Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪

গুগল-সঙ্গী মির জাফর, ক্ষুব্ধ মমতা

ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিল গুগল-বিভ্রাট। ভোটের মুখে তাঁর নাম খবরে থাকছে রোজ। ফলে ইন্টারনেটেও বহু মানুষ খুঁজছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু, বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে ‘মির জাফর’ লিখে সার্চ দিতেই ভেসে উঠছে সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসঘাতক সেনাপতির প্রতিকৃতির সঙ্গে জোড়া লাগানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি!

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিল গুগল-বিভ্রাট। ভোটের মুখে তাঁর নাম খবরে থাকছে রোজ। ফলে ইন্টারনেটেও বহু মানুষ খুঁজছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু, বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে ‘মির জাফর’ লিখে সার্চ দিতেই ভেসে উঠছে সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসঘাতক সেনাপতির প্রতিকৃতির সঙ্গে জোড়া লাগানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি!

বিষয়টি নজরে আসায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সকালেই রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের সাইবার সেল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেরেক ও’ ব্রায়ানকে বলেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে। দলের কাজে ডেরেক এখন মুম্বইয়ে। তৃণমূল সূত্রের খবর, নেত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর ডেরেক সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে গুগলের পাবলিক পলিসি বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাজ্য সরকারের তীব্র ক্ষোভের কথা জানিয়ে গোটা বিষয়টির জবাবদিহি চান ডেরেক। অবিলম্বে ওই ছবি সরানোর অনুরোধও করেন তিনি।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বিষয়টি বোঝার জন্য প্রথমে কিছুটা সময় চেয়ে নেন গুগল কর্তা। তার পর ডেরেককে ফোন করে তিনি জানান, কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণেই অনিচ্ছাকৃত এই ভুল হয়ে গিয়েছে। তিনি মৌখিক ভাবে সংস্থার পক্ষ থেকে ক্ষমাও চান রাজ্য সরকারের কাছে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সিস্টেম থেকে ছবিটি সরাতে প্রায় বারো ঘণ্টা সময় লাগবে। ডেরেক দুপুর ২টো নাগাদ কথা বলেছিলেন গুগল কর্তার সঙ্গে। তাঁর কথায়, “আমি নিশ্চিত, বারো ঘণ্টা পরে আর এই ত্রুটি থাকবে না। সেই মর্মে বারবার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওই সার্চ এঞ্জিনের কর্তা।” সেই মতো গভীর রাতেই ছবিটি সরিয়ে দিয়েছে গুগল।

মির জাফর ও মমতার যে জোড়া ছবিটি ফুটে উঠছে, সেটি প্রকাশিত হয়েছিল একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ই-সংস্করণে। প্রায় দু’বছর আগে ওই সাক্ষাৎকারে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী মমতাকে মির জাফরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ওই সময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করছিলেন মমতা। তার জেরে অধীরবাবু বলেছিলেন, ’৯৬ সালে এক বার বাঙালিকে বঞ্চনা করা হয়েছিল জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী না হতে দিয়ে। এখন মমতা প্রণববাবুকে আটকানোর চেষ্টা করে মির জাফরের মতো দেশদ্রোহিতা করছেন।

কিন্তু ‘মির জাফর’ সার্চ দিলে ওই ছবিটি ফুটে উঠছে কেন? গুগলের পক্ষ থেকে তৃণমূলকে জানানো হয়েছে, এই গণ্ডগোলের মূলে ‘অ্যালগরিদম’-এর ত্রুটি। কী এই অ্যালগরিদম?

এটি হল এমন একটি প্রোগ্রামিং, যার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন এক-এক করে শব্দ ধরে তথ্য খুঁজে বার করে। কোন তথ্য আগে দেখানো হবে, কোনটা পরে তা-ও ঠিক করে দেয় অ্যালগরিদম। এখন ইন্টারনেটে কোনও লেখা যখন প্রকাশ করা হয়, তখন তা সেভ করা হয় কিছু ওই লেখা সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য দু-তিনটি শব্দ দিয়ে। পরিভাষায় যাকে বলে ‘কী-ওয়ার্ড’। যেমন ‘পথের পাঁচালি’ সংক্রান্ত কোনও লেখার ‘কী-ওয়ার্ড’ কেউ দিতে পারেন ‘বিভূতিভূষণ’, ‘অপু’, ‘সত্যজিৎ’ ইত্যাদি। এই ‘কী-ওয়ার্ড’ দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই প্রয়োজনে যাতে গুগল সার্চ দিলে সহজে লেখাটি পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অধীরের সাক্ষাৎকারটির শিরোনামে ‘মির জাফর’ এবং ‘মমতা’, দু’টি নাম পাশাপাশি ছিল। ছিল ছবিও। সম্ভবত কী-ওয়ার্ডও দেওয়া হয়েছিল তাঁদের নাম দিয়ে। এবং গুগল সার্চ করে এই প্রতিবেদনটি হয়তো আগে অনেকেই পড়েছিলেন। এখন গুগলের অ্যালগরিদম ‘মির জাফর’ শব্দটি পেয়েই স্বাভাবিক অভ্যাসে তার ওই ‘চেনা’ প্রতিবেদনের লিঙ্কটিকে জুড়ে নিচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে প্রতিবেদনের সচিত্র ঝলক। তৃণমূলের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে গুগলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও অফিসার বিষয়টির যাথার্থ বিচার করেননি। সেইমতো পরে সার্চ রেজাল্ট আপডেটও করে দেননি। গুগল-ও জানিয়েছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। এমন আর ভবিষ্যতে হবে না।

ডেরেকের কথায়, ‘‘আমাদের দল সংবাদপত্র ও ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে। এ ব্যাপারে কোনও ফতোয়া জারি করতে চান না আমাদের নেত্রী। কিন্তু এ ভাবে ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করা হলে ভবিষ্যতে ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা ও সতর্কতা নিতে হবে।” তবে ঘটনাটির পিছনে কোনও রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE