Advertisement
১১ মে ২০২৪
Movie Review

Movie Review: এল সময় রাজার মতো...

আগের ছবিগুলির তুলনায় এ বারে কাকাবাবুর ‘অ্যাকশন’ তুলনায় কম। তবে রাজা রায়চৌধুরী রূপে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাপট আগের মতোই বহাল।

ছবির দৃশ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং আরিয়ান  ভৌমিক।

ছবির দৃশ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং আরিয়ান ভৌমিক।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ, আরিয়ান, সৃজিত
৬.৫/১০


আফ্রিকায় রাজা। রাজা রায়চৌধুরী। যার সঙ্গে এ বার মোলাকাত হয়েছে আফ্রিকার রাজার। শুধু তা-ই নয়, হাতি, হায়না, গন্ডার, জ়েব্রা-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণের খাসতালুকে কাকাবাবুর এ বারের অ্যাডভেঞ্চার। অতিমারি-পীড়িত সময় পেরিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ‘প্রত্যাবর্তন’, অর্থাৎ কামব্যাক করল কাকাবাবু আর সন্তু। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে মুক্তি পাওয়া সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই ছবিটি সিনেমা হলে বসে দেখতে দেখতে একটা কথা মনে হতে পারে। ছবির শুরুতেই অবশ্য সে আভাস দিয়ে রেখেছেন পরিচালক। তা হল, পুরো ছবিটিই যেন একটা নয়নাভিরাম আফ্রিকান সাফারি! ‘লায়ন কিং’, ‘বর্ন ফ্রি’ দেখে বেড়ে উঠেছে যে প্রজন্ম, (সব প্রজন্মের ক্ষেত্রেই অবশ্য এ কথা সত্যি), আফ্রিকার প্রেমে পড়েছে বারবার, তাদের জন্যই যেন তৈরি এ ছবি। তা ছাড়া বড় পর্দায় উপভোগ করার মতো এমন বাংলা ছবি সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। শুধু ‘ভিসুয়াল ট্রিট’ হিসেবেও যদি এ ছবিকে দেখা যায়, তা হলে বড় পর্দা ছাড়া গতি নেই। আসলে সব ছবি ‘ওটিটি-তে এলে দেখে নেব’ গোছের মনোভাব পোষণ করার মতো নয়। ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’-এর মতো ছবি তো নয়ই।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’-কে ভিত্তি করে এ ছবি তৈরি। যদিও ফারাক রয়েছে গল্প, প্রেক্ষাপট, চরিত্রনির্মাণে। মাসাই মারার বুকে এক হোটেলে সন্তুকে নিয়ে ছুটিযাপনে এসেছে কাকাবাবু। বিমানবন্দরে নেমেই অবশ্য গরমিলের আঁচ পাওয়া যায়। শুধু ছুটি কাটানো যে এ বারও হবে না, তা স্পষ্ট হয়ে যায়, যখন সেখানকার হোটেল সংক্রান্ত এক তথ্য সামনে আসে। যে হোটেলে থাকার কথা কাকাবাবু-সন্তুর, জঙ্গলের মধ্যে সেই হোটেল থেকে মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যাচ্ছে পর্যটকরা। হোটেল ব্যবসার রেষারেষি ও কূটনীতি, বন্যপ্রাণের চোরাকারবারে জড়িয়ে থাকা ‘দুষ্টু লোক’রা শেষ পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে দেয় না কাকাবাবু-সন্তুকে। এই অভিযানে তাদের সঙ্গে প্রথম থেকেই শামিল হয় এক তৃতীয় ব্যক্তিও।

সৃজিত তাঁর ছবির জটায়ুকে এ ছবিতে অন্য মোড়কে (অমল দে) হাজির করেছেন। ‘বাবুদা ফেলুদা বানাচ্ছেন, জটায়ুর খোঁজ করছেন’ জাতীয় সংলাপও গুঁজে দিয়েছেন বুদ্ধি করে। অবশ্যম্ভাবী প্রসঙ্গ এসেছে শঙ্কর, ফেলুদার। কাকাবাবু-সন্তু-অমলবাবুর কথোপকথনে উঠে এসেছে জঙ্গল আর তার জানোয়ার সম্পর্কিত নানা তথ্য। সংলাপের ফাঁকে ফাঁকে শব্দ নিয়ে খেলা, আফ্রিকার মানচিত্র কৌতূহল তৈরি করবে ছোটদের মধ্যে। সিংহদের পরিবারতন্ত্র থেকে শুরু করে ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট— বিবিধ বিচিত্র বিষয়ে দর্শকের ‘জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত’ করেছেন পরিচালক! ধু-ধু জঙ্গলে কাকাবাবু-সন্তুকে যখন হাতি, গন্ডার এমনকি সিংহ পর্যন্ত আক্রমণ করে, সে সব দৃশ্য দিব্যি উতরে গিয়েছে ভিএফএক্সের সঙ্গতে। শুধু সন্তুকে সাপে কামড়ানোর দৃশ্যটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারত। ছবির মধ্যে বিজ্ঞাপনী প্রচার ঢুকিয়ে দেওয়ার জায়গাগুলিও বড্ড দৃষ্টিকটু।

ছবির আরও একটি মুশকিল, গল্পের শ্লথ গতি। রহস্যকে কোথাও কোথাও ছাপিয়ে গিয়েছে আফ্রিকা ভ্রমণপর্ব। প্রকৃতির অফুরন্ত সম্ভারে পূর্ণ সে সব নিসর্গ মাঝে মাঝেই ভুলিয়ে দিচ্ছিল, আসলে কাকাবাবুর সঙ্গে আমরাও দুষ্টু লোকের খোঁজে চলেছি। তা নিয়ে অবশ্য এক জব্বর চমকও রয়েছে শেষে। তবুও রহস্য তেমন জটিল নয় এখানে, কতকটা যেন আঁচও করা যায়।

আগের ছবিগুলির তুলনায় এ বারে কাকাবাবুর ‘অ্যাকশন’ তুলনায় কম। তবে রাজা রায়চৌধুরী রূপে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাপট আগের মতোই বহাল। তাঁর হাত ধরে দর্শক এ বারেও নিজেদের সন্তুর আসনে বসিয়ে আফ্রিকা পাড়ি দিতে পারেন স্বচ্ছন্দে। সন্তুর চরিত্রে আগের তুলনায় পরিণত হয়েছেন আরিয়ান। অনির্বাণ চক্রবর্তী একেনবাবু আর জটায়ুর খোলস ছেড়ে আরও একধাপ এগিয়ে খেলেছেন এই ইনিংসটি। এই তিন অভিনেতা ছাড়া মুখ্য অভিনেতাদের প্রায় সকলেই ভিনদেশি, যাঁদের কাস্টিং চরিত্রদের সঙ্গে মানানসই। ছবির শুরুতে রূপম ইসলামের কণ্ঠে ‘ফিরে এল কাকাবাবু’ এবং শেষে ‘চন্দ্রবিন্দু’র গাওয়া ‘তিন তিরিক্ষে নয়’ উপভোগ্য। শ্রীজাতর কলম ও ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের আবহসঙ্গীত ছবির মেজাজ তৈরি করে দিয়েছে। কথায় বলে, আফ্রিকার জঙ্গলে যেখানে ক্যামেরা বসানো যায়, সেখানেই ফ্রেম মেলে! তবে কেনিয়ার যে রূপ তাঁর লেন্সে আর অজস্র ড্রোন শটের মাধ্যমে ধরেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার, তা আলাদা প্রশংসার দাবি রাখে।

২০২০ সালের বড়দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল যে ছবির, তা ২০২২-এর সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে মুক্তি পেয়েছে বড় পর্দায়। মাঝে অতিমারির ঝাপটা অনেকটাই নড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে বিনোদন-ইন্ডাস্ট্রির ভিত। কাকাবাবু-সন্তুর অভিযানে শামিল হয়ে যদি দর্শকের প্রত্যাবর্তন ঘটে সিনেমা হলে, সেটিই হবে এ ছবির সবচেয়ে বড় পাওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review kakababur protyaborton Srijit Mukherji
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE