Advertisement
১১ মে ২০২৪
TMC

Shreya Pandey: খুব বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে, ছেলে খুঁজে পাচ্ছি না: শ্রেয়া পাণ্ডে

কনভেন্ট স্কুলে পড়লেও কালীতলা মাঠ আর গোয়াবাগান বস্তির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। বাবা বলত, এরাই তোমার বন্ধু।

শ্রেয়া পাণ্ডে

শ্রেয়া পাণ্ডে

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ১২:৫২
Share: Save:

আনন্দবাজার অনলাইন: ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে যে যুবক প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁর দুই সন্তানেরও দায়িত্ব নিয়েছেন আপনি…।

শ্রেয়া: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন লোকনাথ দাস। সুন্দরবনে যাওয়ার পথে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারে তাঁর সন্তানদের দেখার কেউ ছিল না। মনে হল, ওদের দায়িত্ব আমার নেওয়া উচিত। ওদের মুখের দিকে চেয়ে নিজেকে আটকাতে পারিনি। আমি বলেছি, তোমাদের বাবা আমি! আমার সেই সিদ্ধান্ত বাবা কাগজ পড়ে জেনেছিল। আগে বাড়িতে বলিনি। আমি এমন খোলামেলাই মানুষ হয়েছি। নিজেই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমার বাবা সাধন পাণ্ডে সে ভাবেই বড় করেছেন আমায়।

প্রশ্ন: অতিমারির সময় করোনায় আক্রান্ত মানুষের বাড়ি খাবারও পৌঁছে দিয়েছেন তো।

শ্রেয়া: ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখে বড় হয়েছি। বাড়িতে রাজনীতি ছাড়া কিছু দেখিনি। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর অফিসে বসে মানুষকে পরিষেবা দিতে চেষ্টা করেছি। এই তো স্বাধীনতা দিবসে এলাকা জুড়ে ৫৭টা অনুষ্ঠান করেছি আমরা। মানিকতলা বিধানসভায় মেয়েদের নিয়ে ‘খেলা হবে’ দিবসে ফুটবল খেলা হয়েছে। সবাই খুব উপভোগ করেছে। তবে আমার মানুষের সঙ্গে থাকার কারণ কিন্তু রাজনীতি নয়। বাবা ছোটবেলায় যা শিখিয়েছেন আমি তা-ই করি। রাজনীতি করছি ভেবে করিনি। আরও একটু বিশদে বলি?

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই। বলুন।

শ্রেয়া: আমি নামী বেসরকারি কনভেন্ট স্কুলে পড়তাম। কিন্তু বাবা ছুটির দিনে নিজের এলাকায় নিয়ে যেত আমায়। তখন থেকেই আমার এলাকার প্রত্যেকটা বাড়ি, রাস্তা, অঞ্চলের সবাইকে আমি নামে চিনি। আমি কালীতলা মাঠ আর গোয়াবাগান বস্তির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। বাবা বলত, এরাই তোমার বন্ধু। আমার দু’বছরের বাচ্চাকেও তা-ই শিখিয়েছি আমি। বাস্তবটা যে শুধু ওই ঝাঁ চকচকে দুনিয়ার, হাই-হ্যালো আর কফি খাওয়া নয়, সেটা বয়স বাড়ার পরে বুঝেছি। সে সব পুরনো বন্ধুত্বের উদাহরণও আছে অনেক।

দরিদ্রের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন সাধন-কন্যা

দরিদ্রের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন সাধন-কন্যা

প্রশ্ন: যেমন?

শ্রেয়া: বাবা অসুস্থ হল। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সেই খারাপ সময়ে আমি পাশে অসংখ্য মানুষকে পেয়েছি। ওরাই ঘিরে থাকে আমায়। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যখন দেখলাম বাবার সুস্থতা কামনা করে আমার এলাকার সব ঘরে ঘরে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ হচ্ছে। সে দিন বুঝেছিলাম এরাই আমার পরিবার।

প্রশ্ন: আপনি তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টুইটে ‘বস্’ বলেছেন।

শ্রেয়া: আমি ‘বস্’ শব্দটা সচরাচর ব্যবহার করি না। ওকে আমার উচ্চ প্রশংসা করার কিন্তু কোনও দরকার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার অনুপ্রেরণা। অভিষেকের ভক্ত আমি। আমার থেকে অভিষেক বয়সে একটু ছোট। কিন্তু এত মর্যাদা আর সম্মান পেয়েও একটুও বদলায়নি। দিদির মতোই ও মাটিতে পা রেখে চলে। ওকে সম্মান করি।

প্রশ্ন: ২০১৭ সালে অবিবাহিত শ্রেয়া সারোগেসির মাধ্যমে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

শ্রেয়া: এ নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। তাই আগেই বলে দিতে চাই, কোনও উদাহরণ তুলে ধরার জন্য বা হ্যাশট্যাগের জন্য সারোগেসির মাধ্যমে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি। আমার মনে হয়েছিল। তাই করেছি। আমাদের পরিবারে আমার মেয়ে খুশি এনে দিয়েছে। বেশি সময় দিতে পারি না ওকে। তবে রাতে বাড়ি ফেরার পর ও যখন ‘মাম্মা’ বলে জড়িয়ে ধরে, তখন সব ক্লান্তি মুছে যায়।

প্রশ্ন: একটা সময়ে আপনি সারাক্ষণ টলিউডের অভিনেত্রীদের সঙ্গে থাকতেন। অনেকে ধরেই নিয়েছিল আপনি অভিনেত্রীই হবেন।

শ্রেয়া: না। রাজনীতিই আমার নেশা। অবশ্য পেশা নয়।

প্রশ্ন: আপনার সব অভিনেত্রী বন্ধুই কিন্তু এখন রাজনীতিতে।

বাবা সাধন পাণ্ডের সঙ্গে শ্রেয়া পাণ্ডে

বাবা সাধন পাণ্ডের সঙ্গে শ্রেয়া পাণ্ডে

শ্রেয়া: অভিনেত্রী হয়ে যদি রাজনীতিবিদই হতে হয়, তা হলে আমি বলতে চাই, আমি ঠিক রাস্তায় আছি। এটা ঠিকই যে, আমার সব অভিনেত্রী বন্ধু এখন রাজনীতিতে। যারা এখনও যোগ দেয়নি, তারাও ২০২৪-এ যোগ দিয়ে দেবে। তবে আমার মনে হয় রাজনীতির জন্য ২৪ ঘণ্টাও কম সময়। অসুস্থ হয়ে অক্সিজেনের কষ্ট পেয়ে আমার যে বাবা বলে আমি হাসপাতালে যাব না, ২১ জুলাই নষ্ট হয়ে যাবে, তার মেয়ে রাজনীতি ছাড়া আর কী জানবে বা বুঝবে? তবে এখানে একটা কথা বলতে চাই— মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। গরিব মানুষ খুব সাধারণ। ওরা দেখা হলে বুকে জড়িয়ে ধরে কথা বলতে চায়। ওদের কথা শোনার লোক নেই! যাঁরা রাজনীতিতে নতুন এসেছেন, তাঁদের একটা কথাই বলব— রাজনীতি কিন্তু ‘পার্টটাইম জব’ নয়।

প্রশ্ন: কারা ২০২৪-এ রাজনীতিতে আসবেন?

শ্রেয়া: যে বা যারা বাকি আছে। বুঝে নিন।

প্রশ্ন: শুভশ্রী বাকি আছেন।

শ্রেয়া: ওকে জিজ্ঞেস করুন। ও নিশ্চয়ই আসবে।

প্রশ্ন: আপনি কিন্তু ঘুরেফিরে রাজনীতির কথাই বলছেন। তা হলে রাজনীতিতে সরাসরি যোগ দিতে অসুবিধে কোথায়?

শ্রেয়া: আমি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেব কি না সেটা দল বুঝবে।

প্রশ্ন: মানে দল বললে আপনি যোগ দেবেন। তাই তো?

শ্রেয়া: হ্যাঁ, দেব।

প্রশ্ন: আর এই যে এত বাচ্চার দায়িত্ব নিচ্ছেন, বিয়েটা কবে করবেন?

শ্রেয়া: ছেলে পাচ্ছি না তো!

প্রশ্ন: মানে?

শ্রেয়া: আমি চাই বিয়ে করতে। খুব ইচ্ছে করে। একা থাকতে একদম ভাল লাগছে না আর। এই যে বাচ্চার অনলাইন ক্লাসের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, মনে হচ্ছিল, স্বামী থাকলে কাজটা ভাগ করে নেওয়া যেত। আনন্দবাজার অনলাইনে তো এই সাক্ষাৎকার বেরোবে। দেখি কেউ আসে কি না! প্লিজ, আপনারা একটা ছেলে খুঁজে দিন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Sadhan Pande Shreya Pande
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE