Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বলিউড না দিদি, বাঁচার পথ হাতড়াচ্ছেন টলি-প্রযোজকরা

ভরসা ‘বম্বে লাইন’। নইলে, ‘দিদি আমি বাঁচতে চাই’। জোটের দাপটে খানিকটা এলোমেলো ভোটের হাওয়ায় টলিউডে এ সব সাঙ্কেতিক ভাষাই এখন উড়ে বেড়াচ্ছে। টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীদের সংগঠন তথা শাসক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র কর্তাদের সঙ্গে প্রযোজকদের বৈঠক তিক্ততার মধ্যে ভেস্তে গিয়েছে সোমবারই।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

ভরসা ‘বম্বে লাইন’। নইলে, ‘দিদি আমি বাঁচতে চাই’।

জোটের দাপটে খানিকটা এলোমেলো ভোটের হাওয়ায় টলিউডে এ সব সাঙ্কেতিক ভাষাই এখন উড়ে বেড়াচ্ছে। টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীদের সংগঠন তথা শাসক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র কর্তাদের সঙ্গে প্রযোজকদের বৈঠক তিক্ততার মধ্যে ভেস্তে গিয়েছে সোমবারই। যার পরে অনেকেই এই নতুন মন্ত্রের আবাহনে ভরসা রাখছেন।

এ মন্ত্রের অর্থ কী? জনৈক প্রযোজক মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির উদাহরণ পেশ করছেন। মুম্বইয়ে কলাকুশলীদের বিভিন্ন ইউনিয়নের বায়নাক্কা রুখতে প্রযোজকেরা এককাট্টা হয়ে এখন নতুন নিয়ম তৈরির পথে হাঁটছেন। এ মাসের গোড়ায় প্রযোজকেরা জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন। তাতে ঠিক হয়েছে— বলিউডে কলাকুশলী-শিল্পীদের কখন কী ভাবে নিয়োগ করা হবে, সে-বিষয়ে প্রযোজক সংগঠন ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনই শেষ কথাটা বলবে। ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের অন্য কোনও সংগঠন এ বিষয়ে নাক
গলাতে পারবে না। এই নতুন নিয়ম কার্যকর করতে দেশের বাণিজ্য-সংক্রান্ত নিয়ামক সংস্থা ‘কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া’রও দ্বারস্থ মুম্বইয়ের প্রযোজকেরা।

টালিগঞ্জের রথী-মহারথীরাও মনে করছেন, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে হলে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ফেডারেশনের দাদাগিরি ঠেকাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ‘বম্বে লাইনে’র পথে হাঁটা ছাড়া গতি নেই। এমনিতেই বাংলায় বাণিজ্যসফল ছবি বলতে হাতেগোনা। বক্স অফিস থেকে ছবির খরচ তুলতেই দম ছুট। তার উপরে ফেডারেশনের দাদাগিরি যেন খাঁড়ার ঘা। এক পোড়খাওয়া প্রযোজক বললেন, ‘‘ফেডারেশনকে দমানো না গেলে ইন্ডাস্ট্রির ঝাঁপ এক রকম বন্ধই করে দিতে হবে।’’

ফেডারেশনের সৌজন্যে টালিগঞ্জে শ্যুটিং করা যে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে, তা গোটা দেশেই ইতিমধ্যে চাউর হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ে প্রযোজক সংগঠনের চেয়ারম্যান অনিল নাগরাথের কথায়, ‘‘মা-মাটি-মানুষের বদলে টালিগঞ্জে মানি আর ইউনিয়নের রাজত্ব। এ সব বন্ধ না-হলে বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বরাবর মুখ থুবড়েই পড়ে থাকবে।’’

অবশ্য এই ‘বম্বে-লাইনে’র ভাগ্য অনেকটাই জড়িয়ে আছে ভোটের ফলের সঙ্গে। ভোটে গণেশ উল্টোলে ফেডারেশনের প্রভাব সহজেই খর্ব হতে পারে। কিন্তু তা না-হলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই, ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে থামানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থানেই মাথা খুঁড়তে হবে ইন্ডাস্ট্রির কেষ্টবিষ্টুদের। টালিগঞ্জের নতুন পরিভাষায় এই ‘প্ল্যান বি’ বা মমতামুখী পদক্ষেপের নামই ‘দিদি আমি বাঁচতে চাই’।

ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর কর্ণধার তথা টালিগঞ্জে প্রযোজক সংগঠন ইম্পা-র সভাপতি শ্রীকান্ত মোহতাও স্বরূপ-ব্রিগেডের ‘বাড়াবাড়ি’তে বীতশ্রদ্ধ বলে ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের খবর। শ্রীকান্ত, দেব থেকে শুরু করে অধুনা মমতার ঘনিষ্ঠ বলয়ে ঢুকে পড়া প্রযোজক-পরিচালক অরিন্দম শীল ইতিমধ্যেই স্বরূপদের ‘বাড়াবাড়ি’র কথা দিদির কানে তুলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কোনও ভাবে ফেডারেশনকে দমানো না-গেলে যে টলিউডের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে তা নিয়ে দ্বিমত নেই প্রযোজক-পরিচালকদের।

মমতার ‘কাছের লোক’ শ্রীকান্ত, দেব, অরিন্দমরা অবশ্য এ নিয়ে এ দিনও মুখ খোলেননি সংবাদমাধ্যমে। ভোটে কী হয়, সে-দিকে তাকিয়ে অনেকেই জল মাপছেন। কিন্তু টালিগঞ্জের ভিতরে বেসুরো মেজাজটাও বেশ স্পষ্ট। গত বছরে টালিগঞ্জের সব থেকে হিট ছবি ‘বেলাশেষে’র প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম মানতে গিয়ে বিদেশেও অনর্থক ১৯ জন কলাকুশলীর বোঝা বইতে হচ্ছে প্রযোজককে।’’ তরুণ প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান বলছেন, ‘‘মুম্বইয়ের প্রযোজকেরা যে ভাবে ভাবছেন, এখানেও কলাকুশলীদের কোথায়, কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, ঠিক করার এক্তিয়ার ফিল্মে লগ্নিকারী অর্থাৎ প্রযোজকদেরই থাকা উচিত।’’

স্বরূপ বিশ্বাস অবশ্য কোনও অভিযোগই কানে তুলতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধটা কোথায়? ফেডারেশনকে নিয়ে কোথাও কোনও অসন্তোষ নেই।’’ প্রযোজকদের মধ্যে রানা সরকারও স্বরূপের সুরেই সুর মিলিয়েছেন। স্বরূপ-ব্রিগেড তথা ফেডারেশন বিষয়ে তাঁর অভিমত, ‘‘ফেডারেশনকে সিন্ডিকেট তকমা দিয়ে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

EIMPA Tollywood Tollygunge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE