হাসপাতালে ভর্তি মহিলাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। ছবি: পিটিআই
বন্ধ্যাকরণের খেসারত মৃত্যু! ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরে সরকারি উদ্যোগে একটি বন্ধ্যাকরণ শিবিরে অস্ত্রোপচার করার পর মৃত্যু হল ১১ জন মহিলার। প্রত্যেকের বয়স কুড়ি থেকে তিরিশের কোঠায়। ৪৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাত জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছত্তীসগঢ় ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (সিআইএমএস)-এ স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ওই শিবিরের কাজে যুক্ত চার জনকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অস্ত্রোপচারের পরে কোনও ভাবে ওই মহিলাদের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। আর তার জেরেই এই মৃত্যু। স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর অমর সিংহ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী রক্তপাতই মৃত্যুর কারণ। সরকারি সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না মেলা পর্যন্ত মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এইমসের চার জন চিকিৎসকের একটি দল ছত্তীসগঢ় যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, আজ সকালে মায়ানমার সফরে রওনা দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহকে নির্দেশ দিয়েছেন ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করার জন্য।
অভিযোগ উঠেছে, ওই সরকারি শিবিরে বন্ধ্যাকরণের সময় চিকিৎসার গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। চাপে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ চার জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে আজই। এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ওই শিবিরের মুখ্য শল্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থদের নিখরচায় চিকিৎসা ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শনিবার বিলাসপুর শহরের পাশে পেন্ডারি গ্রামের একটি হাসপাতালে বন্ধ্যাকরণ শিবিরের আয়োজন করেছিল মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সরকার। আশপাশের প্রায় ৪০টি গ্রাম থেকে ৮৩ জন মহিলা ওই শিবিরে এসে অস্ত্রোপচার করান। অস্ত্রোপচার মিটে গেলে সে দিনই তাঁদের সকলকে ওষুধপত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়।
চব্বিশ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই খবর মেলে, তাঁদের মধ্যে ৬০ জনের বমি ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। সমস্যা এতই বাড়ে, রবিবার রাতের মধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁদের। বিলাসপুরের জেলা কালেক্টর সিদ্ধার্থকোমল পরদেশি জানান, সোমবার সকালেই মারা যান জানকী বাই (২৬) ও দীপ্তি যাদব (২৭)। রাতের দিকে পাঁচ জনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাঁদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু রাতে মারা যান পাঁচ জনই। আজ সন্ধে পর্যন্ত আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতদের প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ৩২-এর মধ্যে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য শিবির সংক্রান্ত এমন বিপর্যয় অবশ্য ছত্তীসগঢ়ে নতুন নয়। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে ব্যালডের ছানি অস্ত্রোপচার শিবিরে অস্ত্রোপচার করিয়ে একটা চোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন ৪৪ জন। ২০১৩ পর্যন্ত এই রকম শিবিরে অংশগ্রহণ করেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২। তার পরে ফের এমন ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী অমর অগ্রবালের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্য কংগ্রেস প্রধান ভূপেশ বাঘেল বলেন, “অতীতের ঘটনা থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি রাজ্য সরকার। এতে সরকারের অপরাধী মনোভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে।” আগামী কাল ছত্তীসগঢ়ে ধর্মঘট ডেকেছে কংগ্রেস।
সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবই এর কারণ। পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার থেকেও সরকারি ভাবে বন্ধ্যাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণই এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণেরই খেসারত দিতে হল কিছু নির্দোষ মহিলাকে।”
পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গঠন করেছে। দফতরের ডিরেক্টর কমলপ্রীত সিংহ জানিয়েছেন, গাফিলতি ধরা পড়লে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ এ দিন হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থদের সঙ্গে দেখাও করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy