মাসের। আমার পিতৃত্ববোধটা মনে হয় এসেছে আমার বাবাকে দেখে। এখন আমারও একটি পরিবার আছে। আমিও বাবা। আমাদের তিন জনের সংসার। আমি, রূপাঞ্জনা ও রিয়ান। আমার জীবনে যখন রিয়ান আসে, ওর বয়স তখন সাড়ে তিন বছর। ও খুব ঝকঝকে একটি বাচ্চা। খুব বুদ্ধিমান। আমার আর ওঁর স্বভাবে বেশ কিছু মিল রয়েছে, সে কথায় পরে আসছি। তবে রিয়ান আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে।

আমার বাবা হয়ে ওঠার গল্পটা কেমন? তার আগে বলব, রূপাঞ্জনার কথা। রিয়ানের জন্মের পর থেকে ওকে একা হাতে মানুষ করেছে রূপাঞ্জনা। ও যতটা দায়িত্বশীল মা, ঠিক ততটাই ভাল মেয়ে। ওর কাছে পরিবার হল সবার আগে। তবে রূপাঞ্জনা মানুষটাই এমন যে, কারও প্রতি কিছু চাপিয়ে দেওয়াতে ও বিশ্বাসী নয়। আমার তাই, রিয়ানের বাবা হয়ে ওঠাটা রূপাঞ্জনার চাপিয়ে দেওয়া নয়, সবটাই খুব সহজ ভাবে হয়েছে।

বাবা হওয়াটা আলাদা একটি বিষয়। আমাদের একসঙ্গে চলার এই সফরে রূপাঞ্জনা আমাকে এ ব্যাপারে আরও বেশি যত্নশীল হতে সাহায্য করেছে। আমার আর রিয়ানের সমীকরণটা খুব সহজ। আমার কাজ থেকে ফিরতে দেরি হলে, আর কেউ ফোন করুক না করুক, রিয়ান খোঁজ নেবেই। কখন ফিরব আমি, কেন দেরি হচ্ছে, সবটা জানবে।

আমরা একে অপরকে ‘চ্যাম্প’ বলে ডাকি। আমরা দু’জন দু’জনকে ভালবাসি, তার থেকে বেশি খুব ‘মিস্’ করি। বেশি ক্ষণ দেখতে না পেলে আমরা একে অপরের সঙ্গ পেতে ছটফট করি। বেশ বুঝতে পারি, আমি ওকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। এ বার আমাদের যে মিলটা রয়েছে, সেটা বলি। রিয়া‌নের এখন বয়স ১০ বছর। এই বয়সেই ও আমার দেখাদেখি ছবি সম্পাদনার কাজটা রপ্ত করেছে অনেকটা। ভিডিয়ো বুঝে বুঝে প্রতিটা ফ্রেম ধরে ধরে সম্পাদনার কাজ করতে পারে ও। যেটা সচরাচর এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায় না।

রাতুল, রিয়ান, রূপাঞ্জনা ফ্রেমবন্দি।

রাতুল, রিয়ান, রূপাঞ্জনা ফ্রেমবন্দি। ছবি: ফেসবুক।

মোটে দু’টি বর্ণের একটি শব্দ, ‘বাবা’। কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যেই আকাশজোড়া বিশাল ছাতার একটি ছায়া লুকিয়ে রয়েছে। যদিও এটা এখনও জানি না যে, আমি রিয়ানের বাবা হয়ে উঠতে পেরেছি কি না! খুশি হব, যদি এক দিন জানতে পারি, সেই সম্পর্কটি অর্জন করতে পেরেছি আমি! তবে এই ক’টা বছরে রিয়ানের এক জন ভাল বন্ধু ও ওর জীবনের বিশ্বস্ত আশ্রয় হয়ে উঠতে পেরে আমি খুশি।

আমার আর ওর সম্পর্কের জায়গাটি ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারব না। বাবারা হলেন বটবৃক্ষের ছায়া, কিন্তু জন্ম দিলেই কি সেই ছায়া হয়ে ওঠা যায়? বাবার স্নেহ যারা পেয়েছে, তারা সেই মূল্যটা বোঝে। তারা সেই অদৃশ্য ছায়াটিকে অনুভব করতে পারে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলি। আমাদের সমাজে ভাল বা মন্দ দু’ধরনের মানুষই রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল। এক শ্রেণির মানুষ আবার অসহায় বা কেউ রূঢ় বা নিষ্ঠুর। এর মাঝে অবশ্য সমাজমাধ্যমের জগৎ রয়েছে, যাকে বলে ‘ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড’।

অনেকে এই মুঠোফোন-বন্দি কিছু অ্যাপের এই জগতকে ‘সমাজ’ ভেবে ফেলেন। তাঁরা নেহাতই বোকা। সমাজমাধ্যমকে হাতিয়ার করে আজকাল অনেকেই একটি মানুষকে না জেনেই বড় বড় সব মন্তব্য করে ফেলে। কটু কথা বলাটা যেন তাঁদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন তাঁরা। আমি সৌভাগ্যবান, এমন একটি পরিবেশে রয়েছি সে ভাবে বিরূপ মন্তব্যের মুখে পড়িনি কোনও দিন।

কেনই বা পড়ব বলুন তো? স্বার্থপরে ঘেরা এই পৃথিবী, চারদিকে দুর্নীতি, হিংসা। এর মাঝে নিষ্পাপ এক শিশুকে তাঁর জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজে আমি তার পাশে দাঁড়াতে চাইছি মাত্র কিংবা ভবিষ্যতে তাঁকে এই দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক করে গড়ে তুলতে যে হাতটা বাড়িয়েছি, তাতে তো কোনও অন্যায় নেই! পাপ নেই। আমি অন্তত মনে মনে এটা মানি। এ বার রায় আপনাদের! আছে কি? প্রশ্নটা এই সমাজের কাছেই নয় ছুড়ে দিলাম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE