Advertisement
১১ মে ২০২৪

মা তোমাকে ছেলে-ছেলে লাগছে

অনির-এর ছবিতে বলিউড ডেব্যু অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়-এর। কিন্তু তাঁর লুক দেখে এমনটাই বললেন পুত্র তৃষাণজিৎ। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তঅনির-এর ছবিতে বলিউড ডেব্যু অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়-এর। কিন্তু তাঁর লুক দেখে এমনটাই বললেন পুত্র তৃষাণজিৎ।

ফার্স্ট লুক শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০০:০২
Share: Save:

সে দিন পুত্র তৃষাণজিতের স্কুলে গিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়েন অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।

অনেকেই তো তাঁকে চিনতে পারেননি!

তিন-চার মিনিট তাকিয়ে থাকার পর তাঁরা এগিয়ে এসে কথা বলেছেন।

ফার্স্ট লুক

এ সবের কারণ ‘মাই ব্রাদার... নিখিল’, ‘আই অ্যাম’ খ্যাত পরিচালক অনিরের হিন্দি ছবি ‘শব’য়ে অর্পিতার লুক।

“তৃষাণজিৎ তো আমাকে দেখেই বলে দিল, ‘ইউ আর লুকিং লাইক আ বয়! একদম ছেলে-ছেলে লাগছে।’ ওর মোটেও সেটা পছন্দ হয়নি। আসলে বাড়ির লোকজনের ক্ষেত্রে ও বেশ ট্র্যাডিশনাল। আমার ব্যাপারে ও ভীষণ পোজেসিভ। কেউ কেউ ওকে বলেছে যে আমি নাকি ওর বোনের মতো দেখতে হয়ে গিয়েছি। আর সেই নিয়েই ওর সমস্যা! যত বলি এই লুকটা ফিল্মের জন্য, ও কিছুতেই সেটা মানতে চায় না,” হাসতে হাসতে বলেন অর্পিতা।

এ তো না-হয় গেল পুত্রের রিঅ্যাকশন। কিন্তু বেটার হাফ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? তিনি কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করলেন? “শুক্রবার রাতে কলকাতাতে ফেরার পরে ও এই লুকটা দেখে। বুম্বাদা ইজ ফাইন। আলাদা করে কোনও কমেন্ট করেনি,” জানান অর্পিতা।

রিঅ্যাকশন যাই হোক না কেন, এমন একটা স্টেপ নিতে গিয়ে ভয় করেনি? কাটানোর পর চুলগুলো গুছিয়ে নিয়ে এসেছেন নিজের সঙ্গে। স্বীকার করছেন যে প্রথমে একটু নার্ভাস লাগছিল। “কিন্তু ক্রিয়েটিভিটির দিক থেকে আমি অনিরকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। ওর চিন্তাধারাকে সম্মান করি। ও কী চায়, সেটা নিয়ে ওর কাছে পরিষ্কার আইডিয়া আছে। হি হ্যাজ পেনিট্রেটিভ আইজ। ও ঠিক বুঝতে পেরেছিল যে লুকটা আমাকে মানাবে,” অভিনেত্রী জানান।

আজকাল নয়ডাতে থাকেন অর্পিতা। দিল্লির হউস খাস ভিলেজের চত্বরে অনেক বার বেড়াতে গিয়েছেন তিনি। ওখানেই হবে ছবির শ্যুটিং। মায়াবী একটা অন্য রকমের জগৎ ধরা পড়বে ‘শব’য়ের লেন্সে। এক দিকে ইতিহাস হাতছানি দেয়। অন্য দিকে সব ফ্যান্সি বুটিক। লম্বা একটা গলি ধরে এগিয়ে গেলে দু’দিকে সার দিয়ে বাড়ি। তার মধ্যে অসংখ্য স্টুডিয়ো। চিত্রশিল্পীদের প্যারাডাইস যাকে বলে।

