Advertisement
১১ মে ২০২৪
Ajay Devgan

বুদ্ধিদীপ্ত রিমেক নয়

লুথার নামটির সঙ্গে বাইবেলের যোগ পাওয়া কঠিন নয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রলয়ের সমার্থক রুদ্র। দর্শক রুদ্র চরিত্রটির রাগ দেখলেন। নামচরিত্রের ‘অ্যাঙ্গার ইসু’ বোঝাতে হয়তো সিরিজ়ের এমন নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা ছাড়া সিরিজ়টির ভারতীয়করণ হল কোথায়?

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ ০৯:৪৭
Share: Save:

রুদ্র: দি এজ অব ডার্কনেস
(
ওয়েব সিরিজ়)

পরিচালনা: রাকেশ মাপুসকর

অভিনয়: অজয়, রাশি, অতুল, অশ্বিনী, এষা

৫.৫/১০

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পা রাখলেন অজয় দেবগণ, ব্রিটিশ ক্রাইম থ্রিলার ‘লুথার’-এর অফিশিয়াল রিমেক ‘রুদ্র-দি এজ অব ডার্কনেস’ দিয়ে। ইদ্রিস অ্যালবা অভিনীত সিরিজ় অনুসরণে সাজানো হয়েছে দেশি সংস্করণ। হুবহু একই দৃশ্য, একই প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রায়ন। অবশ্য জন লুথারের কর্মকাণ্ড লন্ডনে, ডিসিপি রুদ্রবীর সিংহের (অজয় দেবগণ) দৌড়াদৌড়ি মুম্বইয়ে। রাকেশ মাপুসকর পরিচালিত এই সিরিজ়ে বাজিরাও সিংহম (সিংহম) নন অজয়, অমিত কুমারও (গঙ্গাজল) নন! কিন্তু তিন দশকের কেরিয়ারে অজয় এবং মুম্বই পুলিশ সমার্থক। তবু ওটিটিতে পা রাখার জন্য অজয় কেন এমন রিমেক সিরিজ় বেছে নিলেন, সে প্রশ্ন রয়েই যাবে।

থ্রিলার হলেও ‘লুথার’-এর গতি রুদ্ধশ্বাস নয়। গতি নেই ‘রুদ্র’তেও। তার প্রধান কারণ, সিরিজ়ের মুখ্য চরিত্রে এমন এক পুলিশ অফিসার, যার পেশাদার জীবনের অন্ধকার ব্যক্তিজীবনে ছায়া ফেলে। আইনের রক্ষক হয়েও সে নিজের হাতে আইন তুলে নেয়, যার জন্য শাস্তিও পায়। ব্রিটিশ সিরিজ় ‘লুথার’ দেখা থাকলে, ‘রুদ্র’-এ আবিষ্কার করার কিছু নেই। সেটি সিরিজ়ের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অ্যাডাপটেশনের নিজস্বতা না থাকলে, তা কখনও ছাপ ফেলতে পারে না। ইদ্রিস না অজয়—লড়াই তা নিয়ে নয়। তবে কয়েকটি বিষয় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। তার অনুরূপ দেশজ সিরিজ়ে দেখানো হলেও, তা যেন হারিয়ে যায় ভাষান্তরে। থ্রিলারপ্রেমীদের কাছে ‘লুথার’ এগিয়ে থাকলেও, ‘রুদ্র’ থাকবে পিছনের সারিতে।

প্রায় এক ঘণ্টার ছ’টি পর্বের প্রথম চারটিতে তুলে ধরা হয় চারটি জঘন্য অপরাধ। অপরাধীরা প্রত্যেকেই বিকারগ্রস্ত। কেউ সিরিয়াল কিলার, কেউ বা ভ্যাম্পায়ার, কেউ বা শৈশবে বাবা-মায়ের হেনস্থার শিকার। তারা যেন রুদ্রর বুদ্ধিমত্তাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। প্রথম পর্বের সম্ভাব্য অপরাধী আলিয়া চোক্সীর (রাশি খন্না) সঙ্গে তৈরি হয় রুদ্রর কড়া-মিঠে সম্পর্ক। শেষ দু’টি পর্বে উন্মোচিত হয় রুদ্রর কুড়ি বছরের সহকর্মী ডিসিপি গৌতমের (অতুল কুলকার্নি) অজানা সত্যি। অপরাধী ধরার পাশাপাশি রুদ্র এবং শায়লার (এষা দেওল) সম্পর্কেরও নানা বাঁক দেখতে থাকেন দর্শক। অপরাধীর মন বুঝতে দক্ষ রুদ্র ছুঁতে পারে না তার স্ত্রীর মনের তল। শায়লা লিভ-ইন করে রাজীবের সঙ্গে (সত্যদীপ মিশ্র)।

মুম্বইয়ের প্রেক্ষাপটে গল্প সাজানো হলেও, রক্ত-মাংসের মুম্বই যেন এ সিরিজ়ে অনুপস্থিত। সিরিজ়ের প্রাণ এবং আকর্ষণ অজয়। সিগারেট মুখে অজয়ের তীক্ষ্ণ চাহনি তাঁর অনুরাগীদের আশাহত করবে না। বড় পর্দায় দেখা অজয়ের উচ্চকিত পুলিশ ইমেজের চেয়ে রুদ্র পরিণত এবং চাপা স্বভাবের। বয়সের ছাপও সে ভাবে ধরা পড়েনি অজয়ের চেহারায়। রুদ্রর ঊর্ধ্বতনের চরিত্রে অশ্বিনী কলসেকর, আশিস বিদ্যার্থী এবং অধস্তনের চরিত্রে তরুণ গহলৌত সুন্দর মানিয়েছেন। অনেক দিন পরে পর্দায় এষাকে দেখা গেলেও, তাঁর অভিনয় তথৈবচ! আলিয়ার চরিত্রে দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশি খন্না চেষ্টা করেছেন। ব্রিটিশ সিরিজ়ের রুথ উইলসনের সঙ্গে তুলনা করলে, তিনি অবশ্য অনেক পিছিয়ে!

লুথার নামটির সঙ্গে বাইবেলের যোগ পাওয়া কঠিন নয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রলয়ের সমার্থক রুদ্র। দর্শক রুদ্র চরিত্রটির রাগ দেখলেন। নামচরিত্রের ‘অ্যাঙ্গার ইসু’ বোঝাতে হয়তো সিরিজ়ের এমন নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা ছাড়া সিরিজ়টির ভারতীয়করণ হল কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajay Devgan Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE