(প্রথম অংশ)
পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য অর্থাৎ ভারতীয় জ্যোতিষের মধ্যে তুলনা করলে যে জিনিসটা সবার সামনে আসে, সেটি হল ভারতীয় জ্যোতিষের বিস্ময়কর অবদান রাহু-কেতুর যে ফল দান করার ক্ষমতা আছে তা আবিষ্কার করা। রাহু-কেতু হল মাত্র দুটি অঙ্কের বিন্দু। যাদেরকে আকাশে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না অথচ তাদেরকে দিয়ে ভারতীয় জ্যোতিষরা ফলাদেশ করছে খ্রীষ্ট জন্মের বহু পূর্ব আগে থেকে। এস্ট্রোনমি বা জ্যোতির্বিদ্যায় যে রাহু-কেতু আছে সেটা প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্য উভয় দেশের বিজ্ঞানীরা ভাল ভাবে জানেন। এখন অবধি প্রাশ্চাত্য জ্যোতিষে রাহু-কেতুকে তাদের এস্ট্রোলজিতে ঢোকান নি। এটা তাদের কাছে কিছুটা ভূতুরে ব্যাপার বলে মনে হয়েছে।
প্রাচ্য জ্যোতিষের একটা অংশ সিংহল। সেখানেও ভারতের মত দীর্ঘকাল ধরে জ্যোতিষ চর্চা চলেছে, এখনও চলে। সিংহলী জ্যোতিষ বই ‘ওলাপাতা’ যা দক্ষিণ ভারতে বহুকাল ধরে চর্চিত, তা থেকে রাহু-কেতু বিভিন্ন নক্ষত্রে অবস্থান করে যে যে ফল প্রদান করেছে, যা বিশেষভাবে পরীক্ষিত হয়েছে যুগ যুগ ধরে, নিম্নে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল।
(এখানে অশ্বিনী থেকে মঘা অবধি রাহু- কেতুর অবস্থান ফল বর্ননা করা হল)।
অশ্বিনী নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু অবস্থান করাতে জাতক জাতিকা নিজ বাড়ীতে থেকে কোনও উদ্দেশ্যে কোনও কর্ম করলে তা সফল হয় না। নিজ বাসস্থানে জাতক জাতিকা কারও সাহায্য বা স্নেহ পায় না। তারা যদি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যায় তবে উন্নতি করবে।
এখানে কেতু থাকায় জাতক জাতিকার মনকে নানা সমস্যায় সব সময় ভারাক্রান্ত রাখবে। সব কিছু থাকা সত্ত্বেও তার মন হবে অসুখী। কিছুতেই মনে তৃপ্তি পাবে না। সোজা কথায় তারা জন্ম অসুখী।
ভরণী নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকা কে শেষ পর্যন্ত পার্থিব সুখ-শান্তি ত্যাগ করিয়ে বিরাগী সন্ন্যাসীর মত জীবন যাপন করাবে। সংসার ত্যাগ পাহার পর্বত না গেলেও নিজে প্লেন ড্রেসে সন্ন্যাসীর মত জীবন কাটাবে।
এখানে কেতু শেষ বয়সে জাতক জাতিকারা মানুষের শ্রদ্ধা-সম্মান পাবে।
কৃত্তিকা নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকাকে অত্যন্ত হৃদয়হীন নিষ্ঠুর করে তুলবে। তারা দান বর্জিত কৃপণ করে তুলবে। তারা প্রেম-প্রীতির ধার ধারবে না। লোকের কাছ হতে শুধু নিতেই চাইবে বিনিময়ে কিছুই দিতে চাইবে না।
এখানে কেতু গোপনে নীচ ধরণের, অপরিচ্ছন চরিত্র তৈরী করবে। জাতক জাতিকা অত্যন্ত কামুক হবে। চেতনায় যৌন বিকার বয়ে বেড়াবে। কাম জেগে গেলে স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী ভেদাভেদ থাকবে না, লজ্জ্বা, ঘৃণা, ভয় থাকবে না। কাম চরিকত্রার্থ করতে যা করার তাই করবে। অগম্য গমণ অসম্ভব নয়।