সেই স্টুডিয়োর গা-ঘেঁষে আবার কোথাও রয়েছে নানা রকমের দোকান। যেখানে সব পেয়েছির আসর। ‘রাইনো পটি পেপার নোটবুক’ (গণ্ডারবিষ্ঠা থেকে তৈরি নোটবুক) থেকে শুরু করে ট্রাইবাল জুয়েলারি— সব কিছুই পাওয়া যায় ওই গ্রামে। কখনও রাস্তার পাশ দিয়ে সরু একটা সিঁড়ি সুড়ঙ্গের মতো নেমে যায় পুরনো সিনেমার পোস্টারের দোকানে। আর এই সব দোকানগুলোর মাঝে, খানিকটা পাংচুয়েশন মার্কের মতো, উঁকি দেয় খান চল্লিশ রেস্তোরাঁ, কফি শপ, পাব বা বার।

খানিকটা বিলিতি আমেজ চারিদিকে। ব্লুবেরি চিজ কেক থেকে ফ্রুট বিয়ার সব পাওয়া যায়। আর সেগুলো সার্ভ করে অল্পবয়সি ওয়েটার/ওয়েট্রেস।

অনিরের পরের ছবির মুখ্য চরিত্র এমনই এক কফি শপের ওয়েট্রেস। ছিপছিপে গড়ন। চুলটা ছোট করে কাটা। দারুণ স্মার্ট। আর একদম নো-ননসেন্স।

সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।

ফিল্মে তাঁর নাম রাইনা মুখোপাধ্যায়। লখনৌয়ের প্রবাসী বাঙালি। বাবা বাঙালি। মা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। হিন্দি বলার মধ্যে খানিকটা বাঙালিয়ানা রয়েছে। চিত্রনাট্যে দিল্লিতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে আসে রাইনা। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নেয় এই রেস্তোরাঁয়।

ছবির বেশির ভাগ শ্যুটিং হবে হউস খাস-এর একটা কফি শপে। মুম্বইয়ের আরাম নগরে নিজের অফিসে লাঞ্চ করতে করতে অনির গল্প করছিলেন তাঁর ছবি নিয়ে। নিজের তৈরি বাংরা মাছের ঝোল দিয়ে মাখা ভাত খেতে খেতে বললেন, “প্রায় বারো দিন শ্যুটিং করব আমরা এই জায়গায়।”

ছবিতে অর্পিতার বয়স ৩০-এর কোঠায়। তাঁর থেকে বয়সে ছোট এক মডেলের প্রেমে পড়েন তিনি। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন নবাগত আশিস বিস্ত। ছবিতে সেই মডেল চরিত্রটির প্রায়ই লেট নাইট হয়। পরের দিন দেরি করে ওঠে। তারপর জিমে যাওয়া। সে সব পাট চুকিয়ে চলে আসে এই ক্যাফেটেরিয়াতে। আর সেখানে ক্যাফের মালিক আর ওয়েট্রেসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

এই বন্ধুত্ব থেকেই প্রেম। বয়সের ফারাক নিয়ে প্রথম-প্রথম যথেষ্ট দোটানায় থাকে রাইনা। তবে সম্পর্ক গাঢ় হতে হতে এই ফারাকটা আর থাকে না। কিন্তু অন্য জটিলতা বাড়তে থাকে। “প্রথম যে দিন অর্পিতার সঙ্গে দেখা হয়, ও একটা সাদা শার্ট পরে এসেছিল। ওকে দেখে আমার মনে হয়েছিল ‘ব্রেথলেস’ ছবির জঁ সেবার্গ-এর লুকটা। ওই এনার্জি, ওই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ। অর্পিতাকে বলেছিলাম ওই ছবিটা দেখতে। চেষ্টা করেছি আশিসকেও ওই ছবির জঁ-পল বেলমন্ড-এর মতো একটা লুক দেওয়ার। যদিও ‘শব’ আর ‘ব্রেথলেস’য়ের গল্পে কোনও মিল নেই। তবে ওই ছবির অভিনেত্রীদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা আমার ছবির চরিত্রদের মধ্যে আনতে পারলে ভাল লাগবে,” জানাচ্ছেন অনির।

ছবির শ্যুটিং একরকম। তবে তার জন্য প্রস্তুতি কম লাগবে না। পিঠ পর্যন্ত লম্বা চুল কাটিয়ে ফেলতে হয়েছে অর্পিতাকে। ব্যাপারটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, করাটা ততটা সহজ ছিল না। দিল্লির স্টাইলিস্ট সুমিত ইসরানির কাছে অর্পিতাকে নিয়ে যান অনির। “আমি ওকে বোঝাই যে এই রকম লুক আমি চাইছি। সুমিত আমাকে বলে যে, অর্পিতার জ-লাইনটা এত সুন্দর যে ওই লুকটা ওকে মানাবে। সেটাই হচ্ছে!” পরিচালকের গলায় আনন্দ স্পষ্ট।

আচ্ছা, বলিউডে অভিনয়ের ডেব্যুর সঙ্গে সঙ্গে কি অর্পিতাকে দিয়ে প্লেব্যাক সিঙ্গিংয়ের ডেব্যুও করাতে চাইছেন পরিচালক? প্রশ্ন শুনে অনির খানিকটা চমকে গেলেন। জানতেন না যে অর্পিতা বহু বছর গান শিখেছেন। তড়িঘড়ি করে অর্পিতাকে বললেন ‘সং কানেকশন’য়ে তাঁর সেগমেন্টার লিঙ্ক পাঠাতে। শুনে বললেন, “জানতাম না অর্পিতা এত ভাল গায়। মিঠুন (যিনি অনিরের ‘বস এক পল’য়ে ‘তেরে বিন’ আর ‘আশিকি ২’য়ে ‘তুম হি হো’ গানটার সুর দিয়েছেন) আমার এই ছবির সব ক’টা গান সুর করে ফেলেছে। পরে অর্পিতার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রইল।”

এ দিকে অর্পিতার লুক ঠিক হলেও, অন্য একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে অনিরের। অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির কথা ছিল তাঁর ছবিতে প্রত্যাবর্তন করার। ১৭ বছর পর বলিউডে অভিনয়ে ফিরছিলেন সঙ্গীতা। করার কথা ছিল এক ফ্যাশন ডিভার চরিত্র। কিন্তু ছবির ওয়ার্কশপ করতে গিয়ে দেখলেন যে, উনি ঘনিষ্ঠ চুম্বন দৃশ্যে একদম স্বচ্ছন্দ নন। “ওয়ার্কশপ করতে গিয়ে সঙ্গীতার অসুবিধা হয়। ও আমাকে সেটা জানায়। তারপর ঠিক হয় যে এই ছবিতে ও কাজ করবে না,” বললেন অনির।

এখন উপায়?

২২ জুলাই থেকে শ্যুটিং শুরু। আর যে বেশি দেরি নেই নতুন কাউকে খোঁজার। কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে যে মণীষা কৈরালা বা রবিনা টন্ডন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন অনির। তবে পরিচালক আপাতত এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। তবে এটুকু বলতে আপত্তি নেই যে, কলকাতার অভিনেতা/অভিনেত্রীরা বলিউডের তারকাদের থেকে অনেক ‘ইনহিবিশন ফ্রি’। লাঞ্চের শেষে বললেন, “ছবিতে অর্পিতার লাভ মেকিং দৃশ্য রয়েছে। চরিত্রটাও যথেষ্ট সাহসী। ওটা নিয়ে অর্পিতার কোনও সমস্যা নেই। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি থেকে আমি দেখে এসেছি চিত্রনাট্যের স্বার্থে কিছু করতে বলিউডের থেকে কলকাতার অভিনেতা/অভিনেত্রীরা অনেক বেশি ওপেন। অভিনেতা সত্তাকে তারা এগিয়ে রাখে। ছবি করতে গেলে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের আইডেনটিটিটা তাদের কাছে অতটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE