আনন্দবাজার অনলাইন: ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে যে যুবক প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁর দুই সন্তানেরও দায়িত্ব নিয়েছেন আপনি…।
শ্রেয়া: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন লোকনাথ দাস। সুন্দরবনে যাওয়ার পথে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারে তাঁর সন্তানদের দেখার কেউ ছিল না। মনে হল, ওদের দায়িত্ব আমার নেওয়া উচিত। ওদের মুখের দিকে চেয়ে নিজেকে আটকাতে পারিনি। আমি বলেছি, তোমাদের বাবা আমি! আমার সেই সিদ্ধান্ত বাবা কাগজ পড়ে জেনেছিল। আগে বাড়িতে বলিনি। আমি এমন খোলামেলাই মানুষ হয়েছি। নিজেই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমার বাবা সাধন পাণ্ডে সে ভাবেই বড় করেছেন আমায়।
প্রশ্ন: অতিমারির সময় করোনায় আক্রান্ত মানুষের বাড়ি খাবারও পৌঁছে দিয়েছেন তো।
শ্রেয়া: ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখে বড় হয়েছি। বাড়িতে রাজনীতি ছাড়া কিছু দেখিনি। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর অফিসে বসে মানুষকে পরিষেবা দিতে চেষ্টা করেছি। এই তো স্বাধীনতা দিবসে এলাকা জুড়ে ৫৭টা অনুষ্ঠান করেছি আমরা। মানিকতলা বিধানসভায় মেয়েদের নিয়ে ‘খেলা হবে’ দিবসে ফুটবল খেলা হয়েছে। সবাই খুব উপভোগ করেছে। তবে আমার মানুষের সঙ্গে থাকার কারণ কিন্তু রাজনীতি নয়। বাবা ছোটবেলায় যা শিখিয়েছেন আমি তা-ই করি। রাজনীতি করছি ভেবে করিনি। আরও একটু বিশদে বলি?
প্রশ্ন: নিশ্চয়ই। বলুন।
শ্রেয়া: আমি নামী বেসরকারি কনভেন্ট স্কুলে পড়তাম। কিন্তু বাবা ছুটির দিনে নিজের এলাকায় নিয়ে যেত আমায়। তখন থেকেই আমার এলাকার প্রত্যেকটা বাড়ি, রাস্তা, অঞ্চলের সবাইকে আমি নামে চিনি। আমি কালীতলা মাঠ আর গোয়াবাগান বস্তির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। বাবা বলত, এরাই তোমার বন্ধু। আমার দু’বছরের বাচ্চাকেও তা-ই শিখিয়েছি আমি। বাস্তবটা যে শুধু ওই ঝাঁ চকচকে দুনিয়ার, হাই-হ্যালো আর কফি খাওয়া নয়, সেটা বয়স বাড়ার পরে বুঝেছি। সে সব পুরনো বন্ধুত্বের উদাহরণও আছে অনেক।