রোহিনী নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকাকে দূরদেশে কর্মক্ষেত্র তৈরি করাবে ও সেখানে বাস করাবে। নিজের দেশ ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি তার মায়া মমতা থাকবে না। আপনজনের জন্য স্বার্থত্যাগ করবে না। বলা যায়, এরা বেশ কিছুটা স্বার্থপর।
এখানে কেতু জাতক জাতিকাকে বিচার-বিশ্লেষনকারী করে তোলে, দানশীল করে তোলে। সর্ব সাধারণের জন্য ত্যাগ স্বীকার করায়। কিন্তু শত করলেও যশের ভাগ্য হয় না।
মৃগশিরায় জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকা কে সদরে বা গোপনে পাকা দুর্বৃত্ত করে তোলে। এখানে তারা তুলসী বনের বাঘ। মুখে ধর্ম ও নীতির কথার উপদেশ দিয়ে থাকে আর তলে তলে পাকা শয়তানি ভাব। জাতক জাতিকারা চোর ও ঠকবাজও হতে পারে। এরা এমনকি নিজের স্বজনের কাছেও ঘৃণার পাত্র হয়।
এখানে কেতু জাতক জাতিকা কে খাদ্য লোভী বানাবে। সে পেটুক হবে। মনের কথা কাউকে খুলে বলবে না, গুপ্ত মনা হবে।
আদ্রা নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকাকে কামুক করে তোলে। তার কাছে এমন কি ঝি, চাকরানী ও রেহাই পায় না। গোপনে নানভাবে কামচরিতার্থ করে থাকে, অগম্যা গমন, পুং মৈথুন বা পশু মৈথুন ও করে থাকে।
এখানে কেতু জাতক জতিকাকে পরিচ্ছন্ন স্বভাব, বিদ্বান ও পরোপকারী করে তোলে। সবাই তার প্রশংসায় মুখরিত হয়, সে হয় নমস্য ব্যক্তি।
পুনর্বসু নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকাকে রাগী ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির করে তোলে। নিজের খামখেয়ালি ও রুচিপূর্ণ কাজ করে থাকে।
এখানে কেতু জাতক জাতিকাকে দূরদেশে ভ্রমণ করাবে। এদের গৃহের উপর সে ভাবে টান থাকে না। প্রেমের জন্য গ্লানী হবে।
পুষ্যা নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকার পেটের ব্যাধি জন্মাবে। জিহ্বার স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা কমায়। পরবর্তিতে খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়।
এখানে কেতু জাতক জাতিকাকে কলহপ্রিয় করে তুলবে। অবশেষে গৃহ সংসার ত্যাগ করিয়ে সন্ন্যাসী করাবে। অথবা গৃহেই সন্ন্যাসীর মত থাকবে। এরা সন্ন্যাসী হলেও ভোগ ত্যাগ করবে না।
অশ্লেষা নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এখানে রাহু জাতক জাতিকাকে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের উপর মায়া-মমতাহীন করে তুলবে। কোনও সময়ে জাতকের অভাব যাবে না ।
এখানে কেতু জাতক জাতিকা কে নিজের ঘর ত্যাগ করায়ে অন্যের গৃহে বাস করাবে। এমন কি নিজের বাসস্থান ত্যাগ করে বিদেশে গিয়ে সন্ন্যাস নিতেও পারে।
মঘা নক্ষত্রে জন্মকালীন রাহুঃ এই নক্ষত্রে রাহু অধিনস্থ লোকের প্রিয় করে এবং তাদের কাছ থেকে প্রাপ্তিযোগ বোঝায়।
এখানে কেতু জাতক জাতিকার মনে প্রবল বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা জাগায় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা পূরণ হয় না। তবু চিন্তা যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy