E-Paper

পাকস্থলীর পক্ষাঘাত

বাড়ছে গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিসে আক্রান্তের ঘটনা। এর থেকে নিরাময় কোন পথে?

শ্রেয়া ঠাকুর

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৮:২৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সারা দিন স্রেফ বসে কাজ, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল। এ দিকে অল্প কিছু খেলেই পেট সাঙ্ঘাতিক ভরে যায়, ফুলে ওঠে। আর খেতেই ইচ্ছে করে না। সঙ্গে বমি ভাব। গরমের সময়ে এমনটা হতেই পারে কিন্তু খতিয়ে দেখতে হবে পাকস্থলীর চলনের বিষয়টাও।

অসুখটার নাম গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস। সহজ ভাবে বলতে গেলে, এতে পাকস্থলী থেকে খাবার ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় নেয়। খাবার পাকস্থলীতেই জমে থাকে। অনেক সময়ে পুরনো খাবার জমতে জমতে কঠিন হয়ে ‘বিজ়োর’ জাতীয় জিনিস তৈরি করে। হ্যারি পটারের উপন্যাস যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন, ছাগলের পেটে তৈরি এই ‘বিজ়োর’ বিষনাশক হিসেবে ব্যবহার করত হ্যারি। মানুষের পেটে এই জিনিস তৈরি হলে সেটি কিন্তু গুরুতর অসুস্থতা। শুরু হয় বমি, পেটে যন্ত্রণা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও মারাত্মক ভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ।

এই প্রসঙ্গে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী বললেন, “মূলত পাকস্থলীর পেশিগুলির পক্ষাঘাতের ফলেই এই সমস্যা দেখা যায়। খাদ্যগ্রহণের পরে আমাদের খাবার পৌঁছয় পাকস্থলীতে। সেখানে ছোট ছোট টুকরো হয়ে কিছু পরিমাণ আত্তীকরণ হয়, বাকিটা পৌঁছয় ক্ষুদ্রান্ত্রে। এই ছোট ছোট টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা ব্যাহত হলেই পাকস্থলীর পুরো প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে। তখনই শুরু হয় পেট ফোলা, বমি-বমি ভাব ইত্যাদি।”

ঠিক কী কারণে এই অসুখ হয়?

ডা. চৌধুরীর কথায়, “ঠিক কী কারণে এই অসুখ হয়, তা বলা মুশকিল। তবে ডায়াবিটিসের সঙ্গে এই অসুখের যোগ রয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ও পাকস্থলীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে ভেগাস স্নায়ু। ডায়াবিটিস বা অন্য কারণে এই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাকস্থলীর পক্ষাঘাত হতে পারে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবিটিস থাকলে অটোনমিক নিউরোপ্যাথি হয়ে এই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পাশাপাশি একেবারে যদি নড়াচড়ার অভ্যেস না থাকে, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা না করলে পাকস্থলীতে খাবার হজমে বেশ অসুবিধে হয়। অনেক সময়ে ভাইরাসের আক্রমণেও এই রোগ হতে পারে। কোভিডের সময়ে অনেকেরই এ সমস্যা দেখা গিয়েছিল।”

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, ওজন কমাতে ব্যবহৃত কিছু কিছু ওষুধ পাকস্থলীর চলন স্তব্ধ করে দিতে পারে। এই ওষুধ পাকস্থলীর পেশিগুলিকে দুর্বল করে দেয়, ফলে খাবার আর ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছতে পারে না। ফলে এই ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্য কর্তব্য।

চিকিৎসা কোন পদ্ধতিতে?

প্রথমেই এন্ডোস্কপি, আপার গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল বেরিয়াম কনট্রাস্ট রেডিয়োগ্রাফি ইত্যাদি পদ্ধতির সাহায্যে সমস্যা নির্ণয় করতে হবে। এর পাশাপাশি করানো হয় গ্যাস্ট্রিক এমটিং টেস্টও। এর পরে চিকিৎসাপদ্ধতি ঠিক করেন চিকিৎসক। যদি ডায়াবিটিসের কারণে এই সমস্যা হয়, তবে সেটি নিয়ন্ত্রণের বিশেষ পন্থা নেওয়া হয়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস কমাতে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম:

এক বারে না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খেতে হবে।

খাবার চিবিয়ে খেতে হবে।

কাঁচা আনাজ-ফলের চেয়ে সিদ্ধ খাওয়া ভাল।

ফাইবার রয়েছে এমন ফল-আনাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।

সুপ, ডাল, ডালের জল খেতে হবে।

প্রায় ৩ লিটার জল খেতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম আবশ্যক।

খাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে শুতে হবে।

মোটামুটি এই নিয়মগুলো পালন করে চললেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এই রোগ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

stomach pain

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy