Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিক্ষোভে পুলিশের লাঠি, জখম ১১

বন্‌ধ সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করল পুলিশ। তাতে ১০ জন মহিলা বন্‌ধ সমর্থক জখম হয়েছেন। আহতন হন এক পুলিশকর্মীও। বন্‌ধে ঝামেলার অভিযোগে পুলিশ করিমগঞ্জ জেলা সদর থেকে ২২২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

বন্‌ধ সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করল পুলিশ। তাতে ১০ জন মহিলা বন্‌ধ সমর্থক জখম হয়েছেন। আহতন হন এক পুলিশকর্মীও। বন্‌ধে ঝামেলার অভিযোগে পুলিশ করিমগঞ্জ জেলা সদর থেকে ২২২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

আজ সকাল থেকেই শ্রমিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা শহরের কয়েক জায়গায় অবরোধ করেন। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। আন্দোলনকারীরা করিমগঞ্জ রেল স্টেশনে ত্রিপুরাগামী ধর্মনগর প্যাসেঞ্জার ট্রেন আটকান। জেলাশাসকের দফতর-সহ অন্য সরকারি অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। বাম দলগুলির পক্ষে অরুণাংশু ভট্টাচার্য, নিশীথরঞ্জন দাস, চন্দন চক্রবর্তী, নির্মল দে, বিশ্বজিৎ দাস জেলাশাসক দফতরের সামনে বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কয়েকশো বনধ সমর্থক।

পুলিশ কয়েক জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করলেও, তাঁরা কোনও ভাবেই পুলিশের গাড়িতে উঠতে চাননি। দেখা যায়, এক দিকে যে সব বন্‌ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাঁরাই ফের জেলাশাসকের দফতরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। পরে করিমগঞ্জ সদরের সার্কেল অফিসার, জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া বনধ সমর্থকদের বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ বন্ধ হয়নি। এর পরই লাঠি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হঠাতে শুরু করে পুলিশ। দু’পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। তাতে এক মহিলা পুলিশকর্মী-সহ কয়েক জন বিক্ষোভকারী জখম হন। তাঁদের করিমগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা করানো হয়।

পুলিশ জানায়, ২২২ জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বামদলগুলির তরফে পুলিশি লাঠিচার্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তাঁদের দাবি, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় আন্দোলনকারীদের উপর লাঠি চালিয়েছে। এ দিনের বিক্ষোভে সামিল ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও। তাঁরা বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি তোলেন। তাঁরা জানান, বেতন বৃদ্ধির দাবিতেই বনধ হচ্ছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছিল।

বন্‌ধ প্রত্যাহারের গুজব শেষ পর্যন্ত বনধ পালনের প্রচারে কাজে লেগে গেল। গত কাল রাতে শিলচরে হঠাত্ মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় বন্‌ধ হচ্ছে না। সরকার সব দাবি মেনে নেওয়ায় শ্রমিক সংগঠনগুলি বন্‌ধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাইকে ঘোষণাও করা হয়েছে। নিজে শুনেছেন। ফোন আসতে থাকে সংবাদপত্র দফতর ও সাংবাদিকদের কাছে। বন্‌ধ আহ্বায়কদের কাছেও পরের পর ফোন আসতে থাকে। এতে অবশ্য ফল মিলেছে উল্টো। গুজব ধরা পড়ে যায় এবং এতে বন্‌ধের প্রচারই হয়। আইএনটিইউসি নেতা কিশোর ভট্টাচার্য, শ্রমিক-শিক্ষক-কর্মচারী সমন্বয় সমিতির পরিতোষ দে-রা গুজব রটানোর জন্য ভারতীয় মজদুর সংঘকেই দায়ী করছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘বিএমএস পরিকল্পিত ভাবে এখানে বন্‌ধ প্রত্যাহারের গুজব ছড়িয়েছে। তারা সর্বভারতীয় স্তরে প্রথমে বন্‌ধের পক্ষে জোট বেঁধেছিল। পরে সংঘ পরিবারের নির্দেশে সরে যায়।’’ কিশোরবাবুরা তাদের এই ভূমিকার সমালোচনা করেন। এ দিকে, কাছাড় জেলায় বন্‌ধে ভালই সাড়া মিলেছে। অফিস-আদালত, দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। চলেনি যানবাহনও। শিলচর অফিস পাড়া, শ্রীকোণা, কালাইন-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শতাধিক পিকেটারকে এদিন গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বন্‌ধ ঘিরে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনার খবর নেই।

শ্রমিক সংগঠন ও অন্য দলের ডাকে সাধারণ ধর্মঘটে সামিল হল হাইলাকান্দিও। জেলার অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। রাস্তায় দেখা মেলেনি যানবাহনের। সরকারি দফতরে উপস্থিতির হারও ছিল কম। অনেক সরকারি অফিসের তালাই খোলা হয়নি। হাইলাকান্দি জেলায় কয়েক জন বন্‌ধ সমর্থককে পুলিশ আটক করেছে। জেলায় ধর্মঘট সফল করার জন্য শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে জেলাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মঞ্চের আহ্বায়ক নারায়ণ দেবনাথ। তিনি জানান, লালার কাটলিছড়ায় ১২ জন, লালায় ২৩ জন এবং হাইলাকান্দিতে ১৭ জন বন্জ় সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণ দেবনাথ, অধীর নাথ, সুনির্মল দাস, চিন্তাহরণ সূত্রধর, অনত দাস, প্রদীপ দেব, হিবজুর রহমান, আলমউদ্দিন বড়ভুঁইঞা, আব্দুল মতলিব লস্কর, প্রভাতচন্দ্র সরকার।

ভারত বনধের প্রভাব ডিমা হাসাও জেলায় তেমন ভাবে দেখা যায়নি। বনধে দক্ষিণ অসমের জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও, পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। জেলায় অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তবে ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস বন্ধ ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karimganj CPIM police strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE