Advertisement
২০ মার্চ ২০২৩
cinema

গল্পেই নিহিত জাদুমন্ত্র

, নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:৪৫
Share: Save:

একটা ভাল ম্যাজিক শোয়ের জন্য কী লাগে? প্রপস, সুন্দর পোশাক তো বাহ্য, ভাল জাদুকরের অঙ্গুলিহেলনেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকেন দর্শক। এ ছবির গল্পই আসল জাদুকর। কাস্টিং ভাল, অভিনয় ভাল, গান ভাল, সংলাপও ভাল... ‘কিন্তু সবার চাইতে ভাল’ গল্প আর ছড়ার সুর। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল এ ছবির প্রাণবিন্দু। কিন্তু একাধিক বিষয় নিয়ে জাগলিং করতে গিয়ে পরিচালনায় ত্রুটি রয়ে গেল যে!

Advertisement

ছবির গল্প শুরু হয় ইন্দ্রজিৎকে (অঙ্কুশ) দিয়ে। সে একাধারে ম্যাজিশিয়ান ও ফ্যাশন ডিজ়াইনার। ছবি জুড়ে তার ম্যাজিকের নমুনা মন্দ নয়। ইন্দ্রজিৎ কাজ শুরু করে এক ফ্যাশন হাউসে। সেখানে তার সিনিয়র কৃতীর (ঐন্দ্রিলা) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এর পরে একদিন ইন্দ্রজিৎ নিজের আস্তানায় কৃতীকে নিয়ে হাজির হয়, মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় করাবে বলে। কৃতীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ম্যাজিক দেখানোর ছলে দাঁড় করিয়ে দেয় বন্ধ আলমারির সামনে। জাদুর বুলিতে খুলে যায় সে আলমারি, বেরিয়ে আসে দুটো নরকঙ্কাল। ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় কৃতী। এই কঙ্কাল কি ইন্দ্রজিতের মা-বাবার? এর পরে কৃতীর কী হয়?

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের প্লট ভালই বুনেছেন গল্পকার। মোচড় রয়েছে ছবির বেশ কয়েক জায়গায়। পুরো চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক ও প্রাসঙ্গিক কিছু ঘটনার ভিত্তিতে। কিন্তু বাদ সাধে ছবির ট্রিটমেন্ট। প্রথমার্ধে ইন্দ্রজিৎ-কৃতীর প্রেমপর্ব চলে বাঁধা গতে। জোর করে গুঁজে দেওয়া হয়েছে প্রেমের গান ও নাচ। ছবির মেদবৃদ্ধি ছাড়া কোনও ভাবে সহায় হয়নি তা। প্রথমার্ধে ঐন্দ্রিলার সাজপোশাকও বেশ চড়া লাগে। তার পাশে অঙ্কুশের সাজপোশাক সাদামাঠা হওয়ায় তা আরও বেশি করে চোখে পড়ে। বিরতির পর থেকে বদলাতে থাকে ছবি... আগ্রহ তৈরি হয়।

এ ছবির জিয়নকাঠি অঙ্কুশ। ইন্দ্রজিতের চরিত্রে অনেক পরত যোগ করার চেষ্টা করেছেন অভিনেতা। যোগ্য সঙ্গত করেছেন ঐন্দ্রিলা। বড় পর্দায় প্রথম বার হলেও সাবলীল তাঁর অভিনয়। বিদীপ্তা চক্রবর্তী এ ছবির অন্যতম প্রাপ্তি। ডিগ্ল্যাম লুকে, শরীরী ভাষায় অসুস্থ মানুষকে যে ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা প্রশংসনীয়। ছবির গানও উল্লেখযোগ্য। হল থেকে বেরোনোর পরেও মনে থেকে যায় ‘হাত বাড়ালেই পড়বে ধরা চোখ’...

Advertisement

ম্যাজিক
পরিচালনা: রাজা চন্দ
অভিনয়: অঙ্কুশ, ঐন্দ্রিলা,
বিদীপ্তা, দেবশঙ্কর
৬/১০

ছবির ট্রিটমেন্ট কিছু জায়গায় বেশ সুন্দর। আবোল তাবোলের লাইনের সঙ্গে দৃশ্যায়নও মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষত, আকাশ কালো করে মেঘের পরে বৃষ্টিস্নাত অঙ্কুশকে ক্যামেরায় খুব সুন্দর ভাবে ধরা হয়েছে। অঙ্কুশের বাড়ির দৃশ্যে লাল আলোর ব্যবহার, আলোআঁধারির অ্যাম্বিয়েন্সও মানানসই চিত্রনাট্যের সঙ্গে। কিন্তু পরিচালক দর্শকের উপরে ভরসা রাখেননি। দৃশ্য যা ব্যক্ত করে, তা-ই আবার অভিনেতাদের সংলাপের মাধ্যমে বলিয়েছেন। এখানেই ছবির ধার নষ্ট হয়েছে একাধিক বার। দক্ষ জাদুকর কিন্তু উহ্য রাখেন বেশি।

আরও প্রশ্ন রয়ে গেল পরিচালকের কাছে। বিজ়নেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার থেকে ফ্যাশন হাউসে প্রথম সাক্ষাৎকারেই ডিজ়াইনারের চাকরি পাওয়া কি এতই সহজ? জাদুবলেই তা সম্ভব হয়তো!

বাংলা ছবির গল্প এখন পাল্টাচ্ছে। বদলাচ্ছে গল্প বলার ধরন। এ ছবির ন্যারেশনে আর একটু যত্ন প্রয়োজন ছিল। জাদুকরের সুন্দর পোশাক আর ভাল প্রপসের ভরসায় কি জাদু সফল হয়? দর্শককে বশ করতে পারাই তো আসল ম্যাজিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.