Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
Rishav Basu

Rishav Basu: দেবলীনা, বিবৃতি, সোহিনী, সকলের সঙ্গেই প্রেম! এর মাঝে ভেস্তে গেল আমার আসল সম্পর্ক: ঋষভ

নামের পাশে তকমা বড় প্রযোজনা সংস্থার ‘জামাই’! চারপাশ নারী-ময়। এটাই নাকি এই প্রজন্মের ‘শ্রীকান্ত’ ঋষভ বসু। নায়ক নিজে এ সব উপভোগ করেন?

দেবলীনা, বিবৃতি, সোহিনী, ঋষভ

দেবলীনা, বিবৃতি, সোহিনী, ঋষভ

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১৭:১৪
Share: Save:

প্রশ্ন: সিরিজের ‘শ্রীকান্ত’ নাকি দারুণ ব্যস্ত?

ঋষভ:
আমি তো দেখছি আমার হাতে কোনও কাজই নেই! তথাগত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘গোপনে মদ ছাড়ান’ ছাড়া। তারই মহড়া চলছে। ওয়ান শট ছবি। যাতে কম ভুল করে দ্রুত শ্যুট করতে পারি আমরা। ‘শ্রীকান্ত’ বা ‘মহাভারত মার্ডারস’ গত বছরের শেষে শ্যুট হয়েছে। এটাই আমার ব্যস্ততার প্রকৃত ছবি (হাসি)। তার পরেও শুনতে হয়, আমি নাকি ‘হইচই-এর জামাই’!

প্রশ্ন: কার? শ্রীকান্ত মোহতা, মহেন্দ্র সোনি না বিষ্ণু মোহতার?

ঋষভ: এই নিয়ে ভীষণ মজার একটা ঘটনা আছে। আমি ‘শ্রীকান্ত’ সিরিজের লুক সেটে গিয়েছি। শ্রীকান্ত মোহতা সদ্য কলকাতায় ফিরেছেন। শ্যুটের অবসরে সিরিজের কার্যনির্বাহ প্রযোজককে নিয়ে একটু বেরিয়েছি। ফিরছি যখন, তখন নীচে নিরাপত্তা রক্ষীর প্রশ্ন, ‘‘কোথায় যাবেন?’’ আমরা বলেছি, ‘শ্রীকান্ত’র লুক সেটে যাচ্ছি। শুনেই তাঁর জবাব, ‘‘স্যর অর্থাৎ শ্রীকান্ত মোহতা এখনও অফিসে আসেননি।’’ বুঝিয়ে বলার পরে তিনি আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন। কাজ শেষে আমরা আবার বেরিয়ে আসছি। তখন আমাকে দেখিয়ে আর এক নিরাপত্তা রক্ষীকে আগের নিরাপত্তা রক্ষী বলছেন, ‘‘জানিস, শ্রীকান্ত মোহতার জীবনী ছবি হচ্ছে! ইনি শ্রীকান্ত স্যরের ভূমিকায় অভিনয় করছেন!’’ যাঁদের নাম বললেন তাঁদের কারওর জামাই নই। হওয়ার ইচ্ছেও নেই। (জোরে হাসি)

প্রশ্ন: ‘জামাই’ না হয়েই দু’পাশে দুই প্রেমিকা, সোহিনী সরকার, দেবলীনা দত্ত...

ঋষভ: অনুরাগীরাও যদি আপনার মতো সরাসরি এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন তো বলব, আমি দু’জনের সঙ্গেই চুটিয়ে প্রেম করছি। দু’জনেই দারুণ সুন্দরী। মারাত্মক অভিনয় করেন। (তার পরেই একটু গম্ভীর গলায়) এত ক্ষণ মজা করছিলাম। আমার সঙ্গে সোহিনীর কিন্তু সেটে খুবই কম কথা হত। যা হত সেটাও বেড়াল নিয়ে। আমাদের দু’জনেরই বেড়াল রয়েছে। আর দেবলীনাদি তো আমার দিদি। আমরা যেন একই মায়ের পেটের ভাই-বোন।

প্রশ্ন: বিড়াল নিয়ে কথাতেই সোহিনীর সঙ্গে রণজয় বিষ্ণুর প্রেম ভেঙে গেল!

ঋষভ: (হেসে ফেলে) সোহিনীর আগে থেকেই রণজয়দাকে চিনি। ভীষণ ভাল মানুষ। সোহিনীকেও ‘দিদি’ বলেই সম্বোধন করতাম। ‘শ্রীকান্ত’ করতে এসে সোহিনী বলল, আর দয়া করে ‘দিদি’ ডাকিস না। সেটে অভিনয় করতে পারব না। সেই থেকে সোহিনী। জানি, লোকে বলছে আমার জন্যই নাকি প্রেম ভেঙেছে। আমি ইতিবাচক ভাবেই কথাটা নিয়েছি। রোম্যান্টিক দৃশ্যে আমরা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য যে লোকে টলিউড এ রকম গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।

ঋষভ

ঋষভ

প্রশ্ন: ‘ভটভটি’-তে অভিনয়ের সময় বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে চর্চা! ‘শ্রীকান্ত’র মতোই দেখি আপনাকে ঘিরেও নারীর ঢল!

ঋষভ: এটা সেই ছোট থেকেই। মাত্র একুশেই প্রথম চাকরি একটি মেয়েদের স্কুলে। সেখানে আমি নাটকের শিক্ষক। প্রথম দিন ক্লাসে মাত্র ৫ জন। দ্বিতীয় দিন এক লাফে ৪৫ জন! অধ্যক্ষ বেজায় ভয় পেয়ে আমায় ডেকে বললেন, ‘‘গতিক সুবিধের নয়। তুমিও অল্পবয়সী। সাবধানে থেকো!’’ ধারাবাহিক ‘খড়কুটো’র আগে থেকেই তৃণা সাহাকে চিনি। তৃণা পরিচালক হতে চেয়েছিল। আমি ওর পরিচালনায় নায়কের ভূমিকায়। তখনও ছড়াল, আমি তৃণার প্রেমিক! অথচ, নীল ভট্টাচার্য-তৃণা-আমি কলেজের বন্ধু। তার পর বিবৃতি। সেখান থেকে সোহিনী। এখন দেবলীনা। এক এক সময় আমারই হাসি পায়।

প্রশ্ন: রেটিং চার্টে কাকে আগে রাখবেন?

ঋষভ: প্রেমই নেই তায় নাম্বারিং! আমি এ সবে নেই। সবাই আমার নায়িকা। সবার সঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধ হয়েছি। নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করেছি। সবার সঙ্গে ভাল, সুস্থ সম্পর্ক আমার। এই-ই যথেষ্ট। মাঝখান থেকে আমার সত্যিকারের প্রেমটাই ভেস্তে গেল!

প্রশ্ন: মানে?

ঋষভ: আমার এক বান্ধবী ছিল। আমার সব কাজের সঙ্গিনী। তখন মঞ্চাভিনেতা। আমাদের আড্ডা দেওয়ার দল ছিল। সে আমার ‘ছায়া’ হয়ে থাকত। ৬ বছর প্রেমের পর আচমকা ভেঙে গেল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমরা দু’জনেই। তার পরেই নাকে খত, আর প্রেমে নেই। বিয়েও করব না। নিজের মতো একা একা থাকব। সেটাই থাকি। কলকাতায় এখন একাই থাকি আমি।

প্রশ্ন: অকালপ্রয়াত পল্লবী দে-র মতো বেপথু হওয়ার ভয় নেই তো?

ঋষভ: পল্লবীর মতো আত্মহননের ইচ্ছে আমারও জেগেছিল। প্রথম বার ২০১৬-য়। একটি প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে নায়ক হওয়ার ডাক পেয়েছিলাম। তার জন্য বহু বড় কাজ ছেড়ে দিয়েছি। তিন মাস গা ঘামানো পরিশ্রম করিয়ে আমায় তারা বাদ দিয়ে দিয়েছিল। এক নায়কের ছেলে সেই জায়গায় আসবেন, তাই। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। দ্বিতীয় বার, অতিমারির সময়। কোনও কাজ নেই। জানি না, ‘ভটভটি’ মুক্তি পাবে কিনা। আগামী দিনে আদৌ আর কাজ পাব কিনা। ভাবতে ভাবতে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।

‘ভটভটি’তে বিবৃতি আর ঋষভ

‘ভটভটি’তে বিবৃতি আর ঋষভ

প্রশ্ন: মা-বাবার সঙ্গে থাকলে এতটাও হয়তো ভেঙে পড়তেন না…

ঋষভ: পড়তাম না। এখনও তো আমার মা চিন্তা করে, দেরিতে ফিরে ছেলে কী খাবে? আদৌ ছেলে খাবে তো? খারাপ সময়ে আমায় সামলে দিয়েছে ভাল বই, গান, বন্ধুরা আর আমার পোষ্য বেড়ালেরা। ওরা আমার মনখারাপ বুঝতে পারে। তখন বেশি করে গা ঘেঁষে থাকে। আদর করে। তা ছাড়া, লড়াই আমি ছোট থেকে দেখেছি। একটা সময় পর্যন্ত আমার বাবা গাড়ির চালক ছিলেন। মা বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষকতা করতেন। দেখতাম, দুপুরে না খেয়ে মা বাড়ি বাড়ি ঘুরে পড়াচ্ছেন। বাবা খেটে মরছেন। আমায় মানুষ করবেন বলে। অতিমারিতে যখন কাজ ছিল না, কয়েক জায়গায় চাকরির জন্য জীবনীপঞ্জি পাঠাব ভেবেছিলাম। কারণ, আমার যা শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে হেসেখেলে ভাল চাকরি পাব। কিন্তু পারিনি। মনে হয়েছে, আরও একটু দেখি। আমি যদি আমার প্যাশনকে আঁকড়ে থাকি তা হলে সে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না। পরিশ্রমের তো দাম আছে! সেই ভাবনা থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছি।

প্রশ্ন: টলিউডে তা হলে স্বজনপোষণ আছে?

ঋষভ: আছে তো। সে সব ধরে বসে থাকলে চলবে না। একজন অনামী নায়কের থেকে এক জনপ্রিয় নায়কের ছেলেকে সুযোগ দেওয়া অনেক নিরাপদ। সেটাই হয়েছিল আমার সঙ্গে। পরে সেই পরিচালক আমায় আবার ডেকেছিলেন। কাজের চাপে সাড়া দিতে পারিনি। তবে যাঁরা এ ভাবে কাজের সুযোগ পান সেই সব তারকা-সন্তানদের উপরেও কিন্তু মস্ত চাপ। সারা ক্ষণ বাবা বা মায়ের সঙ্গে তুলনা হয়। আমি সেই চাপমুক্ত।

প্রশ্ন: ‘মহাভারত মার্ডারস’-এ অভিনীত আপনার ‘ভিকি’ চরিত্রটি নাকি মহাভারতের শিখণ্ডীর আধুনিক রূপ?

ঋষভ: না, অর্জুনের বৃহন্নলা। পেশায় ভিকি বড়দের ছবি বানায়। কিন্তু যা করে সেটা ভীষণ মন থেকে করে। খারাপ, ভাল যা-ই হোক। খুব রঙিন মনের মানুষ। সেটা তার রঙিন চুল-যাযাবরদের মতো পোশাকেই ফুটে উঠেছে। চরিত্রটি ভীষণ খাঁটি। অভিনয় করে তৃপ্তি পেয়েছি।

প্রশ্ন: অনেকটা আপনার মতো?

ঋষভ: বলতে পারেন। যে কোনও কাজে আমি আগে মনের কথা শুনি। যে কোনও সমস্যার সমাধান হৃদয়ের পথে খুঁজি। তার মানে আমার মস্তিষ্ক নেই, সেটা নয়। আসলে, আমিও যা করি মন থেকে করি। ভাল-মন্দ, প্রেম-অপ্রেম, অভিনয়— সব কিছু। তার জন্য প্রচুর ভুলও করেছি। তাই হয়তো ‘ভিকি’ হয়ে উঠতে আমায় খুব খাটতে হয়নি।

প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে নারীঘটিত চর্চা কি এই কারণেই?

ঋষভ: আমায় নাকি অবাঙালির মতো দেখতে! মনে হয়, যেন পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের প্রতিনিধি। অর্থাৎ, গড়পড়তা বাঙালির মতো নই। আদতে আমি কিন্তু হুবহু আমার বাবার মতো দেখতে। আর আমার বাবা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। পরিবারের সবাই প্রচণ্ড ফর্সা। কাটা কাটা নাক-চোখ-মুখ। সেটাই কি মেয়েদের ভাল লাগার অন্যতম কারণ? প্রশ্ন ছুড়েই হো হো হাসি ঋষভের...

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE