বিনয়ের সঙ্গেই ওই পুরস্কার প্রত্যাখান করেছেন দুজনেই।
সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি গত কাল বিশিষ্ট দুই সরোদশিল্পী আমন আলি খান ও আয়ান আলি খানকে উস্তাদ বিসমিল্লা খান যুব পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই শিল্পী অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান শেখর সেনকে চিঠি দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছেন ওই পুরস্কার। এই ঘটনায় আজ তোলপাড় দিল্লি। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি থেকে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক পর্যন্ত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে খবর। মন্ত্রক জানতে চেয়েছে, কেন এমন হল।
সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি সূত্র বলছে, গত ৮ জুন ইম্ফলে এক বৈঠকে হিন্দুস্তানি সঙ্গীত বিভাগে সরোদশিল্পী হিসেবে ওই দুই ভাইকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক গেরো এমনই যে ওই ভ্রাতৃদ্বয় পুরস্কার নিতে রাজি কি না, সেই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ। উস্তাদ আমজাদ আলি খান এখন তাঁর দুই পুত্রকে নিয়েই আমেরিকায়। অনুমতি ছাড়াই ওই পুরস্কার ঘোষণা হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দুই ভাই। অ্যাকাডেমি দুই ভাইকে পৃথক চিঠি পাঠিয়েছিল। জবাবে গত কালই যৌথ ভাবে চিঠি লিখে আমন ও আয়ান জানান, তাঁরা ওই যুব পুরস্কার গ্রহণ করতে পারছেন না, কারণ তাঁদের বয়স এখন ৪০। যে সাধারণ পরিষদ পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা তৈরি করছেন, তাঁদের সঙ্গেই গত পঁচিশ বছর ধরে দুই ভাই সরোদ পরিবেশন করে আসছেন। উস্তাদ বিসমিল্লা খানের কথাও সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে দুই ভাই বলেছেন, ‘‘ওঁর আশীর্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। জীবনের এই পর্বে এসে আমরা চাই, যারা নতুন তাঁরা ওই পুরস্কার পান। তাঁদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই পুরস্কার না নেওয়াটা উচিত কাজ হবে।’’
জানা গিয়েছে, কণ্ঠসঙ্গীত-শিল্পী অজয় চক্রবর্তী ওই বিচারকদের মধ্যে ছিলেন। অ্যাকাডেমি সূত্র বলছে, মনোনয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল। অ্যাকাডেমিরই এক কর্তার প্রশ্ন, ‘‘ঘটনাচক্রে ২০১০ সালেই অজয়বাবুর কন্যা কৌশিকী ওই পুরস্কার পেয়েছেন। আর আজ ২০১৭ সালের যুব পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে আমন-আয়ানকে!’’ এর আগে মিতা পণ্ডিত, সাবির খান, দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়, নীলাদ্রি কুমারের মতো অনেকেই ২০০৬-২০০৮ সালের মধ্যে ওই পুরস্কার পেয়েছেন। অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ এখন বুঝতে পেরেছেন যে, কাজটি ঠিক হয়নি। তাঁরা কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন বিচারকমণ্ডলীকেই। অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইটও এই পুরস্কারের বয়ঃসীমা এক জায়গায় ৩৫, অন্য জায়গায় ৪০ বছর লিখে রেখেছে। বুধবার রাতে অজয়বাবু অবশ্য বলেন, এমন কোনও বয়সসীমার কথা তিনি জানে না।
অজয়বাবুর কথায়, ‘‘বিচারক নই, আমরা কমিটির সদস্য। কমিটি কয়েকটি নাম সুপারিশ করে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জেনারেল কাউন্সিল। আর সিদ্ধান্তগ্রহণের বৈঠকে আমি ছিলাম না।’’ আয়ান-আমনের পুরস্কার ফেরানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরস্কার না নেওয়ার স্বাধীনতা ওঁদের আছে। ওঁদের যা যোগ্যতা, তাতে আরও আগেই এই পুরস্কার ওঁরা পেতেই পারতেন। তবে খুব দেরি হয়ে গিয়েছে বলে আমি মনে করি না। যাই হোক, আয়ান-আমনের সামনে দীর্ঘ পথ বাকি। আরও অনেক সাফল্য ও পুরস্কার ওঁরা পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy