প্রশ্ন: মা-বাবার সঙ্গে থাকলে এতটাও হয়তো ভেঙে পড়তেন না…
ঋষভ: পড়তাম না। এখনও তো আমার মা চিন্তা করে, দেরিতে ফিরে ছেলে কী খাবে? আদৌ ছেলে খাবে তো? খারাপ সময়ে আমায় সামলে দিয়েছে ভাল বই, গান, বন্ধুরা আর আমার পোষ্য বেড়ালেরা। ওরা আমার মনখারাপ বুঝতে পারে। তখন বেশি করে গা ঘেঁষে থাকে। আদর করে। তা ছাড়া, লড়াই আমি ছোট থেকে দেখেছি। একটা সময় পর্যন্ত আমার বাবা গাড়ির চালক ছিলেন। মা বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষকতা করতেন। দেখতাম, দুপুরে না খেয়ে মা বাড়ি বাড়ি ঘুরে পড়াচ্ছেন। বাবা খেটে মরছেন। আমায় মানুষ করবেন বলে। অতিমারিতে যখন কাজ ছিল না, কয়েক জায়গায় চাকরির জন্য জীবনীপঞ্জি পাঠাব ভেবেছিলাম। কারণ, আমার যা শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে হেসেখেলে ভাল চাকরি পাব। কিন্তু পারিনি। মনে হয়েছে, আরও একটু দেখি। আমি যদি আমার প্যাশনকে আঁকড়ে থাকি তা হলে সে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না। পরিশ্রমের তো দাম আছে! সেই ভাবনা থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছি।
প্রশ্ন: টলিউডে তা হলে স্বজনপোষণ আছে?
ঋষভ: আছে তো। সে সব ধরে বসে থাকলে চলবে না। একজন অনামী নায়কের থেকে এক জনপ্রিয় নায়কের ছেলেকে সুযোগ দেওয়া অনেক নিরাপদ। সেটাই হয়েছিল আমার সঙ্গে। পরে সেই পরিচালক আমায় আবার ডেকেছিলেন। কাজের চাপে সাড়া দিতে পারিনি। তবে যাঁরা এ ভাবে কাজের সুযোগ পান সেই সব তারকা-সন্তানদের উপরেও কিন্তু মস্ত চাপ। সারা ক্ষণ বাবা বা মায়ের সঙ্গে তুলনা হয়। আমি সেই চাপমুক্ত।
প্রশ্ন: ‘মহাভারত মার্ডারস’-এ অভিনীত আপনার ‘ভিকি’ চরিত্রটি নাকি মহাভারতের শিখণ্ডীর আধুনিক রূপ?
ঋষভ: না, অর্জুনের বৃহন্নলা। পেশায় ভিকি বড়দের ছবি বানায়। কিন্তু যা করে সেটা ভীষণ মন থেকে করে। খারাপ, ভাল যা-ই হোক। খুব রঙিন মনের মানুষ। সেটা তার রঙিন চুল-যাযাবরদের মতো পোশাকেই ফুটে উঠেছে। চরিত্রটি ভীষণ খাঁটি। অভিনয় করে তৃপ্তি পেয়েছি।
প্রশ্ন: অনেকটা আপনার মতো?
ঋষভ: বলতে পারেন। যে কোনও কাজে আমি আগে মনের কথা শুনি। যে কোনও সমস্যার সমাধান হৃদয়ের পথে খুঁজি। তার মানে আমার মস্তিষ্ক নেই, সেটা নয়। আসলে, আমিও যা করি মন থেকে করি। ভাল-মন্দ, প্রেম-অপ্রেম, অভিনয়— সব কিছু। তার জন্য প্রচুর ভুলও করেছি। তাই হয়তো ‘ভিকি’ হয়ে উঠতে আমায় খুব খাটতে হয়নি।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে নারীঘটিত চর্চা কি এই কারণেই?
ঋষভ: আমায় নাকি অবাঙালির মতো দেখতে! মনে হয়, যেন পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের প্রতিনিধি। অর্থাৎ, গড়পড়তা বাঙালির মতো নই। আদতে আমি কিন্তু হুবহু আমার বাবার মতো দেখতে। আর আমার বাবা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। পরিবারের সবাই প্রচণ্ড ফর্সা। কাটা কাটা নাক-চোখ-মুখ। সেটাই কি মেয়েদের ভাল লাগার অন্যতম কারণ? প্রশ্ন ছুড়েই হো হো হাসি ঋষভের...